শেষের পাতা

সিপিডি’র সংলাপে বিশেষজ্ঞরা

নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার পেছনে সরকারের ইচ্ছা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২৩ জানুয়ারি ২০২২, রবিবার, ৯:২৩ অপরাহ্ন

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন থেকে প্রমাণ হয়েছে যে, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার পেছনে সরকারের ইচ্ছা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের ভূমিকার কারণেই প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সকলেই সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি প্রার্থীরাও যে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সেটাও নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন থেকে প্রমাণিত। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হতে হলে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের বিষয়গুলো অর্থাৎ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রার্থী সর্বোপরি সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে।
শনিবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক সংলাপ অনুষ্ঠানে রাজনীতিবিদ, নির্বাচন বিশ্লেষক, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা এমন মতামত দিয়েছেন। ‘সদ্য সমাপ্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন: জনপ্রতিনিধি নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক সংলাপে মূল বক্তব্য দেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তিনবারের নির্বাচিত মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।
আইভী বলেন, ২০১১, ২০১৬ ও ২০২২- এ তিনটি নির্বাচনে পরিবেশও ছিল তিন রকম। প্রতিবারই ব্যাপক বাধা-বিপত্তির মধ্যদিয়ে নির্বাচন করতে হয়েছে। এবারের নির্বাচনেও বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছিল। এর মধ্যে নির্বাচনের দিন নারী ভোটারদের ভোটকক্ষ কেন্দ্রের ভবনের তিন বা চার তলায় স্থাপন করাকে চক্রান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। ইভিএমের ধীরগতির কারণে ভোট কম পড়েছে বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী। এ ছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠী নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে দাবি করে তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন উৎসবমুখর থাকবে না।
নিজের বারবার নির্বাচিত হওয়ার পেছনে মানুষের জন্য কাজ করা, ন্যায্যতার পক্ষে থাকা, কাজের ক্ষেত্রে দলীয় বা ব্যক্তিস্বার্থ না দেখাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন ডা. আইভী।
অনুষ্ঠানের সভাপতি সিপিডি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের এক প্রশ্নের জবাবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেন, স্থানীয় প্রশাসন, সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় না হওয়ায় অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সময়মতো করা যায় না। এমনকি আইনও প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। এজন্য তিনি একটি ব্যবস্থা সৃষ্টির দাবি জানান। আইভী বলেন, নারায়ণগঞ্জে অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড সরানো যাচ্ছে না। অবৈধ টেম্পো, লেগুনা চলছে। অনেক শিল্প-কারখানা আছে যারা নদী দূষণ করছে। এগুলোর সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের সঙ্গে সুষ্ঠু সমন্বয়ের অভাবে বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, গণতন্ত্রকে দৃঢ় করার জন্য বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন তার উজ্জ্বল উদাহরণ। তবে কয়েকটি রাজনৈতিক দল মাঠে না থেকে মাঠের বাইরে বসে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে, এতে গণতন্ত্রের ক্ষতি হচ্ছে। এ ধরনের রাজনৈতিক দলকে মাঠে নামানোর জন্য তিনি দেশের গবেষণা সংস্থা ও সুশীল সমাজকে কথা বলার অনুরোধ করেন।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি নিরপেক্ষ থাকে এবং প্রার্থী যদি দুর্নীতিগ্রস্ত না হন তাহলে নির্বাচন যে সুষ্ঠু হয় সেটা নারায়ণগঞ্জে প্রমাণিত হয়েছে। এই নির্বাচনে ঝুঁকি না থাকায় সরকার প্রভাবিত করে নাই। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন গঠন ও মানবাধিকার বিষয়ে দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে সরকারের ওপর চাপ রয়েছে।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের চেয়ে সরকারের ভূমিকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ এটাও প্রমাণিত হয়েছে। তবে নারায়ণগঞ্জ সারা দেশের চিত্র না, এমনকি জাতীয় নির্বাচনের চিত্রও না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হতে হলে সরকারকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।
সুজন সম্পাদক বলেন, নারায়ণগঞ্জে সুষ্ঠু নির্বাচন করে সরকার বার্তা দিতে চেয়েছে যে, তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। কিন্তু এই বার্তা পুরনো।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, নারায়ণগঞ্জে মানুষ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। ফলে এই নির্বাচনের প্রেক্ষিত, সফলতা অন্যান্য নির্বাচনের সঙ্গে মেলানো সহজ না। এরপরও একথা সত্য যে, সরকার নির্বাচনটিকে অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেছে। অন্যান্য নির্বাচনে সরকারের এই মনোভাব গণতন্ত্রের জন্য জরুরি।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, প্রার্থী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোকে জনমানুষ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পছন্দ করতে হবে। টাকার বিনিময়ে ব্যাংকের মালিক, টেলিভিশনের মালিকরা মনোনয়ন পেলে তারা বিনিয়োগ তোলার জন্য যেকোনোভাবে জিততে চাইবে। তখন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান কঠিন হয়ে পড়ে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রার্থীর আচরণ, সরকারের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। নারায়ণগঞ্জে সেটি প্রমাণিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে সুষ্ঠু নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সরকারের ভূমিকা রয়েছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনকে যৌথভাবে ভূমিকা রাখতে হবে।
সিপিডি’র সম্মানীয় ফেলো রওনক জাহানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এ ছাড়া সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত, রুমিন ফারহানা বক্তব্য দেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status