প্রথম পাতা

করোনার আগ্রাসী থাবা

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

২২ জানুয়ারি ২০২২, শনিবার, ৯:৫২ অপরাহ্ন

করোনার আগ্রাসী থাবা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েই চলছে। ফের দৈনিক শনাক্তের হার সাড়ে ২৮ শতাংশে পৌঁছেছে। এক সপ্তাহে রোগী বেড়েছে ২৩২ শতাংশ। আর সাতদিনে সরকারি হিসাবে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫৫ হাজার ৫৭৪ জন। এ সময়ে করোনায় প্রাণ গেছে ৬৩ জনের। শনাক্তের হারও ১৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ থেকে বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গেল এক সপ্তাহের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে  দেখা য়ায়, দেশে চলতি মাসের ১৫ই জানুয়ারি শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪৪৭ জন। ওইদিন শনাক্তের হার ছিল ১৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ। মারা যান ৭ জন। সেখানে গতকাল (২১শে জানুয়ারি) শনাক্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৪৩৪ জন। শনাক্তের হার দাঁড়ায় ২৮ দশমিক ৪৯ শতাংশে। ভাইরাসটিতে প্রাণ গেছে ১২ জনের। এক সপ্তাহে রোগী বেড়েছে ২৩১ দশমিক ৭০ শতাংশ। ১৫ থেকে ২১শে জানুয়ারি পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫৫ হাজার ৫৭৪ জন এবং মারা গেছেন ৬৩ জন। তারিখ অনুযায়ী দেখা যায়, ২০শে জানুয়ারি শনাক্ত হয় ১০ হাজার ৮৮৮ জন, শনাক্তের হার ছিল ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং মারা যান ৪ জন। ১৯শে জানুয়ারি শনাক্ত রোগী সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৫০০ জন, শনাক্তের হার ছিল ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ এবং মারা গেছেন ১২ জন। ১৮ই জানুয়ারি শনাক্ত হন ৮ হাজার ৪০৭ জন, শনাক্তের হার ছিল ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং মারা যান ১০ জন। ১৭ই জানুয়ারি শনাক্ত হয়েছিল ৬ হাজার ৬৭৬ জন, শনাক্তের হার ছিল ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং মারা গেছেন ১০ জন। ১৬ই জানুয়ারি শনাক্ত হন ৫ হাজার ২২২ জন, শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং মারা গেছেন ৮ জন। ১৫ই জানুয়ারি শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪৪৭ জন, হার ছিল ১৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং মারা যান ৭ জন।

নতুন শনাক্ত ১১,৪৩৪ জন এবং মৃত্যু ১২:  দেশে ফের করোনার দৈনিক শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৪৯ শতাংশে পৌঁছেছে। যা আগের দিন ছিল ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। নতুন শনাক্তের ৬৪ শতাংশই ঢাকা মহানগরের বাসিন্দা। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৮ হাজার ১৯২ জনে। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৪৩৪ জন। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৮৮৮ জন। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ১৬ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৫২ জন এবং এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৫৯৭ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে ৮৫৭টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০ হাজার ৪২৩টি নমুনা সংগ্রহ এবং ৪০ হাজার ১৩৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ কোটি ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৭১৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।  নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১২ জনের মধ্যে ৭ পুরুষ এবং ৫ জন নারী। দেশে মোট পুরুষ মারা গেছেন ১৮ হাজার ২৪ জন এবং নারী ১০ হাজার ১৬৮ জন। তাদের মধ্যে বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৯১ থেকে ১০০ বছরের ১ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের ২ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ৩ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের  ১ জন,  ৩১ থেকে ৪০ বছরের ১ জন রয়েছেন। মারা যাওয়া ১২ জনের মধ্যে ঢাকায় ৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ জন, খুলনা বিভাগে ১ জন, সিলেট বিভাগে ২ জন, রংপুর বিভাগে ১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন রয়েছেন। মারা যাওয়া ১২ জনের মধ্যে ৮ জন সরকারি হাসপতালে এবং ৪ জন বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন। নতুন শনাক্তের মধ্যে ঢাকা মহানগরে রয়েছেন ৭ হাজার ২৯৬ জন। যা একদিনে মোট শনাক্তের ৬৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায়  ঢাকা বিভাগে রয়েছেন ৭ হাজার ৯৬১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২২২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ হাজার ৫৯৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪৭৫ জন, রংপুর বিভাগে ১৬৪ জন, খুলনা বিভাগে ৪১৯ জন, বরিশাল বিভাগে ১৫২ জন এবং সিলেট বিভাগে ৪৪৫ জন শনাক্ত হয়েছেন।

স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা: করোনার সংক্রমণের মাত্রা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় আজ থেকে দুই সপ্তাহের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অফিস-আদালতও অর্ধেক লোক দিয়ে চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। তবে সংক্রমণ কমলে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে ৬ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণাসহ পাঁচদফা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এছাড়া সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ১০০ জনের বেশি জনসমাগম করা যাবে না। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বিধি-নিষেধ আরোপের কথা জানানো হয়।

এতে বলা হয়, করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে পাঁচদফা বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বিধি-নিষেধগুলো হলো- (১) ২১শে জানুয়ারি থেকে ৬ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব স্কুল-কলেজ ও সমপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। (২) বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যবস্থা নেবে। (৩) সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয়/রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ১০০ জনের বেশি জনসমাগম করা যাবে না। এসব ক্ষেত্রে যারা যোগদান করবেন তাদের অবশ্যই টিকা সনদ/২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর সার্টিফিকেট আনতে হবে। (৪) সরকারি/বেসরকারি অফিস, শিল্প কারখানা সমূহে কর্মকর্তা/কর্মচারীদের টিকা সনদ গ্রহণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। (৫) বাজার, শপিং মল, মসজিদ, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশনসহ সবধরনের জনসমাবেশে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহারসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।

অর্ধেক লোক দিয়ে অফিস-আদালত করার সিদ্ধান্ত: শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চলমান করোনার পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি প্রেসব্রিফিং করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, করোনার সংক্রমণের মাত্রা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় দুই সপ্তাহের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সংক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে ৩৩ শতাংশ শয্যা ইতিমধ্যে পূর্ণ হয়েছে। পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে। তাই, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে আগামী দুই সপ্তাহ স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিয়ে-সাদি, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে একশ’ জনের বেশি অংশ নিতে পারবেন না। সবার টিকা সনদ থাকতে হবে।

১১ দফা বিধিনিষেধ সবাইকে মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, এগুলো কার্যকরের চেষ্টা চলছে। সংক্রমণ যাতে কমে সে জন্য এই সিদ্ধান্ত। পরিবার, দেশে ও নিজের সুরক্ষার জন্য আমাদের নিয়মগুলো মানতে হবে। সরকার বিধিনিষেধ দেন, যাতে আমরা মেনে চলি। এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, যেখানে খেলাধুলা আছে সেখানে টিকা সনদের পাশাপাশি টেস্টের সনদও লাগবে। এগুলো বইমেলায়ও দেখাতে হবে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে বইমেলা পেছানো হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতোই আমরাও চলমান পরিস্থিতির বাইরে নই। নির্দেশনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রশাসনের জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা চাইব, তারা যেন আরও নজরদারি বাড়ান। জনগণের দায়িত্ব আরও বেশি। নিজেদের সুরক্ষায় এটি নিজেদেরই পালন করতে হবে। সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়।

টিকার লক্ষ্যমাত্রা ৭০ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সাড়ে ১২ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার কথা বলে এসেছি। তা কিন্তু ৭০ ভাগের মধ্যে। অনেকে বাইরে থাকে। সবমিলিয়ে আমরা ১৫ কোটি ১০ লাখ টিকা দিয়েছি। হাতে ৯ কোটি আছে। আমরা জনসনের তিন লাখ ৩৭ হাজার টিকা পেয়েছি। আরও আসবে। অর্ধেক লোক দিয়ে অফিস আদালত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, এটা খুব শিগগিরই প্রজ্ঞাপন আকারে চলে আসবে। গণপরিবহনে যাতে ভোগান্তি না হয়, সেজন্য অর্ধেক লোক দিয়ে অফিস করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সংক্রমণ কমলে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে: অন্যদিকে গতকাল বিকালে রাজধানীর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের এক সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের জানান, সংক্রমণের হার কমে গেলে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সংক্রমণের হার কমে গেলে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। তবে এখন অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, হঠাৎ করেই শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়, পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী স্কুল-কলেজ বন্ধ করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, স্কুল বন্ধের যে নির্দেশনা আমরা পেয়েছি, এটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের বিষয়ে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল রয়েছে, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীরা চলাচল করবে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবারও ক্লাসে ফিরবেন তারা। তবে শিক্ষকরা প্রশাসনিক কাজে যোগ দিতে পারবেন। কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কোচিং সেন্টারও বন্ধ থাকবে। এ সময় তিনি টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

সবকিছু খোলা রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কি না সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা বাধ্য হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি ফলপ্রসূ হবে কি না তা নির্ভর করবে আমাদের সবার ওপর। এ সময় তিনি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status