প্রথম পাতা

সরজমিন

ডিএনসিসি করোনা হাসপাতালে রোগীর চাপ

ফাহিমা আক্তার সুমি

২২ জানুয়ারি ২০২২, শনিবার, ৯:৪৮ অপরাহ্ন

ফাইল ছবি

দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ঘরে ঘরে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। ঢাকার হাসপাতালগুলোতেও ভর্তি রোগীর সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। করোনা মহামারি মোকাবিলায় রাজধানীর মহাখালীতে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড হাসপাতালে একের পর এক রোগী ভর্তি হচ্ছেন। যেখানে আগে প্রতিদিন দশ-বারো জন রোগী ভর্তি হয়েছেন সেখানে এখন বিশ-চব্বিশ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতালের তথ্যমতে, বিশদিন থেকে করোনা রোগীর ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বারো জন রোগী করোনা উপসর্গ নিয়ে এসেছেন। এরমধ্যে ভর্তি হয়েছেন দুইজন। এখন প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ২৪ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন।
সরজমিন দেখা যায়, ৫-৬টি এম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে আছে। আধা ঘণ্টায় দুই থেকে ৩ জন করোনা উপসর্গের রোগী ট্রায়াজ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি বিভাগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে এসেছেন। সেখানে করোনা পজেটিভ রোগীও এসেছেন ভর্তির জন্য। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও করোনা সংক্রমণের হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীদের জন্য অক্সিজেন বেডসহ সব ধরনের প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন। আইসিইউ, ইমার্জেন্সিসহ মোট ৪টি ফ্লোর রোগীদের জন্য প্রস্তুত। এখন হাসপাতালে মোট ৮৫ জন রোগী ভর্তি আছেন। এরমধ্যে আইসিইউতে ২৯ জন, এইচডিইউতে ২৪ জন এবং জেনারেল ওয়ার্ডে ৩২ জন।
ঢাকার উত্তর বাড্ডা থেকে চাচাকে নিয়ে এসেছেন ফাতেমা বেগম। তার হার্টে সমস্যা রয়েছে। জ্বর, সর্দিসহ কিছু উপসর্গ থাকায় হাসপাতাল থেকে তাকে করোনা টেস্টের জন্য বলা হয়। ফাতেমা বলেন, চাচার করোনা টেস্ট করার পরে পজেটিভ আসে। তার কোনো শ্বাসকষ্ট নেই। সর্দি, কাশিসহ কিছু উপসর্গ ছিল। গত ৭ তারিখে তাকে ডিএনসিসি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। চিকিৎসক বলেছেন আগামী দুইদিনের মধ্যে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে।
মালয়েশিয়া থেকে আসা ছেলে আবুল বাশারকে হাসপাতালে ভর্তি করান আবু বক্কর। তিনি বলেন, বক্ষ্যব্যাধী হাসপাতালে ভর্তি ছিল দুইদিন। সেখান থেকে সোহ্‌রাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠিয়েছে। জ্বর, সর্দি ও কাশি থাকায় ছেলেকে ডিএনসিসি হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য বলেন চিকিৎসক। এখন এই হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। ছেলে গত সপ্তাহে মালয়েশিয়া থেকে দেশে এসেছে। এখনো তার করোনা টেস্ট করা হয়নি। এয়ারপোর্ট থেকে বাড়ি না নিয়ে সরাসরি হাসপাতালে এসেছি। তিনদিন পর করোনা টেস্ট করা হবে। ছেলের পেটে ব্যথাসহ আরও অনেক সমস্যা আছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসে আজগর (৬৩)। গতকাল সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে মারা যান তিনি। ১৪ তারিখে শরীরে নানাবিধ সমস্যাসহ ভর্তি হয়েছিলেন। করোনা নিগেটিভ ছিল তার। কিন্তু করোনার সব ধরনের উপসর্গ ছিল। আগে তিনি করোনা আক্রান্ত হতে পারেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদিকে ফরিদপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিল আনোয়ার। সেখান থেকে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য এনেছেন তার মেয়ে হাছিনা। তিনি বলেন, তার কোনো শ্বাসকষ্ট নেই। সর্দি,কাশি আছে সামান্য। এজন্য ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছি।
ডিএনসিসি হাসপাতালের তথ্যমতে, বিকালে রোগীর চাপ বেশি থাকে। করোনা পজেটিভ নিয়ে আসে তাদের ভর্তি করা হয়। উপসর্গ নিয়ে যে রোগী আসে তাদের অনেককে ভর্তি করে টেস্ট করতে বলা হয়। আবার অনেককে পরামর্শ দিয়ে বাসায় পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় ২০ জন রোগী এসেছে। এরমধ্যে ভর্তি হয়েছে ১০ জন। অনেক পজেটিভ রোগী আছে তাদের ভর্তির প্রয়োজন হয় না। বেশিরভাগ রোগী ঢাকার ভেতরের। রোগী বাড়ছে কিন্তু গত কয়েকমাস আগের পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। হাসপাতালে আইসিইউ বেড ২৯টি, এইচডিইউ বেড ২৪টি, জেনারেল ওয়ার্ড ৩২টি এবং সর্বমোট ৮৫ জন রোগী ভর্তি আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা সকাল ৮টা হতে পরদিন সকাল ৮ পর্যন্ত ২০ জন, মৃত রোগীর সংখ্যা ১ জন। এবং ট্রায়াজে আসা রোগীর সংখ্যা পুরুষ ২৭ জন এবং নারী ২৭ জন। মোট ৫৪ জন। ২০২১ সালের এপ্রিলের ১৯ তারিখ থেকে মোট আগত রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ৫৪৪ জন, মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৭৪৬ জন এবং ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৯৪৮ জন।
এ বিষয়ে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড হাসপাতালের ওয়ার্ড প্রধান মানবজমিনকে মো. মামুন বলেন, আগের চেয়ে রোগী বেড়েছে। আগের বেডগুলোই এখন আছে। আইসিইউ বেড ২১২টি, জেনারেল বেড ১ হাজারের বেশি। মোট ৪টি ফ্লোরে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। যে বেডগুলো ছিল সেই বেডগুলো প্রস্তুত করে রেখেছি। যেকোনো করোনা আক্রান্ত বা উপসর্গের রোগী আসলে ভর্তি হতে পারবে। কয়েকদিন আগে ইমার্জেন্সি বেডে ১৪ জন রোগী ছিল এখন ৩২ জন রোগী ভর্তি আছে। জেনারেল বেড আইসিইউ সব প্রস্তুত আছে। রোগী বাড়লেও আগের মতো চাপ এখনো দেখা দেয়নি। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে রোগীর চাপ একটু কম ছিল। তখন ২৫-৩০ জনের মতো রোগী ভর্তি হতো। যখন চাপ বেশি ছিল তখন ৫০ জন রোগীও দিনে ভর্তি হয়েছে। এখন আবার চাপ বাড়ছে। জানুয়ারি থেকেই রোগী বাড়তি দেখা যাচ্ছে। আমাদের এখানে যারা ভর্তি হচ্ছেন তারা খুব বেশি সিরিয়াস নন। রোগীর সংখ্যা বাড়লেও তীব্রতা সেই রকম দেখা যাচ্ছে না। এ সকল রোগীদের খুব বেশি অক্সিজেনের প্রয়োজনও হচ্ছে না। আগের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status