প্রথম পাতা

২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ১০,৮৮৮

করোনা জাল ফেলেছে সারা দেশে

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

২১ জানুয়ারি ২০২২, শুক্রবার, ৯:৫২ অপরাহ্ন

প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুও। করোনা শনাক্তের হার ২৬ শতাংশ অতিক্রম করেছে গতকাল। ঘরে ঘরে উপসর্গের রোগী থাকলেও নমুনা পরীক্ষায় আগ্রহ নেই মানুষের। এ ছাড়া রয়েছে করোনার নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে নানা অভিযোগও। বিভিন্ন অজুহাতে পরীক্ষায় অনীহা। এভাবে চললে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। করোনার উপসর্গ থাকলেও কেউ চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন না। কেউ থাকছেন চুপ। বর্তমানে ঢাকা শহরের করোনার প্রার্দুভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে ধীরে ধীরে বিস্তার করছে দেশের সব জেলাতেও।

এদিকে, গত বছরের ডিসেম্বরের শেষদিক থেকে রোগীর চাপ ধীরে ধীরে বাড়ছে। শ্বাসকষ্ট, খুশখুশে কাশি, জ্বর, শরীর ব্যথাসহ বিভিন্ন লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে আসা রোগীর বেশির ভাগেরই করোনা শনাক্ত হচ্ছে। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেশে শনাক্ত হওয়ার পর থেকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যদিও নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত এখনো খুব একটা নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত মানুষ। ঠাণ্ডা জ্বর, গলাব্যথা, মাথাব্যথায় আক্রান্তের হার বেড়েছে। এ ধরনের রোগীদের করোনা টেস্ট করালেই পজেটিভ আসছে। কিন্তু অনীহার কারণে টেস্ট করাতে যাচ্ছেন না অধিকাংশ মানুষ। উপসর্গ থাকলেও শনাক্ত না হওয়ায় করোনা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে। নতুন শনাক্ত হওয়া রোগীদের ৬৮ থেকে ৭০ শতাংশই রয়েছেন রাজধানীতে। এক সপ্তাহে ঢাকা মহানগরের হাসপাতালগুলোতে করোনা ইউনিটে সাধারণ সিটে রোগী ভর্তি ৮৬ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘরে ঘরে এখন যে অবস্থা, তাতে ব্যাপকভাবে নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্ত নির্ণয় করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া না গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। তখন তা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। দেশে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। সারা দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি অন্তত সে বার্তাই দিচ্ছে। সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ার পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে বাড়ছে করোনার উপসর্গ জ্বর-সর্দি-কাশি। তবে তার বেশির ভাগই প্রকাশ পাচ্ছে না। অনেকে সামাজিক বয়কটের শিকার হওয়ার শঙ্কায় বিষয়টি চেপে যাচ্ছেন। আবার কেউ এড়িয়ে যাচ্ছেন মৌসুমি জ্বর-জারি বলে। যা ভয়াবহ পরিণতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই নমুনা পরীক্ষার ওপর জোর দিতে সংশ্নিষ্টদের আহ্বান জানিয়ে আসছি। বিশেষ করে উচ্চ সংক্রমিত এলাকাগুলোতে কারও শরীরে জ্বর, কাশিসহ উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে নমুনা পরীক্ষা করা উচিত। সন্দেহভাজন ব্যক্তির করোনা পজেটিভ হলে সঙ্গে সঙ্গে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে তিনি অন্যদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকবেন এবং অন্যরা সংক্রমিত হবেন না। সুতরাং নমুনা পরীক্ষা বাড়াতে হবে। উপসর্গের রোগী বাড়তে থাকলেও করোনা পরীক্ষা কম হওয়ায় আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা জানা যাচ্ছে না।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, এখন ঘরে ঘরে ঠাণ্ডা-জ্বর-সর্দিজ্বরে আক্রান্তের হার বাড়ছে। অনেকের কাশিও রয়েছে। বিভিন্ন বয়সী মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। করোনার উপসর্গগুলোও একই রকম। তাই অনীহা না করে করোনা টেস্ট করতে হবে। তিনি আরও বলেন, করোনা আক্রান্তদের আলাদা করে আইসোলেশনে রাখতে হবে। নয়তো আক্রান্তের হার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। সব বয়সী মানুষের এন্টিবডি একরকম থাকে না। অনেকেই বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত থাকেন। তাই উপসর্গ দেখা দিলে টেস্ট করেন, চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করেন। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে এখন ঘরে ঘরে চলছে আলোচনা। দেশে বাড়ছে ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অ্যানালাইসিস’-এর গবেষণা বলছে, ওমিক্রনের সাধারণ উপসর্গগুলোর মধ্যে কাশি, অত্যধিক ক্লান্তি, নাক বন্ধ এবং নাক দিয়ে পানি পড়া অন্যতম। এ ছাড়াও হালকা জ্বর, ঘামাচি, শরীরে ব্যথা, অতিরিক্ত ঘামও দেখা দিতে পারে। লন্ডনের কিংস কলেজের জেনেটিক এপিডেমিওলজির অধ্যাপক টিম স্পেক্টর একটি সমীক্ষার মাধ্যমে জানিয়েছেন, ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীদের বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, খিদে হ্রাস পাওয়ার মতো উপসর্গও দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া মাথাব্যথা, গলা চুলকানো বা গলা জ্বালা ভাবও রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ গত মঙ্গলবার এক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে  বলেন, ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি ও কাশির রোগী দেখ যাচ্ছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ওমিক্রন অনেক বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। পাশাপাশি মৃদু উপসর্গের রোগীদের মধ্যে টেস্ট না করার প্রবণতা রয়েছে। তাই প্রাপ্ত ফলাফলের চেয়েও অনেক বেশি ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী রয়েছে বলে মনে করেন গবেষকরা। তাদের গবেষণায় ২০ শতাংশই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ও ৮০ শতাংশ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট গুণিতক হাবে বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হয়েছে। ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে আসনে না। কারণ এর উপসর্গ মৃদ। করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি ও টিকা নেয়ার বিষয়ে ডা. শারফুদ্দিন বলেন, করোনাভাইরাসের প্রত্যেকটি ভ্যারিয়েন্ট বিপজ্জনক এবং তা মারাত্মক অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

করোনার নতুন শনাক্ত ১০,৮৮৮ আরও ৪ জনের মৃত্যু: করোনার একদিনে শনাক্ত সাড়ে ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। দৈনিক শনাক্তের হার ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশে পৌঁছেছে। যা আগের দিন ছিল ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ। নতুন শনাক্তের ৬৮ শতাংশই ঢাকা মহানগরের বাসিন্দা। ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৮ হাজার ১৮০ জনে। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৮৮৮ জন। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৫০০ জন। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ১৮২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৭৭ জন এবং এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪৫ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশে ৮৫৭টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০ হাজার ৮৯৮টি নমুনা সংগ্রহ এবং ৪১ হাজার ২৯২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ কোটি ২০ লাখ ৭ হাজার ৫৮১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৬ দশমিক  ৩৭ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭০ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৪ জনের মধ্যে ১ পুরুষ এবং ৩ জন নারী। দেশে মোট পুরুষ মারা গেছেন ১৮ হাজার ১৭ জন এবং নারী ১০ হাজার ১৬৩ জন। তাদের মধ্যে বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ১ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ১ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের ১ জন রয়েছেন।  মারা যাওয়া ৪ জনের মধ্যে ঢাকায় ২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২ জন রয়েছেন। মারা যাওয়া ৪ জনই সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন।

নতুন শনাক্তের মধ্যে ঢাকা মহানগরের রয়েছেন ৭ হাজার ৩৭৯ জন। যা একদিনে মোট শনাক্তের ৬৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে রয়েছেন ৭ হাজার ৮৪৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৬১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ হাজার ৫৬৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪৬৮ জন, রংপুর বিভাগে ৮৮ জন, খুলনা বিভাগে ২৮৭ জন, বরিশাল বিভাগে ১১৭ জন এবং সিলেট বিভাগে ৩৫৮ জন শনাক্ত হয়েছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status