বাংলারজমিন

যেভাবে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে পাঠাগারটি

রফিকুল ইসলাম, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

১৯ জানুয়ারি ২০২২, বুধবার, ৭:৫৭ অপরাহ্ন

ছোটবেলা থেকে জ্ঞান পিপাসু মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণে পাঠাগার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ছিল তরুণ রায়ের। তাই ২০০৩ সালে বিএ প্রথমবর্ষের  ছাত্র থাকাকালীন বশতভিটার দুই শতাংশ জমি দান করে গড়ে তোলেন “তরুণের অভিযান পাঠাগার”। বর্তমানে তরুণের বয়স ৩৭ বছর। এরমধ্যে পার হয়েছে ১৮ বছর। আর এই ১৮ বছরে  কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলাসহ ও পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলায় জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে তরুণের অভিযান পাঠাগার।
বইপ্রেমী এই যুবকের পুরো নাম বিকাশ চন্দ্র রায় তরুণ। কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের বৈদ্যেরবাজার গ্রামের মৃত বীরেন্দ্রনাথ রায়ের ছেলে তিনি। বর্তমানে তরুণ রায় চিত্রকর্ম ও প্রেস ব্যবসায় নিয়োজিত। শত কর্ম ব্যস্ততার মধ্যেও নিজ বাড়িতে ১৮ বছর ধরে গ্রামের তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীসহ সব বয়সী মানুষের চাহিদা অনুযায়ী বইয়ের সম্ভার গড়ে সকলের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তার পাঠাগারে বঙ্গবন্ধুর জীবনীসহ বিভিন্ন ধরনের বই ও দৈনিক পত্রিকা হাতে পাচ্ছেন পাঠকরা। বর্তমানে তার পাঠাগারে বই রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার। প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন পাঠক বই ও পত্রিকা পড়তে আসেন পাঠাগারে। অধিকাংশ পাঠকই বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় বই পড়ার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন তরুণ রায়। এছাড়াও বাড়ি থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে রাজারহাট উপজেলা সদরের ৩টি সেলুনে গড়ে তুলেছেন ভলান্টিয়ার’স লাইব্রেরি। এসব সেলুনে গড়ে দিয়েছেন বুক সেলফ। ৭ মাস ধরে নিয়মিত বই সরবরাহ করছেন এসব ভলান্টিয়ার’স লাইব্রেরিতে। সেলুনে চুল দাঁড়ি কাটতে আসা লোকজন তাদের অপেক্ষার সময় কাটাচ্ছেন বই পড়ে।
বৈদ্যেরবাজার এলাকার কলেজ শিক্ষার্থী বীথি রানী রায় ও বৃষ্টি রানী রায় জানান, আমাদের গ্রামে এমন একটি পাঠাগার গড়ে উঠবে ভাবতে পারিনি। আমরা পড়াশুনার পাশাপাশি প্রতিদিন পাঠাগারে গিয়ে পছন্দের বই পড়ি। পাঠাগারের মাধ্যমে আমরা বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী পড়তে শুরু করেছি। কয়েকদিনের মধ্যে পড়াটা শেষ করতে পারবো আশা করছি। এখানে বই পড়তে খুবই ভালো লাগে। করোনা মহামারিকালে পাঠাগার বন্ধ থাকলেও পাঠাগারের উদ্যোক্তা তরুণ রায়কে ফোন করলেই তিনি পছন্দের বই সরবরাহ করতেন। তার বই পড়ার অভিযান, গ্রামের শিক্ষিত মানুষকে জ্ঞান চর্চায় বেগবান করছে।
ওই এলাকার পংকজ কান্তি রায় ও আশরাফুল ইসলাম বলেন, তরুণের অভিযান পাঠাগারের উদ্যোক্তা বিকাশ চন্দ্র রায় নিজের অর্থায়নে বই পড়ার অভিযানকে বেগবান করেছেন। এটা সত্যিই বিরল। তিনি কর্মব্যস্ততার মধ্যেও ১৮ বছর ধরে পাঠকের চাহিদা পুরণ করে আসছেন। এতে যে শুধু আমাদের গ্রামের মানুষ উপকৃত হচ্ছে তা নয়। আশেপাশের অনেক মানুষ তরুণের অভিযান পাঠাগার থেকে জ্ঞান অর্জন করছেন।
রাজারহাট উপজেলা সদরের স্বপ্ন হেয়ার ড্রেসারের মালিক সুধাংশু চন্দ্র শীল জানান, তার সেলুনে ভলান্টিয়ার’স  লাইব্রেরি হওয়ায় তিনিসহ  গ্রাহকরা খুবই উপকৃত হয়েছেন। আগে তার সেলুনে গ্রাহকরা সিগারেট খেয়ে অপেক্ষার সময় কাটাতেন। এখন তারা সেলুনে বই পড়ে সময় কাটান। আমার সেলুনের ভলান্টিয়ার’স লাইব্রেরি থেকে অনেক গ্রাহক পছন্দের বই বাড়িতে নিয়ে পড়ে আবার ফেরত দেন। তরুণের অভিযান পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা তরুণ দাদাকে ফোন দিলে তিনি চাহিদামতো বই আমার সেলুনে সরবরাহ করেন।
তরুণের অভিযান পাঠাগারে প্রতিষ্ঠাতা বিকাশ চন্দ্র রায় তরুণ বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল বাড়িতে একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করবো। ঈশ্বরের কৃপায় পাঠাগারের নামে দুই শতাংশ জমি দান করে আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছি। টানা ১৮ বছর ধরে এলাকার মানুষজন পাঠাগারে এসে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হচ্ছে। যারা পাঠাগারে আসতে পারেন না, এমন পাঠক যেন বই পড়া থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য তাদের চাহিদা অনুযায়ী পছন্দের বই বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছি। এছাড়াও উপজেলা সদরের ৩টি সেলুনে গড়ে তোলা ভলান্টিয়ার’স লাইব্রেরিগুলোর খোঁজখবর রাখছি নিয়মিত। চাহিদামতো এসব ভলান্টিয়ার’স লাইব্রেরিতে বই সরবরাহ করছি। নিজে সবসময় বই পড়ি এবং পাঠকদের বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করি। বই পড়ার মাধ্যমেই আলোকিত সমাজ গঠন করা সম্ভব বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। তাই নিজের আয়ের একটি অংশ পাঠাগারের জন্য ব্যয় করি। তিনি আরও জানান, অর্থাভাবে পাঠাগারের ভবন নির্মাণ কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। সরকারি অনুদান ও সহযোগিতা পেলে পাঠাগারের একতলা ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা সহজ হবে। তাই এই পাঠাগারটিকে একটি আধুনিক পাঠাগার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নূরে তাসনিম জানান, তরুণের অভিযান পাঠাগারে আমি নিজেও গিয়েছি। নিজের অর্থায়নে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করে গ্রামের মানুষদের বই পড়ার আগ্রহকে বেগবান করার পাশাপাশি ১৮ বছর ধরে পাঠকের চাহিদা পূরণ করে আসছেন তরুণ রায়। এটা সত্যিই বিরল। পাঠাগারের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সরকারিভাবে কিছু অনুদান দিয়েছি। যেহেতু পাঠাগারটির অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ থেমে রয়েছে, সামনে কোনো বরাদ্দ আসলে আবারও দেয়ার চেষ্টা করবো।  
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status