অনলাইন
আজ ডরোথিয়া ম্যাকেলার এর প্রয়াণ দিবস
স্মরণ: ডরোথিয়া ম্যাকেলার: একজন নন্দিত কবি
শরীফ আস্-সাবের
১৪ জানুয়ারি ২০২২, শুক্রবার, ৮:১০ অপরাহ্ন
ডরোথিয়া ম্যাকেলার একজন অস্ট্রেলিয়ান কবি এবং কথাসাহিত্যিক। আজ, ১৪ ই জানুয়ারী তাঁর ৫৪তম মৃত্যু দিবস। তাঁর পুরো নাম ইসোবেল মেরিয়ন ডরোথিয়া ম্যাকেলার। তাঁর জন্ম হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ১৩৭ বছর আগে ১৮৮৫ সালের পহেলা জুলাই অস্ট্রেলিয়ার সিডনীর অদূরে পয়েন্ট পাইপার শহরতলীর ‘ডুনারা’ নামক এক পারিবারিক বাসস্থানে। তাঁর পিতা স্যার চার্লস ম্যাকেলার ছিলেন একজন চিকিৎসক ও সাংসদ। ১৯০৮ সালে ডরোথিয়া ম্যাকেলারের কবিতা, ‘মাই কান্ট্রি’ প্রকাশিত হলে তিনি অনেকটা রাতারাতিভাবেই ব্যপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এই কবিতার দ্বিতীয় স্তবকটি বিশেষভাবে সমাদৃত যার প্রথম লাইনটি হচ্ছেঃ “আমি এক সূর্যদগ্ধ দেশকে ভালোবাসি”।
লেখালেখি ছাড়াও ১৯৩০ ও ১৯৪০ এর দশকে ডরোথিয়া ম্যাকেলার সিডনীভিত্তিক বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। সিডনী পাবলিশার্স, এডিটরস এন্ড নভেলিস্ট ক্লাব, সিডনী পেন ক্লাব এবং বুশ বুক ক্লাব অফ নিউ সাউথ ওয়েলসের সাথে তাঁর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। পরবর্তী বছরগুলিতে তিনি লেখালেখি প্রায় বন্ধ করে দেন এবং স্বাস্থ্যগত কারণে তাঁর জীবনের শেষ এগারো বছর র্যান্ডউইকের একটি নার্সিং হোমে অতিবাহিত করেন। ১৯৬৮ সালের পহেলা জানুয়ারী সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ডোরোথিয়া ম্যাকেলারকে ব্রিটিশ সরকার অর্ডার অব ব্রিটিশ এম্পায়ার (ওবিই) পদকে ভূষিত করে। একই বছরের ১৪ই জানুয়ারী ৮২ বছর বয়সে তিনি মারা যান। তাঁকে সিডনীর পূর্ব শহরতলির ওয়েভারলী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। তাঁর প্রয়াণ দিবসে আমি তাঁর ‘মাই কান্ট্রি’ কবিতাটি বাংলায় অনুবাদ করে আপনাদের সামনে হাজির করছি। আশা করি কবিতাটি আপনাদের ভালো লাগবে।
আমার দেশ (মাই কান্ট্রি)
মুলঃ ডরোথিয়া ম্যাকেলার
অনুবাদঃ শরীফ আস্-সাবের
আমি ভালোবাসি
সবুজ তরুগুল্মে শোভিত ছায়াঢাকা মেঠো পথ,
থরে থরে সাজানো বন এবং বাগিচারা
প্রবাহিত হয় আমার শিরায় শিরায়,
ধূসর-নীল দূরত্বের দৃঢ় ভালোবাসা,
বাদামী স্রোত এবং নরম আবছা আকাশ ঘিরে
এ আমার এক অন্যরকম ভালো লাগা,
যা কারো সাথে ভাগ করা যায় না।
আমি এক সূর্যদগ্ধ দেশকে ভালোবাসি,
ভালোবাসি খরা, বন্যা আর বৃষ্টিমুখর
অবারিত মাঠ, রুক্ষ পাহাড়ের সারি!
আমি ভালোবাসি এ দেশের
বিস্তীর্ণ দিগন্ত রেখা, সফেন সাগর।
ভালবাসি তার সৌন্দর্য, তার সন্ত্রাস,
আর উদাম বাদামী জমির হাতছানি!
চাঁদের কাছে হতাশ করা
গোলাকার বাকলে মোড়া
গাছপালায় ছাওয়া দুর্গম বন,
ইন্দ্রনীলে আচ্ছন্ন পাহাড়,
দুপুরের তপ্ত সোনালি নিস্তব্ধতা,
যেখানে লতাগুল্ম সবুজ ঝোপে ঝাড়ে
জড়াজড়ি করে সহজ ক্ষিপ্রতায়,
অর্কিডেরা গাছের চুড়াকে সাজায় যতনে
আর ফার্নের পাতারা আড়াল করে রাখে
উষ্ণ কালো মাটি।
আমার দেশ আমার হৃদয়ের মধ্যমণি,
যেখানে নীল আকাশ নিঃসংশয় জেগে থাকে।
তবু, ভগ্ন হৃদয় নিয়ে আমাদের চারপাশে
গবাদি পশুগুলিকে মরে যেতে দেখি-
তারপর, ধূসর মেঘেরা জড়ো হলে পর
আমরা আবার বিরামহীন বৃষ্টিতে ভেজা
সেনা বাদক দলকে করি আশীর্বাদ।
আমার হৃদয়ের অন্তঃস্থলে আমার দেশ -
সোনালী রংধনুর দেশ।
বন্যা, আগুন এবং দুর্ভিক্ষের বিনিময়ে
এই দেশ আমাদের তিন গুন ফিরিয়ে দেয় -
সবুজের এক ছায়াময় পর্দার আড়ালে
শষ্যের তৃষ্ণার্ত মাঠগুলিকে
ঢেকে দেয় বারংবার, আর
আমাদের চোখের সীমানায় লকলক
বেড়ে উঠে সতেজ ফসল।
এ আমার ওপ্যাল-হৃদয়ের দেশ,
যার আছে একটি নির্বিকার উদার জমিন;
যারা তাকে ভালোবাসোনি
তারা বুঝবে না কোন দিন!
এই জৌলুসে ভরা ঐশ্বর্যময় পৃথিবীর
যেখনেই হউক আমার শেষ শয্যা,
আমার আত্মা, আমার হৃদয় উড়ে উড়ে
ফিরে আসবেই এই সূর্যদগ্ধ বাদামী দেশে।
----
লেখকঃ শরীফ আস্-সাবের, কবি, কলামিষ্ট ও কথাসাহিত্যিক
লেখালেখি ছাড়াও ১৯৩০ ও ১৯৪০ এর দশকে ডরোথিয়া ম্যাকেলার সিডনীভিত্তিক বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। সিডনী পাবলিশার্স, এডিটরস এন্ড নভেলিস্ট ক্লাব, সিডনী পেন ক্লাব এবং বুশ বুক ক্লাব অফ নিউ সাউথ ওয়েলসের সাথে তাঁর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। পরবর্তী বছরগুলিতে তিনি লেখালেখি প্রায় বন্ধ করে দেন এবং স্বাস্থ্যগত কারণে তাঁর জীবনের শেষ এগারো বছর র্যান্ডউইকের একটি নার্সিং হোমে অতিবাহিত করেন। ১৯৬৮ সালের পহেলা জানুয়ারী সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ডোরোথিয়া ম্যাকেলারকে ব্রিটিশ সরকার অর্ডার অব ব্রিটিশ এম্পায়ার (ওবিই) পদকে ভূষিত করে। একই বছরের ১৪ই জানুয়ারী ৮২ বছর বয়সে তিনি মারা যান। তাঁকে সিডনীর পূর্ব শহরতলির ওয়েভারলী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। তাঁর প্রয়াণ দিবসে আমি তাঁর ‘মাই কান্ট্রি’ কবিতাটি বাংলায় অনুবাদ করে আপনাদের সামনে হাজির করছি। আশা করি কবিতাটি আপনাদের ভালো লাগবে।
আমার দেশ (মাই কান্ট্রি)
মুলঃ ডরোথিয়া ম্যাকেলার
অনুবাদঃ শরীফ আস্-সাবের
আমি ভালোবাসি
সবুজ তরুগুল্মে শোভিত ছায়াঢাকা মেঠো পথ,
থরে থরে সাজানো বন এবং বাগিচারা
প্রবাহিত হয় আমার শিরায় শিরায়,
ধূসর-নীল দূরত্বের দৃঢ় ভালোবাসা,
বাদামী স্রোত এবং নরম আবছা আকাশ ঘিরে
এ আমার এক অন্যরকম ভালো লাগা,
যা কারো সাথে ভাগ করা যায় না।
আমি এক সূর্যদগ্ধ দেশকে ভালোবাসি,
ভালোবাসি খরা, বন্যা আর বৃষ্টিমুখর
অবারিত মাঠ, রুক্ষ পাহাড়ের সারি!
আমি ভালোবাসি এ দেশের
বিস্তীর্ণ দিগন্ত রেখা, সফেন সাগর।
ভালবাসি তার সৌন্দর্য, তার সন্ত্রাস,
আর উদাম বাদামী জমির হাতছানি!
চাঁদের কাছে হতাশ করা
গোলাকার বাকলে মোড়া
গাছপালায় ছাওয়া দুর্গম বন,
ইন্দ্রনীলে আচ্ছন্ন পাহাড়,
দুপুরের তপ্ত সোনালি নিস্তব্ধতা,
যেখানে লতাগুল্ম সবুজ ঝোপে ঝাড়ে
জড়াজড়ি করে সহজ ক্ষিপ্রতায়,
অর্কিডেরা গাছের চুড়াকে সাজায় যতনে
আর ফার্নের পাতারা আড়াল করে রাখে
উষ্ণ কালো মাটি।
আমার দেশ আমার হৃদয়ের মধ্যমণি,
যেখানে নীল আকাশ নিঃসংশয় জেগে থাকে।
তবু, ভগ্ন হৃদয় নিয়ে আমাদের চারপাশে
গবাদি পশুগুলিকে মরে যেতে দেখি-
তারপর, ধূসর মেঘেরা জড়ো হলে পর
আমরা আবার বিরামহীন বৃষ্টিতে ভেজা
সেনা বাদক দলকে করি আশীর্বাদ।
আমার হৃদয়ের অন্তঃস্থলে আমার দেশ -
সোনালী রংধনুর দেশ।
বন্যা, আগুন এবং দুর্ভিক্ষের বিনিময়ে
এই দেশ আমাদের তিন গুন ফিরিয়ে দেয় -
সবুজের এক ছায়াময় পর্দার আড়ালে
শষ্যের তৃষ্ণার্ত মাঠগুলিকে
ঢেকে দেয় বারংবার, আর
আমাদের চোখের সীমানায় লকলক
বেড়ে উঠে সতেজ ফসল।
এ আমার ওপ্যাল-হৃদয়ের দেশ,
যার আছে একটি নির্বিকার উদার জমিন;
যারা তাকে ভালোবাসোনি
তারা বুঝবে না কোন দিন!
এই জৌলুসে ভরা ঐশ্বর্যময় পৃথিবীর
যেখনেই হউক আমার শেষ শয্যা,
আমার আত্মা, আমার হৃদয় উড়ে উড়ে
ফিরে আসবেই এই সূর্যদগ্ধ বাদামী দেশে।
----
লেখকঃ শরীফ আস্-সাবের, কবি, কলামিষ্ট ও কথাসাহিত্যিক