বাংলারজমিন
পেশা বদলে মরিয়া ঠাকুরগাঁওয়ের চুনরিরা
মো. রেজাউল প্রধান, ঠাকুরগাঁও থেকে
১৫ জানুয়ারি ২০২২, শনিবার, ৬:৫৭ অপরাহ্ন
বাংলা সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের অন্যতম উপাদান হলো পান। আর এই পানের অপরিহার্য উপাদান হলো চুন। আর এই চুন তৈরির সঙ্গে যারা জড়িত আছেন, তাদেরকে ডাকা হয় ‘চুনরী’ বলে। আবার কেউ ডাকেন ‘জুগি’ বলে। যে নামেই ডাকা হোক না কেন, ভালো নেই ঠাকুরগাঁয়ের চুনরিরা। পূর্ব পুরুষের চুন তৈরির ব্যবসা ধরে রেখে কোনো রকমে চলছে তাদের জীবন-জীবিকা। ফলে পেশা বদলে মরিয়া নতুন প্রজন্মের অনেক চুনরি। আরাজী কৃষ্ণপুর গ্রামের পেরেই বালা বলেন, ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করি কিন্তু তারপরও সংসারের খরচ জোটেনা। কোনোমতে ধার-দেনা করে দিন কাটাতে হয়। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাতে পারছি না। একই গ্রামের বেনামি দেবনাথ বলেন, বাপ-দাদার সময় থেকে চুন তৈরির কাজ করে আসছি। বর্তমানে খাল-বিল, নদী-নালায় ঝিনুক পাওয়া যায় না। পঞ্চগড় ও দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা থেকে প্রতি মণ ঝিনুক ৭ শত থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকা করে কিনে আনতে হয়। এক মণ চুন তৈরি করতে চার মণ খড়ি, পাঁচ গণ্ডা কারি এবং দুইজন শ্রমিক লাগে। যার আনুমানিক খরচ ১ হাজার ৬ শ’ টাকা। প্রতিমণ চুন বাজারে বিক্রি হয় ১ হাজার ৩ শ’ ২০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪ শ’ টাকা। ফলে চুন তৈরিতে লাভ তো দূরের কথা বরং লোকসান গুনতে হচ্ছে আমাদের। তিনি বলেন, সরকার থেকে যদি আমাদেরকে সহজ শর্তে ঋণ দেয়, এবং চুন তৈরির জন্য আধুনিক মেশিন দেয় তাহলেই এ পেশাকে ধরে রাখা সম্ভব। তা নাহলে আর কতদিন এ পেশায় টিকতে পারবো তা উপরওয়ালাই জানেন। এদিকে জেলার রানীশংকৈল উপজেলার জুগিপাড়া, জগদল, কাশিপুর ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চুন তৈরির কারিগররা জানান, এ জেলায় এক সময় প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার চুন তৈরি করতো। চুনে লোকসান হওয়ার কারণে বর্তমানে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিনমজুরি, কামলা দিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। তারপরও বাপ-দাদার পেশাকে ধরে রাখতে এখনো ১৫ থেকে ২০টি পরিবার চুন তৈরি করে। কালিবাড়ী বাজারের চুন ও পান বিক্রেতা কানাই সেন বলেন, ঝিনুকের তৈরি চুন থেকে বাজারে পাথরের চুনে লাভ বেশি। তাই অনেক পান-চুন বিক্রেতা পাথরের চুন বিক্রি করেন।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, অনেকেই পেশা বদল করে অন্য পেশায় যাচ্ছেন। যারা তামাকের সঙ্গে জড়িত ছিল তারাও অনেকে পেশা বদল করেছে। চুন তৈরিতে পরিবেশের দিক থেকে যদি তাদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি না থাকে আমি তাদের খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, অনেকেই পেশা বদল করে অন্য পেশায় যাচ্ছেন। যারা তামাকের সঙ্গে জড়িত ছিল তারাও অনেকে পেশা বদল করেছে। চুন তৈরিতে পরিবেশের দিক থেকে যদি তাদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি না থাকে আমি তাদের খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।