অনলাইন

শ্রীলঙ্কার দুর্দিনে ৯০০ মিলিয়ন ডলারের অর্থসাহায্য পাঠাল ভারত

১৪ জানুয়ারি ২০২২, শুক্রবার, ১২:৫৮ অপরাহ্ন

ভারত বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার সাথে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের কারেন্সি অদলবদল নিশ্চিত করেছে। শ্রীলংকার অর্থনীতি যখন ডামাডোলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তখন ভারতের এই পদক্ষেপ প্রশংসিত হয়েছে সে দেশের সরকারের কাছে। বিশেষ করে যখন এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (ACU) শ্রীলংকাকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার পাঠানোর বিষয়টি স্থগিত করে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার একটি টুইট বার্তায়, কলম্বোতে ভারতীয় মিশন বলেছে যে হাইকমিশনার গোপাল বাগলে শ্রীলংকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নর অজিথ নিভার্ড ক্যাবরালের সাথে দেখা করেছেন এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ৯০০ মিলিয়ন ডলারের সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে "শ্রীলঙ্কার প্রতি ভারতের দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেছে। "মিঃ ক্যাব্রাল একটি টুইট বার্তায় বলেছেন- 'শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় হাইকমিশনার মহামান্য গোপাল বাগলে-এর সাথে চমৎকার আলোচনা হয়েছে যেখানে তিনি RBI দ্বারা #SAARC #SWAP এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার অন্যান্য দিক নিশ্চিত করেছেন।'' গত ডিসেম্বরে অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপাকসের নয়াদিল্লি সফরের সময় তিনি ভারতের কাছে জরুরী আর্থিক সহায়তার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।

সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানির জন্য ক্রেডিট লাইন এবং বৈদেশিক রিজার্ভ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কা বর্তমানে একটি গুরুতর আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে যা অর্থনীতিবিদদের মতে বৈদেশিক ঋণের খেলাপির মুখে দেশটিকে দাঁড় করতে পারে এবং আমদানি-নির্ভর দ্বীপ রাষ্ট্রে খাদ্য ঘাটতি তৈরি করতে পারে। কলম্বোকে ২০২২ সালে ৭ বিলিয়ন ডলার বকেয়া ঋণ পরিশোধ করতে হবে, যার মধ্যে জানুয়ারিতে ৫০০ মিলিয়ন এবং জুলাই মাসে ১ বিলিয়ন বন্ড পরিশোধ করার কথা আছে। শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে আস্থা প্রকাশ করেছে। দেশের গভর্নর ক্যাব্রাল বুধবার বলেছেন যে কলম্বো একটি নতুন ঋণের জন্য বেইজিংয়ের সাথে আলোচনা করছে।

মহামারীর মধ্যেও চীন ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ এবং ১.৫ বিলিয়ন ডলার কারেন্সি সোয়াপ-এ সম্মত হয়ে তাদের সাহায্যের হাত শ্রীলংকার দিকে প্রসারিত করেছে ।স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে গত সপ্তাহে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের কলম্বো সফরের সময়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। শ্রীলঙ্কা ইতিমধ্যেই চীনের কাছে ৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণী। শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের মতে, এই পরিস্থিতিতে ভারত ও চীন দ্বীপ দেশটিকে সময়মত সহায়তা প্রদানের জন্য প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

২০২০ সালের জুলাইয়ে, আরবিআই শ্রীলঙ্কাকে মহামারীর প্রথম তরঙ্গের প্রভাব মোকাবেলায় সহায়তা করার জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলারের অর্থসাহায্য পাঠিয়েছিল এবং পরে ফেব্রুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত তিন মাসের রোল ওভার প্রদান করেছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক অফ শ্রীলঙ্কা পরে সেটা মিটিয়ে দিয়েছে। আরবিআই সহায়তার বিষয়ে বৃহস্পতিবারের ঘোষণার মধ্যে রয়েছে ACU-তে শ্রীলঙ্কার পাওনা ৫০০ মিলিয়ন ডলারের অর্থপ্রদান স্থগিত করা, যা বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং মুদ্রা কর্তৃপক্ষের একটি আঞ্চলিক উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয়।


'ট্রিনকো চুক্তির সুবিধা'
উল্লেখযোগ্যভাবে, দ্বীপের উত্তর-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত ত্রিনকোমালি তেল ট্যাঙ্ক ফার্ম যৌথভাবে বিকাশের বিষয়ে ভারত-শ্রীলংকা দুই দেশ একটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি স্বাক্ষর করার এক সপ্তাহ পরে ভারতের পক্ষ থেকে কারেন্সি অদলবদলের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্র মারফত খবর, নয়াদিল্লি থেকে কলম্বোকে যে কোনও আর্থিক সহায়তা একমাত্র চুক্তি স্বাক্ষরের পরেই চলতে পারে । আরবিআই-এর সাহায্য শ্রীলঙ্কাকে তার তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সহায়ক হবে। নয়াদিল্লির বিনিয়োগ এবং ভারত মহাসাগরে এর কৌশলগত স্বার্থ উভয় ক্ষেত্রেই ত্রিনকোমালি প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব রয়েছে৷ নয়া দিল্লিতে শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার মিলিন্দা মোরাগোদা বলেছেন, 'তেল ব্যবহারে ভারত বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এবং এটি ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে ২০৩০ সাল নাগাদ ভারতের প্রয়োজনীয়তা ৫০% বৃদ্ধি পাবে।

এই পরিস্থিতিতে শ্রীলংকা-ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য ত্রিনকোমালি প্রকল্পের চুক্তিস্বাক্ষর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। ত্রিনকোমালিতে স্টোরেজের সুস্পষ্ট সম্ভাবনা ছাড়াও, সাম্প্রতিক চুক্তি উভয় দেশকে "লেনদেনমূলক" সম্পর্ককে আরও "কৌশলগত স্তরে" উন্নীত করার সুযোগ করে দেবে বলে তিনি দ্য হিন্দুকে জানিয়েছেন। মিঃ মোরাগোদা জোর দিয়ে বলেছেন, একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।

চুক্তি অনুসারে, ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের সাবসিডিয়ারি লঙ্কা আইওসি ৫০ বছরের জন্য ১৪ টি ট্যাঙ্ক পরিচালনা করবে, সিলন পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন ২৪ টি ট্যাঙ্ক চালাবে, CPC দ্বারা লঙ্কা IOC-এর সাথে প্রতিষ্ঠিত একটি যৌথ উদ্যোগ প্রায় ৮৫০ একর বিস্তৃত প্রকল্পটিতে ৬১ টি ট্যাঙ্ক পরিচালনা করবে। প্রতিটি ট্যাংক সংস্কার করতে কমপক্ষে ১০০ মিলিয়ন খরচ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। "যত তাড়াতাড়ি আমরা একটি ভাল ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করব, এই প্রকল্পটি উভয় দেশের জন্য মঙ্গলদায়ক হবে", জানিয়েছেন মিঃ মোরাগোদা।

সূত্র: দ্য হিন্দু
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status