দেশ বিদেশ

ভুয়া পার্র্স্বেল ফাঁদ আড়াই কোটি টাকা পাচার

স্টাফ রিপোর্টার

১৩ জানুয়ারি ২০২২, বৃহস্পতিবার, ৯:৪৮ অপরাহ্ন

ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসে ভুয়া গিফ্‌ট প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বাংলাদেশিসহ নয় প্রতারক। প্রথমেই তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে টার্গেটকৃত ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। এরপর তাদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে মূল্যবান পার্র্শ্বেল পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে। প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া টাকার মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় আড়াই কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে চক্রটি। তাদের সঙ্গে প্রতারণার সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন একাধিক বাংলাদেশি। সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব অভিযোগে সাত বিদেশি নাগরিকসহ সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের নয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। চক্রের আরও একাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে কাজ করছে। গত মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত রাজধানীর পল্লবী, রূপনগর ও দক্ষিণখান থানা এলাকায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব’র একাধিক টিম। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- নাইজেরিয়ার নাগরিক উজেকি ওবিননারুবেন, দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাতমবিখনা গেবুজা, নাইজেরিয়ার ইফুনানিয়া ভিভিয়ান নাওকি, সানডে সেদারেক ইজিম, চিনেদু মোসাস নাজি, কলিমস ইফেসিনাসি তালিকি ও সিদিম্মা ইবেলি ইলোফর। এছাড়াও তাদের সহযোগী দুই বাংলাদেশি হলো- ফেনীর নাহিদুল ইসলাম ও নরসিংদীর সোনিয়া আক্তার। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৮টি পাসপোর্ট, ৩১টি মোবাইল ফোনসেট, তিনটি ল্যাপটপ, একটি চেকবই, তিনটি পেনড্রাইভ ও নগদ ৯৫ হাজার ৮১৫ টাকা জব্দ করা হয়। গতকাল দুপুরে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক বলেন, তারা প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেয়েদের নামে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন প্রোফাইল ঘেঁটে বড় বড় ব্যবসায়ী, হাই-প্রোফাইল চাকরিজীবীসহ উচ্চবিত্ত ব্যক্তিদের টার্গেট করতো। নাইজেরিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার এই সাত প্রতারক নাগরিকের ভিসার মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হলেও তারা অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। চক্রটি এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদের দেশে পাচার করেছে। এখানে এসে তারা অনেক বেশি ভাড়ায় অভিজাত এলাকায় দামি ফ্ল্যাটে বসবাস করতো। তাদের কাগজপত্র বেশির ভাগ সময় বাসার মালিকদের কাছে দিতো না। মোজাম্মেল হক বলেন, তারা সংঘবদ্ধভাবে দীর্ঘদিন ধরে অভিনব কায়দায় বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ করতো। মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ফেসবুকসহ নানা মাধ্যম ব্যবহার করে নিজেদের ইউরোপ আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত দেশের নাগরিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিত। পরে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও প্রেমের সম্পর্ক তৈরির একপর্যায়ে দামি উপহার পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাততো। প্রতারক সোনিয়া আক্তার বাংলাদেশের কাস্টমস অফিসার পরিচয়ে ভিকটিমকে ফোন করে জানাতো, তার নামে একটি পার্শ্বেল এসেছে। পার্শ্বেলটি ছাড়িয়ে নিতে কাস্টম চার্জ হিসেবে মোটা অংকের অর্থ মোবাইল ব্যাংকিং অথবা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বারে পরিশোধ করতে হবে।

পার্শ্বেলে অতি মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী থাকায় কাস্টম চার্জ একটু বেশি হয়েছে বলে তাদের বলা হয়। এ সময় প্রতারণার শিকার ব্যক্তি প্রতারকদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করে টাকা প্রদান করতে চাইলে প্রতারকরা এসএমএস’র মাধ্যমে জানায় তারা বিদেশে অবস্থান করছেন। প্রতারিত ব্যক্তি অর্থ পরিশোধ করার পর তার নামে প্রেরিত পার্শ্বেলটি সংগ্রহ করার জন্য বিমানবন্দরে গিয়ে দেখেন কোনো পার্শ্বেল নেই। তখন তিনি ওই বিদেশি বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে আর পাওয়া যায় না। তখন বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। র‌্যাব’র এই কর্মকর্তা বলেন, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার পর প্রতারকরা জানান, তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ ডলার (বৈদেশিক মুদ্রা) রয়েছে। কিন্তু তারা তা খরচ কিংবা দেশে নিতে পারছেন না। প্রতারকরা সেই ডলার ভিকটিমের কাছে পাঠাতে চায়। পরে যেকোনো সময় নিয়ে নেবেন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের এসব বিদেশি নাগরিক ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসে রাজধানীর পল্লবী, রূপনগর ও দক্ষিণখান এলাকায় অবস্থান করে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করে। গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে তারা বাংলাদেশি সহযোগীদের নিয়ে এমন অভিনব প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তাদের অনেকেরই ভিসার মেয়াদ নেই। তাদের নামে আগেও প্রতারণার মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত সোনিয়া আক্তার ও নাহিদুল ইসলাম এই আন্তর্জাতিক চক্রের দেশীয় সহযোগী।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status