শেষের পাতা
বৈধ পথে মালয়েশিয়ায় গিয়ে যেভাবে অবৈধ হয় প্রবাসীরা
আশরাফুল মামুন, মালয়েশিয়া থেকে
২০২২-০১-০২
দেশের বাইরে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার বা কর্মক্ষেত্র বহু যুগ থেকেই মালয়েশিয়া। এখানে সাধারণ শ্রমিক থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, প্রকৌশলী, চিকিৎসকসহ সব ধরনের শ্রেণি-পেশার মানুষের আদর্শ কর্মসংস্থান। যুগে যুগে কাজ পাগল বাংলাদেশি প্রবাসীরা তাদের ভাগ্যটাকে গড়তে এশিয়ার ইউরোপ খ্যাত মালয়েশিয়ায় পাড়ি দিয়েছে। এই আদর্শ কর্মক্ষেত্রটি বারবার বিতর্কিত ও বাধাগ্রস্ত করার হীন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় কিছু মধ্যস্বত্বভোগী এজেন্ট, দালাল, রিক্রুটিং এজেন্সি। এর পেছেনে আরও একাধিক কারণ অন্তর্ভুক্ত থাকলেও অবৈধতার বেড়ি পায়ে পরার মূলত এরাই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে দায়ী। সম্প্রতি দেশটির অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক দাতোক খায়রুল জাজাইমি দাউদ এক পরিসংখ্যানে বলেন, শুধুমাত্র ২০২১ সালেই ২৬ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি প্রবাসীকে আটক করে কারাদণ্ডাদেশের পরে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত লক্ষাধিক প্রবাসী মালয়েশিয়া থেকে জেলে খেটে দেশে খালি হাতে ফেরত এসেছেন। তাদের অধিকাংশই বৈধপথে চাকরির স্বপ্ন নিয়ে মালয়েশিয়ায় এসেছিলেন। কি পেয়েছেন আর কি হারিয়েছেন সে হিসেবে কষতে গিয়ে কেউ কেউ সেখানেই হৃদরোগে মারা গেছেন আর কেউ নিঃস্ব হয়ে দেশে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আবারো চালু হতে যাচ্ছে সেই কলিং ভিসা। তবে এখনো মালয়েশিয়াতে কতো অবৈধ অভিবাসী আছে তার সঠিক পরিসংখ্যান কারও কাছেই নেই। এর হিসাব রাখাও সম্ভব না। কারণ বিমান পথে যারা মালয়েশিয়ায় গিয়েছেন তাদের তথ্য পাওয়া সম্ভব কিন্তু যারা সমুদ্র পথে মালয়েশিয়া গিয়েছে বা ট্যুরিস্ট ও স্টুডেন্ট ভিসায় এসে পাসপোর্ট ফেলে দিয়ে কাজে যোগদান করেছে তাদের সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া সম্ভব না। কেউ কেউ বডি কন্টাক্ট, স্টুডেন্ট ও ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে কাজে যোগদান করে স্বেচ্ছায় অবৈধ হয়েছে। তাই তাদের ব্যাপারে বলার কোনো ভাষা নেই। কারণ তারা নিজেরাই খাল কেটে কুমির এনে অবৈধ হয়েছেন। যদিও এদের মধ্যে কেউ কেউ আগের পাসপোর্ট ফেলে দিয়ে দূতাবাস থেকে নতুন করে পাসপোর্ট রিনিউ করে ২০১৬ এর রিহায়ারিং এবং ২০২০ এর রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে বৈধ হতে পেরেছেন কিন্তু সবাই সেটা পারেননি।
যেসব কারণে প্রবাসীরা অবৈধতার ফাঁদে পা দেয় বা অবৈধ হতে বাধ্য হয় এসব সমস্যার সমাধান না করা হলে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। কিন্তু কোনো পক্ষই এসব সমস্যা সমাধানে আন্তরিক বলে মনে হচ্ছে না। অবৈধ হয়ে জেলে গেলে এখানে সরকার ও দূতাবাসের কিছুই করার থাকে না। তখন এক প্রকার অসহায়। কারণ মালয়েশিয়ায় গিয়ে অবৈধ হয়ে ধরা পড়লে তখন মালয়েশিয়ার প্রচলিত আইনে জেল জরিমানা হয়। এখানে দূতাবাসের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। সে কোন দেশের অভিবাসী সেটা দেখে বিচার করা হয় না। স্টুডেন্ট ও ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে জেনেশুনে অবৈধ হয়ে গেলেন তাদের ব্যাপারে না বললেও যে সমস্ত কর্মীদেরকে বাধ্য করা হয়েছে বা বাধ্য হয়েছে অবৈধ হয়ে জেলে যেতে তাদের ব্যাপারে কিছু বলতেই হয়।
প্রথমেই বলতে হয় ২০১৯ এর আগের সেই কলিং ভিসার ভিলেন বাংলাদেশি ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেটকে নিয়ে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে লাখ টাকার নিচে খরচায় শ্রমিক প্রেরণের চুক্তি হলেও এই ১০ সিন্ডিকেট প্রত্যেক কর্মীর গলায় পাড়া দিয়ে আদায় করেছে সাড়ে তিন থেকে ৪ লাখ টাকা। আর এই টাকা একজন কর্মীর সংগ্রহ করতে গরু,ছাগল,জায়গা-জমি বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে গেছে। পিছনে দেশে রেখে গেছে ঋণের বোঝা।
মালয়েশিয়ায় পৌঁছে গিয়ে জানা গেলো বেসিক বেতন সব সেক্টরে কর্মীদের গড়ে মাত্র মাসিক ১ হাজার রিংগিত। যা বাংলাদেশি টাকায় ২০ হাজার টাকা। ১২ ঘণ্টার বেশি ১৬ ঘণ্টা কাজ করলে বড়জোড় ১৫০০ রিংগিত পাওয়া যায়। কিন্তু এই রোজগারে একজন প্রবাসীর থাকা, খাওয়া, বছরে বছরে ভিসা রিনিউ, অন্যন্যা খরচের পর মাসে ১০ হাজার টাকাও বাড়িতে পাঠাতে পারে না। আর যদিও ১০ হাজার টাকা প্রতিমাসে জমাতে পারে তাহলে সে যে ৪ লাখ টাকা খরচ করে এখানে এসেছে এটা তুলতে প্রয়োজন ৪০টি মাস বা সাড়ে তিন বছর। তারপর চিন্তা করতে হবে তার ভবিষ্যতে কি দিয়ে কীভাবে গড়বে। হতাশা আর অনিশ্চয়তায় এক সময় কারও পরামর্শে কিংবা নিজে নিজেই কোম্পানি ছেড়ে পালিয়ে যায় অন্য কোনো কোম্পানিতে বেশি বেশি টাকা বেতন পাওয়ার আশায়। সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। এদিকে তার মালিক তাকে খুঁজে না পেয়ে ব্ল্যাক লিস্টেট করে ইমিগ্রেশনে গিয়ে। আর মালয়েশিয়ায় যারা ব্ল্যাক লিস্টেট হয় তারা কোনো সময়ই বৈধ হতে পারে না। তাদের ঠিকানা হয় জেলে অথবা সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার। এই ১০ সিন্ডিকেটের কুকীর্তি এক সময় ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর ২০১৯ এর সেপ্টেম্বরে দেশটির আধুনিক রূপকার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ১০ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কলিং ভিসার কার্যক্রম সম্পূর্ণ স্থগিত করে দেন। আর বলেন, আমার দেশে শ্রমিক আসবে কাজ করতে মাঝখানে একটি চক্র শ্রমিকদের জিম্মি করে মোটা অংকের আয় করছে আমার কাছে এর প্রমাণ আছে। যদিও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কেউ বা প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী এই সিন্ডিকেটের কারণে যে মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার হারিয়েছে এটা স্বীকার করেন না।
তৃতীয় যে কারণে প্রবাসীরা অবৈধ হয়েছে সেটা হলো এক ধরনের ভয়াণক প্রতারণা ২০১৬ এর রিহায়ারিং এর সময়কালে। এ সময় লাখ লাখ প্রবাসী বৈধতা গ্রহণের জন্য রিক্রুটিং সংস্থা ইমাম, মাইইজি ও বিভিন্ন নিয়োগকর্তার মাধ্যমে পাসপোর্ট ও টাকা পয়সা জমা দিয়েও প্রতারিত হয়েছেন বৈধতা পাননি। এর মূল কারণ ছিল সংশ্লিষ্ট কোম্পানির মালিক বা নিয়োগ কর্তার গাফিলতি ও তাদের অযোগ্যতা। প্রথমে শ্রমিকদের কাছ থেকে পাসপোর্ট টাকা অগ্রিম নিয়ে নিয়েছেন নিয়োগকর্তা। কিন্তু ধাপে ধাপে বৈধতাকরণ সম্পন্ন করতে গিয়ে দেখা যায় সরকারের শর্তাবলীতে শ্রমিক নিয়োগের যে যোগ্যতা ও সামর্থ্য থাকা দরকার একটি কোম্পানির মালিকের সেটা তাদের নেই। শুধুমাত্র টাকার লোভে শ্রমিক বৈধকরণের কোম্পানি খুলে বসে আছে। সরকার ইনভেস্টিগেশন করে দেখে এরা প্রতারক। এদের নির্দিষ্ট কোনো অফিসই নেই, শ্রমিকদের বেতন দেয়ার মতো পর্যাপ্ত ব্যাংক স্টেটমেন্ট নেই। তখন সরকার তাদের কোম্পানির অধীনে শ্রমিক বৈধ করার অনুমোদন দেয়নি। পরে যারা এদের কাছে বৈধ হওয়ার জন্য টাকা ও পাসপোর্ট জমা দিয়েছিলেন তারা এরপরে এগুলো আর ফেরতও পায়নি। পরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে এই প্রতারক নিয়োগকর্তাগণ হলেন বেশির ভাগই বাংলাদেশি যারা বাংলাদেশি হয়েও আরেক বাংলাদেশির সর্বনাশ করেছেন। শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের আয়ের লোভে মালয়েশিয়ান মেয়েকে বিয়ে করেন। তখন মালয়েশিয়ান মেয়ের নামে কোম্পানি খুলে এই কোম্পানিতে শত শত প্রবাসীকে নিয়োগ দেয়ার নামে শত শত প্রবাসীর কাছ থেকে টাকা ও পাসপোর্ট জমা নিয়েছেন। পরে ইমিগ্রেশনের অনুসন্ধানে জানা যায় এসব কোম্পানি ভুয়া। এমনকি তাদের একটি অফিস পর্যন্ত নেই। ব্যাংকে কোম্পানির নামে যে রিজার্ভ থাকার কথা সেটাও নেই। এসব ভুয়া কোম্পানি সরকারের অনুমোদন না পাওয়ায় প্রবাসীরা সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছিল। প্রবাসীরা তো বৈধ হতে পারেননি। এমনকি যাদের কাছে লাখ লাখ টাকাসহ পাসপোর্ট জমা দিয়েছিলেন সেগুলোও ফেরত পাননি। সুতরাং আবারো কলিং ভিসায় কর্মীদের মালয়েশিয়ায় আসার আগে উপরোক্ত তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে এর ফাঁদে পা দেয়া থেকে বিরত থাকাই উত্তম। নইলে বৈধ হয়েও অবৈধ হয়ে নিপীড়িত প্রবাসীর ঢল কখনোই থামবে না।
যেসব কারণে প্রবাসীরা অবৈধতার ফাঁদে পা দেয় বা অবৈধ হতে বাধ্য হয় এসব সমস্যার সমাধান না করা হলে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। কিন্তু কোনো পক্ষই এসব সমস্যা সমাধানে আন্তরিক বলে মনে হচ্ছে না। অবৈধ হয়ে জেলে গেলে এখানে সরকার ও দূতাবাসের কিছুই করার থাকে না। তখন এক প্রকার অসহায়। কারণ মালয়েশিয়ায় গিয়ে অবৈধ হয়ে ধরা পড়লে তখন মালয়েশিয়ার প্রচলিত আইনে জেল জরিমানা হয়। এখানে দূতাবাসের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। সে কোন দেশের অভিবাসী সেটা দেখে বিচার করা হয় না। স্টুডেন্ট ও ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে জেনেশুনে অবৈধ হয়ে গেলেন তাদের ব্যাপারে না বললেও যে সমস্ত কর্মীদেরকে বাধ্য করা হয়েছে বা বাধ্য হয়েছে অবৈধ হয়ে জেলে যেতে তাদের ব্যাপারে কিছু বলতেই হয়।
প্রথমেই বলতে হয় ২০১৯ এর আগের সেই কলিং ভিসার ভিলেন বাংলাদেশি ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেটকে নিয়ে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে লাখ টাকার নিচে খরচায় শ্রমিক প্রেরণের চুক্তি হলেও এই ১০ সিন্ডিকেট প্রত্যেক কর্মীর গলায় পাড়া দিয়ে আদায় করেছে সাড়ে তিন থেকে ৪ লাখ টাকা। আর এই টাকা একজন কর্মীর সংগ্রহ করতে গরু,ছাগল,জায়গা-জমি বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে গেছে। পিছনে দেশে রেখে গেছে ঋণের বোঝা।
মালয়েশিয়ায় পৌঁছে গিয়ে জানা গেলো বেসিক বেতন সব সেক্টরে কর্মীদের গড়ে মাত্র মাসিক ১ হাজার রিংগিত। যা বাংলাদেশি টাকায় ২০ হাজার টাকা। ১২ ঘণ্টার বেশি ১৬ ঘণ্টা কাজ করলে বড়জোড় ১৫০০ রিংগিত পাওয়া যায়। কিন্তু এই রোজগারে একজন প্রবাসীর থাকা, খাওয়া, বছরে বছরে ভিসা রিনিউ, অন্যন্যা খরচের পর মাসে ১০ হাজার টাকাও বাড়িতে পাঠাতে পারে না। আর যদিও ১০ হাজার টাকা প্রতিমাসে জমাতে পারে তাহলে সে যে ৪ লাখ টাকা খরচ করে এখানে এসেছে এটা তুলতে প্রয়োজন ৪০টি মাস বা সাড়ে তিন বছর। তারপর চিন্তা করতে হবে তার ভবিষ্যতে কি দিয়ে কীভাবে গড়বে। হতাশা আর অনিশ্চয়তায় এক সময় কারও পরামর্শে কিংবা নিজে নিজেই কোম্পানি ছেড়ে পালিয়ে যায় অন্য কোনো কোম্পানিতে বেশি বেশি টাকা বেতন পাওয়ার আশায়। সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। এদিকে তার মালিক তাকে খুঁজে না পেয়ে ব্ল্যাক লিস্টেট করে ইমিগ্রেশনে গিয়ে। আর মালয়েশিয়ায় যারা ব্ল্যাক লিস্টেট হয় তারা কোনো সময়ই বৈধ হতে পারে না। তাদের ঠিকানা হয় জেলে অথবা সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার। এই ১০ সিন্ডিকেটের কুকীর্তি এক সময় ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর ২০১৯ এর সেপ্টেম্বরে দেশটির আধুনিক রূপকার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ১০ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কলিং ভিসার কার্যক্রম সম্পূর্ণ স্থগিত করে দেন। আর বলেন, আমার দেশে শ্রমিক আসবে কাজ করতে মাঝখানে একটি চক্র শ্রমিকদের জিম্মি করে মোটা অংকের আয় করছে আমার কাছে এর প্রমাণ আছে। যদিও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কেউ বা প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী এই সিন্ডিকেটের কারণে যে মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার হারিয়েছে এটা স্বীকার করেন না।
তৃতীয় যে কারণে প্রবাসীরা অবৈধ হয়েছে সেটা হলো এক ধরনের ভয়াণক প্রতারণা ২০১৬ এর রিহায়ারিং এর সময়কালে। এ সময় লাখ লাখ প্রবাসী বৈধতা গ্রহণের জন্য রিক্রুটিং সংস্থা ইমাম, মাইইজি ও বিভিন্ন নিয়োগকর্তার মাধ্যমে পাসপোর্ট ও টাকা পয়সা জমা দিয়েও প্রতারিত হয়েছেন বৈধতা পাননি। এর মূল কারণ ছিল সংশ্লিষ্ট কোম্পানির মালিক বা নিয়োগ কর্তার গাফিলতি ও তাদের অযোগ্যতা। প্রথমে শ্রমিকদের কাছ থেকে পাসপোর্ট টাকা অগ্রিম নিয়ে নিয়েছেন নিয়োগকর্তা। কিন্তু ধাপে ধাপে বৈধতাকরণ সম্পন্ন করতে গিয়ে দেখা যায় সরকারের শর্তাবলীতে শ্রমিক নিয়োগের যে যোগ্যতা ও সামর্থ্য থাকা দরকার একটি কোম্পানির মালিকের সেটা তাদের নেই। শুধুমাত্র টাকার লোভে শ্রমিক বৈধকরণের কোম্পানি খুলে বসে আছে। সরকার ইনভেস্টিগেশন করে দেখে এরা প্রতারক। এদের নির্দিষ্ট কোনো অফিসই নেই, শ্রমিকদের বেতন দেয়ার মতো পর্যাপ্ত ব্যাংক স্টেটমেন্ট নেই। তখন সরকার তাদের কোম্পানির অধীনে শ্রমিক বৈধ করার অনুমোদন দেয়নি। পরে যারা এদের কাছে বৈধ হওয়ার জন্য টাকা ও পাসপোর্ট জমা দিয়েছিলেন তারা এরপরে এগুলো আর ফেরতও পায়নি। পরে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে এই প্রতারক নিয়োগকর্তাগণ হলেন বেশির ভাগই বাংলাদেশি যারা বাংলাদেশি হয়েও আরেক বাংলাদেশির সর্বনাশ করেছেন। শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের আয়ের লোভে মালয়েশিয়ান মেয়েকে বিয়ে করেন। তখন মালয়েশিয়ান মেয়ের নামে কোম্পানি খুলে এই কোম্পানিতে শত শত প্রবাসীকে নিয়োগ দেয়ার নামে শত শত প্রবাসীর কাছ থেকে টাকা ও পাসপোর্ট জমা নিয়েছেন। পরে ইমিগ্রেশনের অনুসন্ধানে জানা যায় এসব কোম্পানি ভুয়া। এমনকি তাদের একটি অফিস পর্যন্ত নেই। ব্যাংকে কোম্পানির নামে যে রিজার্ভ থাকার কথা সেটাও নেই। এসব ভুয়া কোম্পানি সরকারের অনুমোদন না পাওয়ায় প্রবাসীরা সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছিল। প্রবাসীরা তো বৈধ হতে পারেননি। এমনকি যাদের কাছে লাখ লাখ টাকাসহ পাসপোর্ট জমা দিয়েছিলেন সেগুলোও ফেরত পাননি। সুতরাং আবারো কলিং ভিসায় কর্মীদের মালয়েশিয়ায় আসার আগে উপরোক্ত তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে এর ফাঁদে পা দেয়া থেকে বিরত থাকাই উত্তম। নইলে বৈধ হয়েও অবৈধ হয়ে নিপীড়িত প্রবাসীর ঢল কখনোই থামবে না।