প্রথম পাতা

ডিজেলের দাম কমানোর দাবি সিপিডি’র

স্টাফ রিপোর্টার

২৪ ডিসেম্বর ২০২১, শুক্রবার, ৯:৩৩ অপরাহ্ন

ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে। বাড়ছে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়। তাই আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে ডিজেলের দাম কমানোর দাবি জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, করোনা মহামারির সময় মানুষের আয় কমে গেছে। অনেক মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও কমে গেছে। এমন সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়া বড় উদ্বেগের বিষয়। কারণ এতে দেশের নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা হুমকির মুখে পড়েছে। গতকাল ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে স্বাধীন পর্যালোচনার আওতায় অর্থনীতি ২০২১-২০২২, প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে সিপিডি।
সংস্থাটি বলছে, চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৪ শতাংশ এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। যা বাস্তবতার সঙ্গে বিরাট ফারাক। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন। এতে আমদানি, রপ্তানি, রাজস্ব পরিস্থিতি, লেনদেনের ভারসাম্য, সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ, পোশাক খাতের অবস্থা, শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি ও বাস্তবায়নাধীন প্রণোদনা প্যাকেজসহ অর্থনীতির নানা বিষয় তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়।
মূল প্রবন্ধে ফাহমিদা খাতুন বলেন, উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি জীবনযাত্রার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে সেটা একটি বিষয়, আরেকটি বিষয় হচ্ছে অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থায় সুশাসনের অভাব। যার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে।  আমরা মনে করি অতিমারির সময়ে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।
সিপিডি’র মূল প্রবন্ধে বলা হয়, কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর মতে, অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। এর ফলে গৃহস্থালির ব্যয়ের উপর উচ্চ মাত্রার বোঝা পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, চালের দাম বৃদ্ধির ফলে ২০২০ সালে গৃহস্থালির ব্যয় ১৯.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে; মসলা জাতীয় পণ্যের ব্যয় বেড়েছে ৬২ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে, ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতির চাপ নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য ন্যূনতম জীবনযাত্রার মান বজায় রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুদের পুষ্টির ঘাটতিকে আরও ধাক্কা দিতে পারে। মূল্যস্ফীতি দারিদ্র্যের স্তরের ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে বলে মনে করে সিপিডি।
চালের দাম নিয়ে সিপিডি জানায়, চালের উৎপাদন এবং প্রকৃত তথ্য নির্ধারণ এখন সময়ের দাবি। কারণ প্রকৃত তথ্য না থাকায় চালের বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। বোরো মৌসুমের আগেই তেলের দাম সমন্বয় করা না হলে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানায় সিপিডি।
সিপিডি বলছে, পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার টেকসই হচ্ছে না। বর্তমান অর্থনৈতিক সূচকগুলো তাই নির্দেশ করে। কোভিড-১৯ মহামারির মুখে গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা একটি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে মহামারির নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও পরবর্তীতে সামষ্টিক অর্থনীতিতে কিছু ভালো লক্ষণ দেখা গেছে বলে জানায় সিপিডি। সংস্থাটি বলছে, চলতি অর্থবছর শেষে বেশ কয়েকটি সূচকে পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তাই সামষ্টিক অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জিংটা কম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, নীতিনির্ধারকদের এই সত্য মেনে নিতে হবে যে, এই সময়ে অর্থনীতিতে কাঙ্ক্ষিত পুনরুদ্ধারের সময় সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা চাপের মধ্যে রয়েছে।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ খুবই কষ্টসাধ্য উল্লেখ করে সিপিডি বলছে, এখন পর্যন্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে রাজস্ব আহরণ করছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে বাকি সময়ে ৩০ শতাংশ হারে রাজস্ব আদায় করতে হবে। এটা খুবই কষ্টকর। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে শুল্ক ও ভ্যাট মিলিয়ে পরোক্ষ করের ক্ষেত্রে ৩২ শতাংশের বেশি হারে আদায় করতে হবে। অন্যদিকে আয়করের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ২৭ শতাংশ হারে কর আসতে হবে। রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে যে পদক্ষেপ রয়েছে, সেখানে কর আহরণ বৃদ্ধি করার খুব বেশি সুযোগ রয়েছে তেমনটা নয়। রাজস্ব আহরণে যদি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হয়, তাহলে বাজেট বাস্তবায়ন বড় হুমকির মুখে পড়ে যাবে।
সিপিডি’র মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গত বছরের তুলনায় বেশি হলে কোভিড পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় কম। বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতের বাস্তবায়ন মাত্র ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এমনিতেই এডিপি বাস্তবায়ন কম হয় সেখানে অতিমারির সময় স্বাস্থ্য খাতের এমন এডিপি বাস্তবায়ন খুবই নগণ্য। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে যদিও আর্থিক ভারসাম্যে একটা উদ্বৃত্ত ছিল, কিন্তু সামগ্রিক ব্যালেন্সে নেতিবাচক ভারসাম্য লক্ষ্য করছি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর একটা চাপ পড়ছে।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি’র সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা জানি সারের জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি হিসেবে রাখা হয়েছে। কিন্তু এখন যেভাবে দাম বেড়েছে, তাতে ২২ হাজার থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকার মতো প্রয়োজন হবে। কীভাবে সমন্বয় করবে সরকার? আবার গ্যাসের দামও বাড়ছে। যেভাবে রাজস্ব আহরণ হচ্ছে, তা দিয়ে মূল্য সমন্বয় করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বিদেশি বড় অর্থায়ন আসছে, এটা সত্য। তবে এটা কিন্তু বাজেটের সহায়তা নয়, প্রকল্পের সহায়তা। যেহেতু এটা বাজেটের সহায়তা নয়, তাই এটা দিয়ে ভর্তুকি সমন্বয় সম্ভব নয়।
সিপিডি জানায়, অর্থবছরের শুরুতে বাংলাদেশের বাহ্যিক খাতের পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে দু’টি স্বতন্ত্র প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। একদিকে, ইতিবাচকভাবে রপ্তানি আয় এবং আমদানি উভয়ই প্রথম পাঁচ মাসে শক্তিশালী বৃদ্ধির হার দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়াও, মহামারি পরবর্তী অভিবাসী শ্রমিকরা আবারো বিপুল সংখ্যক বিদেশি চাকরির বাজারে যোগ দিচ্ছেন। এগুলো উৎপাদন, বিনিয়োগ, রপ্তানি, শ্রমবাজার এবং মানুষের উপার্জনের সুযোগগুলোতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, একটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তা হলো- ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত, দেশের বাণিজ্য ভারসাম্যের ঘাটতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। আমদানি ব্যয় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধির সঙ্গে (২০২২-এর প্রথম চার মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির তুলনামূলকভাবে নিম্ন স্তরের এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের নেতিবাচক বৃদ্ধির পটভূমিতে) মার্কিন ডলারের ফলশ্রুতিতে ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন বন্ধ করতে হবে। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আমদানি মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে প্রবল হয়েছে। ফলস্বরূপ, মুদ্রাস্ফীতি ব্যবস্থাপনা এবং বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার কার্যকারিতাকে সংজ্ঞায়িত করবে যখন অর্থনীতির নতুন বছর ২০২২ সালের জন্য প্রস্তুত হবে। এগুলো বাহ্যিক সেক্টরের কিছু প্রধান প্রবণতা। যা উদ্বেগজনক এবং ২০২২- এর প্রথমার্ধে সেক্টরের কর্মক্ষমতার জন্য চ্যালেঞ্জ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status