প্রথম পাতা
মোমেনের সঙ্গে ফোনালাপ
গণতন্ত্র ও মানবাধিকারে জোর দিলেন ব্লিনকেন
কূটনৈতিক রিপোর্টার
২০২১-১২-১৭
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন ‘গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার সমুন্নত’ রাখার বার্তাই স্পষ্ট করেছেন। ঢাকা এবং ওয়াশিংটন উভয়ের তরফে এটা নিশ্চিত করা হয়েছে। রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী মোমেন গতকাল বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার অত্যন্ত উষ্ণ আলোচনা হয়েছে। তিনি আমাকে বলেন, বাইডেন প্রশাসন মানবাধিকার ও গণতন্ত্রে জোর দিচ্ছে। আমি বললাম, আমরাও গণতান্ত্রিক দেশ, আমরাও মানবাধিকারে জোর দিয়েছি। এসব বিষয়ে সারা দুনিয়াতে আমাদের একটি নাম আছে এবং এ নিয়ে আমরা সোচ্চার। মার্কিন মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি আমাকে বলেন, এবারের র্যাবের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা এসেছে, সেটি অনেকটা মার্কিন আইনপ্রণেতাদের কারণে হয়েছে। তবে তিনি (মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) খোলাসা করেই বলেন, এ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা হবে। গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের উন্নয়নে উভয় দেশের কথা বলা এবং কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে বলে তিনি আমাকে জানান। জবাবে আমিও বলেছি অবশ্য দুই দেশের মধ্যকার সংলাপের যেসব ফোরাম রয়েছে সেখানে আমরা কথা বলবো। আমরা নিজেদের মধ্যে যেকোনো ইস্যুতে টেলিফোন আলাপেও সম্মত হয়েছি।
ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দের চলমান ঢাকা সফরের আপডেট জানাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেখানে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রাসঙ্গিকভাবে আসে একদিন আগের মোমেন-ব্লিনকেন ফোনালাপের বিষয়টি।
ফোনালাপে গুরুত্ব পেয়েছে মানবাধিকার- স্টেট ডিপার্টমেন্ট: এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি জে ব্লিনকেনের টেলিফোন আলাপে দুই নেতাই মানবাধিকারের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ সময় তারা দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন। মুখপাত্র বলেন, সেই আলাপে এ উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্বের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
সাংবাদিকের প্রশ্নে হাসির রোল, মন্ত্রীর জবাব: এদিকে কোন প্রেক্ষাপটে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি জে ব্লিনকেন মন্ত্রী মোমেনকে ফোন করলেন জানতে চেয়ে এক সাংবাদিক বলেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী আমার প্রশ্ন হচ্ছে- মার্কিন মন্ত্রী একান্তভাবে শুভেচ্ছা জানাতে ফোন করেছিলেন? নাকি নিষেধাজ্ঞা জারির পর আমরা যেভাবে রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছি তা দেখে বিচলিত হয়ে তিনি তড়িঘড়ি ফোন করলেন? প্রশ্ন শেষ হতে না হতেই সেখানে মৃদু হাসির রোল পড়ে। তখন পরিস্থিতি অনেকটা সামলে নিয়ে (কিছু সময় নিয়ে) মন্ত্রী মোমেন বলেন, তার সঙ্গে আগেও আমার আলাপ হয়েছে। তাছাড়া তিনি মন্ত্রী হওয়ার পর আমিই প্রথম তাকে শুভেচ্ছা জানাই ওয়াশিংটনে। আমাদের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে। এ সময় মন্ত্রী টেলিফোন আলাপের শিডিউল নিয়ে জটিলতার কথাও জানান। বলেন, আমরা আলাপের শিডিউল ঠিক করতে পারছিলাম না। উনি একটি টাইম দিলেন, কিন্তু ওই সময়ে আমার ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ। তখন আমরা একটি সময় দিলাম। কিন্তু সেই সময় উনার আরেকটি দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছিলো। পরে (বুধবার) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে তিনি আমাকে ফোন করেন। তখন আমি রাষ্ট্রপতির নৈশভোজে অংশ গ্রহণের জন্য বঙ্গভবনে ছিলাম। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে অনেকক্ষণ আলোচনা হয় জানিয়ে মন্ত্রী মোমেন বলেন, আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে তিনি অভিনন্দন জানিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অ্যান্থনি ব্লিনকেন এ-ও বলেছেন, আগামী বসন্তে আপনি ওয়াশিংটনে আসবেন আশা করি এবং সেখানে (সেই সময়ে) আমরা আলোচনা করবো।
যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন: ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে খোদ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপে প্রশ্ন তুলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। এমনটাই জানিয়েছেন বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে। মন্ত্রী মোমেন বলেন, আমি তাকে বলেছি, দেখেন স্মরণ রাখা উচিত যে, র্যাব বাংলাদেশে অধিকারহারা মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত করে তারাই মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এমন অভিযোগ তুলে আপনারা তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। অথচ আপনার দেশে (যুক্তরাষ্ট্রে) প্রতি বছর ৬ লাখ লোক মিসিং হয়। প্রতি বছর মার্কিন পুলিশ হাজার খানেক লোককে মেরে ফেলে। আপনারা এটাকে বলেন লাইন অব ডিউটি। কিন্তু আমাদের এখানে মারা গেলে বলেন এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং বা বিচার বহির্ভূত হত্যা! র্যাবের সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের জনগণ পছন্দ করেনি মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অ্যান্থনি ব্লিনকেনের কাছে তুলে ধরেছি। তিনি এ নিয়ে নিকট ভবিষ্যতে আলোচনায় রাজি হয়েছেন। এ নিয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমাদের ফোনের বেশির ভাগ অংশজুড়েই ছিল নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি। এ সময় সাংবাদিকরা জানতে চান, র্যাবের নিষেধাজ্ঞার প্রত্যাহারের দাবি বাংলাদেশ জানিয়েছে কিনা? জবাবে মন্ত্রী মোমেন বলেন, ফোনালাপে আমি প্রত্যাহারের কথা বলিনি, উনিও তুলেননি। এ নিয়ে ভবিষ্যতে আমাদের আরও আলোচনা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছে। আমি বলেছে, আমাদের সঙ্গে আপনাদের ৫০ বছরের সম্পর্ক, নিয়মিত আমাদের মধ্যে কথাবার্তা হচ্ছে। অথচ কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই আপনারা নিষেধাজ্ঞা দিলেন, যা আমাদের দেশবাসী না গ্রহণ করেছে, না পছন্দ করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে। তাদের মৌলিক নীতি এটি। যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল সেই টার্গেট বাস্তবায়নের পথে সহায়ক হয় এমন কর্ম অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গেই করছে র্যাব। এ কারণে তারা প্রশংসিত হওয়ার কথা, নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ার কথা নয়। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞাকে অত্যন্ত দুঃখজনক সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, সন্ত্রাস দমনে র্যাব অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল ইস্যু মাদক পাচার বন্ধে র্যাব সাহায্য করছে। র্যাব দুর্নীতিপরায়ণ নয়। টাকা-পয়সা দিয়ে র্যাবের অবস্থা পরিবর্তন করা যায় না। ফলে তারা বাংলাদেশের জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সব সিদ্ধান্ত সঠিক নয় মন্তব্য করে মন্ত্রী বরাবরের মতো বলেন, নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না। উল্লেখ্য, গত ১০ই ডিসেম্বর মার্কিন অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় র্যাব এবং র্যাবের বর্তমান ও সাবেক সাতজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর বুধবার সন্ধ্যায়ই প্রথম কথা হলো দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে। প্রায় ৩০ মিনিটের আলোচনায় আগামী বছর সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে দুই দেশের সহযোগিতা এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে তারা একমত হন। এ সময় র্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গটি তোলেন মন্ত্রী মোমেন। গত ১০ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে র্যাব এবং এই বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সাতজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে তাদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদও রয়েছেন, যিনি এখন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং র্যাব ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা ব্যাপক আলোচনা তৈরি করে।
ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দের চলমান ঢাকা সফরের আপডেট জানাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেখানে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রাসঙ্গিকভাবে আসে একদিন আগের মোমেন-ব্লিনকেন ফোনালাপের বিষয়টি।
ফোনালাপে গুরুত্ব পেয়েছে মানবাধিকার- স্টেট ডিপার্টমেন্ট: এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি জে ব্লিনকেনের টেলিফোন আলাপে দুই নেতাই মানবাধিকারের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ সময় তারা দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন। মুখপাত্র বলেন, সেই আলাপে এ উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্বের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
সাংবাদিকের প্রশ্নে হাসির রোল, মন্ত্রীর জবাব: এদিকে কোন প্রেক্ষাপটে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি জে ব্লিনকেন মন্ত্রী মোমেনকে ফোন করলেন জানতে চেয়ে এক সাংবাদিক বলেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী আমার প্রশ্ন হচ্ছে- মার্কিন মন্ত্রী একান্তভাবে শুভেচ্ছা জানাতে ফোন করেছিলেন? নাকি নিষেধাজ্ঞা জারির পর আমরা যেভাবে রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছি তা দেখে বিচলিত হয়ে তিনি তড়িঘড়ি ফোন করলেন? প্রশ্ন শেষ হতে না হতেই সেখানে মৃদু হাসির রোল পড়ে। তখন পরিস্থিতি অনেকটা সামলে নিয়ে (কিছু সময় নিয়ে) মন্ত্রী মোমেন বলেন, তার সঙ্গে আগেও আমার আলাপ হয়েছে। তাছাড়া তিনি মন্ত্রী হওয়ার পর আমিই প্রথম তাকে শুভেচ্ছা জানাই ওয়াশিংটনে। আমাদের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে। এ সময় মন্ত্রী টেলিফোন আলাপের শিডিউল নিয়ে জটিলতার কথাও জানান। বলেন, আমরা আলাপের শিডিউল ঠিক করতে পারছিলাম না। উনি একটি টাইম দিলেন, কিন্তু ওই সময়ে আমার ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ। তখন আমরা একটি সময় দিলাম। কিন্তু সেই সময় উনার আরেকটি দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছিলো। পরে (বুধবার) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে তিনি আমাকে ফোন করেন। তখন আমি রাষ্ট্রপতির নৈশভোজে অংশ গ্রহণের জন্য বঙ্গভবনে ছিলাম। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে অনেকক্ষণ আলোচনা হয় জানিয়ে মন্ত্রী মোমেন বলেন, আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে তিনি অভিনন্দন জানিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অ্যান্থনি ব্লিনকেন এ-ও বলেছেন, আগামী বসন্তে আপনি ওয়াশিংটনে আসবেন আশা করি এবং সেখানে (সেই সময়ে) আমরা আলোচনা করবো।
যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন: ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে খোদ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপে প্রশ্ন তুলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। এমনটাই জানিয়েছেন বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে। মন্ত্রী মোমেন বলেন, আমি তাকে বলেছি, দেখেন স্মরণ রাখা উচিত যে, র্যাব বাংলাদেশে অধিকারহারা মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত করে তারাই মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এমন অভিযোগ তুলে আপনারা তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। অথচ আপনার দেশে (যুক্তরাষ্ট্রে) প্রতি বছর ৬ লাখ লোক মিসিং হয়। প্রতি বছর মার্কিন পুলিশ হাজার খানেক লোককে মেরে ফেলে। আপনারা এটাকে বলেন লাইন অব ডিউটি। কিন্তু আমাদের এখানে মারা গেলে বলেন এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং বা বিচার বহির্ভূত হত্যা! র্যাবের সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের জনগণ পছন্দ করেনি মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অ্যান্থনি ব্লিনকেনের কাছে তুলে ধরেছি। তিনি এ নিয়ে নিকট ভবিষ্যতে আলোচনায় রাজি হয়েছেন। এ নিয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমাদের ফোনের বেশির ভাগ অংশজুড়েই ছিল নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি। এ সময় সাংবাদিকরা জানতে চান, র্যাবের নিষেধাজ্ঞার প্রত্যাহারের দাবি বাংলাদেশ জানিয়েছে কিনা? জবাবে মন্ত্রী মোমেন বলেন, ফোনালাপে আমি প্রত্যাহারের কথা বলিনি, উনিও তুলেননি। এ নিয়ে ভবিষ্যতে আমাদের আরও আলোচনা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছে। আমি বলেছে, আমাদের সঙ্গে আপনাদের ৫০ বছরের সম্পর্ক, নিয়মিত আমাদের মধ্যে কথাবার্তা হচ্ছে। অথচ কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই আপনারা নিষেধাজ্ঞা দিলেন, যা আমাদের দেশবাসী না গ্রহণ করেছে, না পছন্দ করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে। তাদের মৌলিক নীতি এটি। যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল সেই টার্গেট বাস্তবায়নের পথে সহায়ক হয় এমন কর্ম অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গেই করছে র্যাব। এ কারণে তারা প্রশংসিত হওয়ার কথা, নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ার কথা নয়। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞাকে অত্যন্ত দুঃখজনক সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, সন্ত্রাস দমনে র্যাব অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল ইস্যু মাদক পাচার বন্ধে র্যাব সাহায্য করছে। র্যাব দুর্নীতিপরায়ণ নয়। টাকা-পয়সা দিয়ে র্যাবের অবস্থা পরিবর্তন করা যায় না। ফলে তারা বাংলাদেশের জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সব সিদ্ধান্ত সঠিক নয় মন্তব্য করে মন্ত্রী বরাবরের মতো বলেন, নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না। উল্লেখ্য, গত ১০ই ডিসেম্বর মার্কিন অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় র্যাব এবং র্যাবের বর্তমান ও সাবেক সাতজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর বুধবার সন্ধ্যায়ই প্রথম কথা হলো দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে। প্রায় ৩০ মিনিটের আলোচনায় আগামী বছর সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে দুই দেশের সহযোগিতা এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে তারা একমত হন। এ সময় র্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গটি তোলেন মন্ত্রী মোমেন। গত ১০ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে র্যাব এবং এই বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সাতজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে তাদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদও রয়েছেন, যিনি এখন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং র্যাব ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা ব্যাপক আলোচনা তৈরি করে।