চলতে ফিরতে
একজন চা দোকানি এবং ভিজিটিং কার্ড
ইমরান আলী
১৫ ডিসেম্বর ২০২১, বুধবার, ১২:৫২ অপরাহ্ন
শুধু জেলায় নয় বরং আমাদের পাশের ইউনিয়নে তার বাড়ি।
আমার গ্রামের দু’ একজন লোককে তিনি চেনেন। চিনি আমিও তার গ্রামের লোকজনকে।
বললেন- ভাই বসেন, বসেন। যদিও তার দোকানে বসার জায়গা নাই। ফুটপাতে বেচারা নিজেই দাঁড়িয়ে চা বিক্রি করেন।
খেয়াল করে দেখলাম, আমাকে যে কাপে চা দিলেন সে কাপটা অনেকবার ধুয়ে নিলেন। চায়ে দুধের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলেন। প্লাস্টিকের বয়াম হাতড়ে তার কাছে যেটা বেশি ভাল মনে হয়েছে সেই বিস্কিট বের করে দিলেন।
আরে করেন কি, করেন কি! বিস্কিট লাগবে না।
বললেন, ভাই একই থানার মানুষ আমরা। আপনি আমার মেহমান। সাধ্য থাকলে আরও কিছু দিতাম।
বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে চলে এলাম। চায়ের দাম নেননি অনুরোধের পরও।
একজন চা বিক্রেতা। তার আর ভাল চা দিয়ে আপ্যায়ন করা ছাড়া কি এমন সাধ্য আছে! কিন্তু এই ভালোবাসাটাই তো অনেক বড়। তিনি তার সর্বোচ্চটা দিয়েই আমাকে সম্মানিত করেছেন। চলে আসার সময় বললেন, ভাই এই এলাকায় যেদিন আসবেন আমার দোকানে পাক দিয়ে যাবেন কিন্তু।
হ্যাঁ। আমি কোনোদিন যদি গুলিস্তান যাই তার সঙ্গে দেখা না করে আসবো না। কারণ তিনি আমার স্বদেশী, স্বজনও বলা যায়। রক্তের সম্পর্ক না থাকুক। আপনের মতোই টান তৈরি হলো।
এর ব্যতিক্রমও হয়। একদিন এলাকার এক ছোটভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলো আশকোনা হজ্ব ক্যাম্পে। পরনে তার স্যুট, গলায় টাই। সঙ্গে তার কলিগেরা বুঝি ছিল।
বয়সে আমার ছোট হলেও দেখা হওয়াতেই ‘তুমি’ সম্বোধন করে বলল- আরে কেমন আছ? বললাম- হ্যাঁ, ভাল আছি ভাই সাহেব।
খেয়াল করলাম অন্যদের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিতে তার চরম আপত্তি কাজ করছে। অথচ আমরা গ্রামে কত মিলেমিশে থেকেছি।
তার আপত্তির কারণ আমার পরনের পোশাক খুব একটা গর্জিয়াস নয়। সে কথা না বাড়িয়ে আমার হাতে তার ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বলল-
এটা আমার অফিসিয়াল নম্বর। কল দিয়ে অফিসে এসো। গল্প হবে। এই শেষ কথা।
মুচকি হেসে আমি ভিজিটিং কার্ডটা পকেটে রেখে দিলাম। কারণ রাস্তাঘাটে মুড়িমাখানো খাওয়ার সময় এই কার্ডটা চামচ হিসেবে কিংবা বাসের সিটের ময়লা পরিস্কারে ব্যবহার করা যাবে। এমন ‘দামি’ লোকের কার্ড ব্যবহার না করলে কেমন হয়...