বাংলারজমিন

সাগর মোহনায় ট্রলার ডুবিতে চরফ্যাসনে নিখোঁজ ২০ জেলে পরিবারে আহাজারি

চরফ্যাসন (ভোলা) প্রতিনিধি

৮ ডিসেম্বর ২০২১, বুধবার, ৯:১৮ অপরাহ্ন

সাগর মোহনায় ট্রলিং জাহাজের ধাক্কায় ‘মা শামসুন নাহার’ নামে ট্রলারের ২০ জেলে নিখোঁজের ২দিনেও উদ্ধার হয়নি কেউ। ভোলার চরফ্যাসনে নিখোঁজ জেলে পরিবারের বাড়ি বাড়ি চলছে শোকের মাতম। উদ্ধার তৎপরতা নিয়েও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে স্বজনরা। জীবিত না পেলে অন্তত মরদেহটি ফেরত চান তারা। অপরদিকে প্রায় ৮ ঘণ্টা সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই করে জীবিত উদ্ধার হয়েছেন ওই ট্রলারের জেলে হাফেজ আহাম্মদ। তাকে পটুয়াখালীর মহিপুরের জেলেরা উদ্ধার করে। গত রোববার রাতে ডুবে যাওয়াদের উদ্ধার করতে কোস্টগার্ড ও স্বজনরা আলাদাভাবে অভিযান পরিচালনা করলেও নিখোঁজদের কোনো সন্ধান করতে পারেনি। গতকাল দুপুরে চরফ্যাসন উপজেলার আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নে উত্তর শিবা গ্রামে ট্রলার মালিক কামাল খন্দকারের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, নিখোঁজ জেলেদের আত্মীয়-স্বজনরা তার বাড়িতে ভিড় করছেন খবরের আশায়। কোনো উত্তর জানা নেই কামালের কাছে। কীভাবে উদ্ধার করবেন তার কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে দিশাহারা কামাল থেকে থেকেই জ্ঞান হারাচ্ছেন। পার্শ্ববর্তী ফারুক হাওলাদারের বাড়িতে গিয়েও দেখা যায় হৃদয় বিদারক দৃশ্য। ফারুক হাওলাদারের স্ত্রী সেতারা বেগম বিলাপ করতে করতে বারবার মূর্চা যাচ্ছেন। চেতনা ফিরে পাওয়ার পর আবার শুরু করেন গগণ বিদারী আর্তনাদ। সেতারা বেগম বিলাপ করে বলতে থাকেন, ‘আমারে কইছিল ধান কাইট্টা ঘরে উঠাইতে। সাগর থেকে আইয়া বদলার টাকা দিবো। আমি ধান কাইট্টা ঘরে উঠাইছি কিন্তু ঘরের আলো গাঙে ডুইব্যা রইছে। আল্লাহ তুমি জানের ভিক্ষা দেও। ছোড মাইয়্যা দুইডা লইয়া অহন আমি কি করমু গো আল্লাহ?’ মায়ের পাশে বসে বিলাপ করতে থাকে ফারুকের শিশু কন্যা শাকিরা (১০) ও শাবনুর (৮)। মাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায় বড় মেয়ে সায়েরাকে। ভাই নিখোঁজের খবরে চেতনা হারিয়ে ওই বাড়ির উঠানে পড়ে থাকতে দেখা যায় ফারুকের বৃদ্ধা বোন বকুল বেগমকে। তাকে সুস্থ করার কাজে ব্যস্ত বাড়ির অন্য স্বজনরা। ফারুকের বড়ির উত্তর পাশের নিখোঁজ মো. জাবেদের বাড়ি। ৪ মাসে আগে বিয়ে করা স্ত্রী রাশিদাকে ঘরে রেখে সাগরে যান জাবেদ। রোববার ট্রলার ডুবিতে অন্যদের সঙ্গে তিনিও নিখোঁজ আছেন। হাতের মেহেদীর রঙ শুকানের আগেই স্বামী হারানোর আশঙ্কায় নির্বাক তরুণী রাশিদা ঘরের দরজায় বসে বসে স্বামীর অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। জানা গেছে, নিখোঁজ ২০ জনের মধ্যে ৭ জনের বাড়িই আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নে। ফারুক হাওলাদার আর জাবেদের পরিবারের মতোই জসিম, খালেক, ইউসুফ, রফিক, মাকসুদের বাড়িতেও বিলাপ আর্তনাদ চলছে। নিখোঁজদের মধ্যে রসুলপুর ইউনিয়নের ৫ জন। তারা হলেন- শাহিন, দিন মোহাম্মদ, সুমন, নাগর মাঝি, মিজান। মানিকা ইউনিয়নে নিখোঁজ রয়েছেন বাচ্চু মুন্সি, নুরে আলম, আলামিন, হারুন, নুরুল ইসলম। নীলকলম ইউনিয়নে ট্রলার মাঝি বাচ্চু, আবুল বাশার ও দৌলতখানের ১ জন। সরজমিন গেলে ক্ষুব্ধ স্বজনরা অভিযোগ করেন, দুর্ঘটনার পর পর বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হলেও উদ্ধার তৎপরতায় সঠিকভাবে হয়নি। কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের স্টাফ অফিসার (অপারেসন্স) জানিয়েছেন, ঘটনার পরপরই কোস্টগার্ড উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। মঙ্গলবার সকালে চরফ্যাসন থেকে ২টি টিম ও চট্টগ্রাম থেকে একটি জাহাজ অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযান এখনো অব্যাহত আছে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে শামছুল মাঝি নিজ খরচে ২টি ফিসিং ট্রলার নিয়ে স্বজনদের খোঁজে দুর্ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে ঢালিরহাট ঘাট থেকে ছেড়ে গেছেন। নিখোঁজদের স্বজনদের সমবেদনা জানাতে এসে আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল এমরান প্রিন্স উদ্ধার অভিযান জোরদার করার দাবি জানান। চরফ্যাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল নোমান জানান, কোস্টগার্ডের একাধিক টিম উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে। বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status