বিশ্বজমিন

গ্রামীণ গবাদিপশুর ফার্মের ধুলোকণা সারাবে অ্যাজমা!

মানবজমিন ডেস্ক

৭ ডিসেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার, ১:৪৯ অপরাহ্ন

গ্রামীণ জনপদে গবাদিপশুর ফার্ম থেকে সৃষ্ট ধুলিকণায় মিলবে অ্যাজমার চিকিৎসা। বিজ্ঞানীরা এরই মধ্যে এ বিষয়ে প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছেন। ফলে তারা গবাদিপশুর ফার্ম থেকে সৃষ্ট ধুলিকণা নিয়ে গবেষণা করছেন। এর মধ্যে চারটি রাসায়নিক উপাদান খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কমপক্ষে একটি উপাদান আছে, যা অ্যাজমা ও এলার্জি সংশ্লিষ্ট রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। এ খবর দিয়েছে সিঙ্গাপুরের অনলাইন দ্য স্ট্রেইটস টাইমস।

বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা একটি বিষয় লক্ষ্য করে আসছেন। তা হলো যেসব শিশু বিভিন্ন ফার্মের কাছে পালিত হয়, তারা শহরে বড় হওয়া শিশুদের তুলনায় খুব কমই অ্যাজমা ও অন্যান্য এলার্জিং সংশ্লিষ্ট রোগ সৃষ্টির এলার্জেনের সংস্পর্শে আসে। পেনসিলভ্যানিয়া ও ওহাইর ফার্মিং এলাকায় বসবাসকারী ‘আমিশ’ নামের একটি ক্রিস্টান সম্প্রদায় তাদেরকে কৌতুহলী করে তোলে। গবেষকরা লক্ষ্য করলেন অন্যান্য ফার্ম এলাকায় বসবাসকারী শিশুদের তুলনা ওই দুটি রাজ্যের ওই সম্প্রদায়ের শিশুদের মধ্যে অ্যাজমায় আক্রান্তের হার সর্বনিম্ন। ফলে বিজ্ঞানীরা এখন মনে করছেন, এই ‘আমিশ’ শিশুরাই হতে পারে অ্যাজমা ও অন্যান্য এলার্জিসৃষ্ট রোগ প্রতিরোধের ক্লু। এই ক্লু ধরে আবিষ্কার হতে পারে এসব রোগের সুচিকিৎসা। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বছরের পর বছর ধরে এলার্জি এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশ্বজুড়ে শিশুদের মধ্যে কমপক্ষে ৩০ ভাগই এলার্জিতে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে শতকরা প্রায় ১০ ভাগের আছে অ্যাজমা এবং এলার্জিক রাইনিটিস। এলার্জিক রাইনিটিসে অনবরত নাক দিয়ে সর্দি ঝরতে থাকে। নাক বন্ধ থাকে। হাঁচি হয়। নাকের ভিতর চুলকায়। সিঙ্গাপুরে অ্যাজমার প্রভাবে স্বাস্থ্য ও অন্যান্য মিলে ১৯৯২ সালে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার ডলারের। স্থানীয় দুটি আলাদা গবেষণা অনুযায়ী, বর্তমানে এই খরচ দাঁড়াতে পারে ১৫০ কোটি ডলার।

‘আমিশ’ সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের একটি রীতি আছে ফার্মিং খাতে। তারা আধুনিক প্রযুক্তি পরিহার করে চলে। ২০১৬ সালে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, বাড়িতে যেসব ধুলোবালি আছে তা আমিশ সম্প্রদায়ের শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে উন্নত করেছে। এসব ধুলিকণায় আছে ফার্মে পালিত গরু এবং একই রকম বিভিন্ন পশুর মাইক্রোবস। আর লোকজনের বাসাও পশুদের ঘরের কাছাকাছি।

এই গবেষণাকে আরো একধাপ সামনে এগিয়ে নিয়েছেন সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির (এনটিইউ) বিজ্ঞানীরা। তারা ওইসব ধুলোকণার মধ্যে মূল্যবান রাসায়নিক উপাদান শনাক্ত করেছেন। এইসব উপাদান শিশুদের অ্যাজমা থেকে প্রতিরক্ষা করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। এনটিইউয়ের নানিয়াং এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ওয়াটার রিসার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. শ্যান স্নাইডার। তিনি ও তার টিম ওই ধুলোকণার মধ্যে চারটি রাসায়নিক উপাদান শনাক্ত করেছেন। মানব শরীরের ফুসফুসের কালচার পরীক্ষায় দেখা গেছে এর মধ্যে একটি উপাদান অ্যাজমা প্রতিরোধে কার্যকর। তবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফার্মের পশুদের মধ্যে এসব রাসায়নিক উপাদান নেই।

ড. শ্যান বলেছেন, দৃশ্যত গ্রামীণ এসব ফামারে পালিত পশুদের মধ্যে কোনো হতাশা নেই। উদ্বিগ্ন অথবা হতাশাজনক অবস্থায় থাকে যেসব পশু তাদের তুলনায় এসব খামারের পশুরা ভিন্ন ভিন্ন রাসায়নিক উপাদান তৈরি করে থাকে।

তার সহ গবেষক ড. মুরিসিয়াস মারকাস ডোস স্যান্তোস। তিনি বলেছেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফার্মে পালিত পশুদের বিভিন্ন রকম চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল বিভিন্ন রকম খাবার ও এন্টিবায়োটিক। এতে তাদের মাইক্রোবিয়োম পরিবর্তন হয়ে যায়। এতে পশুদের দেহে প্রোটিনের রাসায়নিক পরিবর্তনে নেতৃত্ব দেয়। ড. স্যান্তোষ বলেন, যখন পশুদের মলিকিউলার পরিবর্তন ঘটে, মানুষ যখন ওইসব পশুর সংস্পর্শে আসে বা তাদের কোনো প্রোডাক্ট ব্যবহার করে, তখন তা মানব শরীরকেও প্রভাবিত করে। এসব মলিকিউলার পরিবর্তন অ্যাজমা এবং এলার্জি প্রতিরোধ করতে পারে। এখন এসব রাসায়নিক উপাদান কিভাবে কার্যকর ওষুধ থেরাপিতে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা করছেন তারা। একই সঙ্গে অ্যাজমা ও এলার্জি সংক্রমণ প্রতিরোধে আরো রাসায়নিক উপাদান নিয়ে গবেষণা চলছে।

ড. স্যান্তোষ বলেন, বিশ্বজুড়ে অন্যান্য গ্রামীণ ফার্মগুলোতে এসব রাসায়নিক উপাদান আছে কিনা তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। এ জন্য তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকার অন্য ফার্মগুলো থেকে পরিবেশগত নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করবেন। এর আগে তারা এ গবেষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status