দেশ বিদেশ

২৭৫ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির দায়ে গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মামলা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

৭ ডিসেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:০৮ অপরাহ্ন

বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে ২৭৫ কোটি ৩২ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে রাজধানীর লালবাগের নাহিদ এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। একইসঙ্গে শুল্ক ও আয়কর বিষয়ে অপরাধের প্রমাণ পাওয়ায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলকে (সিআইসি) অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের মাধ্যমে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে জড়িত রাজধানীর লালবাগের নাহিদ এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে ২৭৫ কোটি টাকার বেশি ভ্যাট ফাঁকির মামলা করা হয়েছে। ভ্যাট আইনের পাশাপাশি কাস্টমস আইনের অপরাধ যথাযথভাবে তদন্ত ও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরকেও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভ্যাট গোয়েন্দার অনুসন্ধানে প্রাপ্ত ভ্যাট ফাঁকির সঙ্গে আয়কর ফাঁকির অভিযোগটি আরও গভীরভাবে তদন্ত ও ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলকে (সিআইসি) অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যদিকে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঢাকা বন্ড কমিশনারকেও অনুরোধ করা হয়েছে।
ভ্যাট গোয়েন্দা জানায়, রাজধানীর লালবাগের বকশী বাজারের অবস্থিত নাহিদ এন্টারপ্রাইজ, যার বিআইএন নম্বর-০০০৩৮১০৯২-০২০৪। প্রতিষ্ঠানটির মালিক আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভ্যাট গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করার পর ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময়ের ভ্যাট সংক্রান্ত দলিল চেয়ে কয়েকবার চিঠি পাঠায়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ কোনো নথিপত্র সরবরাহ না করে বারবার সময়ে চেয়ে কালক্ষেপণ করে আসছে। তদন্ত কাজে সহযোগিতা না করায় নাহিদ এন্টারপ্রাইজের কার্যালয়ে গত ১৭ই জুন ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তানভীর আহমেদের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ভ্যাট সংক্রান্ত বাণিজ্যিক দলিল জব্দ করা হয়।
প্রাপ্ত সব নথিপত্র যাচাই করে দেখা গেছে, মেসার্স নাহিদ এন্টারপ্রাইজ অন্য বন্ডেড প্রতিষ্ঠান থেকেও বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের মাধ্যমে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকি সংশ্লিষ্ট মানি লন্ডারিং অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সরকারের আর্থিক ক্ষতি করেছে। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত প্রায় পাঁচ বছরে প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করেছে ২৯১ কোটি ৮৯ লাখ ৬৬ টাকা। জব্দ করা নথিপত্র খতিয়ে দেখা গেছে, প্রকৃত বিক্রয়মূল্য ছিল ১ হাজার ৫৪০ কোটি ২৬ লাখ ৬৩ হাজার ২২ টাকা। যেখানে প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ৪৭ কোটি ৪৭ লাখ ১৯ হাজার ৯৫৪ টাকার প্রকৃত বিক্রয়মূল্য গোপন করেছে। যেখানে অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১৫৭ কোটি ১২ লাখ ৭ লাখ ৯৯৩ টাকা আদায়যোগ্য। মাসে ২ শতাংশ সুদ হিসাবে আরও ১১৮ কোটি ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ২৪২ টাকা প্রযোজ্য। সবমিলিয়ে মোট ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ ২৭৫ কোটি ৩২ লাখ ২ হাজার ২৩৫ টাকা। বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি হওয়ায় স্পষ্ট হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি নানা ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত হয়েছে। তদন্তে প্রতিষ্ঠানের দু’টি ব্যাংক একাউন্টে মোট ১ হাজার ৫৪০ কোটি ২৬ লাখ ৬৩ হাজার ২২ টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। যা অবৈধ বন্ডেড পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্জিত বলে প্রমাণ মিলেছে বলেও ভ্যাট গোয়েন্দা জানিয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status