বাংলারজমিন

শ্রীনগরে এক হাজার হেক্টর আলু ও সরিষা ক্ষেত পানির নিচে

শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি

৬ ডিসেম্বর ২০২১, সোমবার, ৩:৪৩ অপরাহ্ন

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে গত দুদিনের টানা বর্ষণে শ্রীনগরে প্রায় ১ হাজার হেক্টর আলু ও সরিষা জমি পানির নিচে। সদ্য রোপণ করা এসব জমির আলু বীজ ও সরিষা পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর সাথে যোগ হয়েছে বোর ধানের বীজতলা।

গত বছর আলুর দাম না থাকায় চাষীরা লোকসানে পড়েছিল। এবছর লোকসান পুষিতে নিতে পারবে এই ধারণা করে তারা জমি, স্বর্ণালংকার বন্ধক সহ চড়া সুধে টাকা এনে আলু চাষের জন্য পুঁজি সংগ্রহ করে চাষে নামে। কিন্তু শুরুতেই এতো বড় ধাক্কা সামলে উঠা বেশীর ভাগ চাষীর জন্য দুরূহ হয়ে যাবে।

সোমবার দুপুরে সরজমিনে উপজেলার বীরতারা ইউনিয়নের সালেপুর, বীরতারা, মাশাখোলা, আটপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব দেউলভোগ সহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র।

আলুর জমির উপরে বৃষ্টি পানি জমে নৌকা চলার উপক্রম হয়েছে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অনেককে দেখা গেছে সেচ দিয়ে জমির পানি সরানোর বৃথা চেষ্টা করছে। কামাল শেখ নামের এক আলু চাষী জানান, জানি পানি সেচে কোন লাভ হবে না, তারপরও মনকে মানাতে পারছি না। গত বছর লোকসান হয়েছে। এবছর ধার দেনা করে চাষে নেমেছিলাম। ভেবেছিলাম এবছর দাম ভাল পেলে লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবো। কিন্তু শুরুতেই এমন হয়ে গেল। কথাগুলো বলতে বলতে তার গলা ধরে আসে। তিনি আরো জানান, প্রায় ৭ বিঘা জমিতে তিনি আলু চাষ করেছেন। প্রতি বিঘাতে সার-বীজ-শ্রমিক ও জমির দামের পেছনে খরচ হয়েছে প্রায় লাখ। এখন জমির পানি নেমে গেলেও সার-বীজ-শ্রমের পেছনে নতুন করে খরচ হবে। এই টাকা কোথায় পাব?

ফরিদ হোসেন জানান, জমির দিকে তাকালে কষ্টে এমনিতেই চোখে পানি চলে আসে। পানি নেমে গেলে নতুন করে বীজ আলু পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। অনেকে হয়তো এই বছর আর আলুর আবাদ করতে পারবে না।

বোরো ধানের আগে শ্রীনগরে অনেক জমিতেই সরিষার আবাদ হয়। এজন্য পরি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে অনেকেই সরিষা চাষ করেছেন। সরিষা গাছের বেশির ভাগের মুখে এখন ফুল। এমন অবস্থায় সরিষার জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তা পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে আর সরিষা আবাদের সুযোগ নেই।

বোর ধানের আবাদের জন্য কৃষকরা বীজতলা তৈরি করে তাতে বীর ধান ফেলেছেন। বৃষ্টির কারণে আর এগুলো হবে না।

শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার শান্তনা রাণী জানান, এই বছর উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্য মাত্রা রয়েছে ২ হাজার ২শ হেক্টর। এরই মধ্যে সরকারী হিসাবে প্রায় ৬শ ২০ হেক্টর জমিতে আলু বপন করা হয়েছে। পুরোটাই এখন পানির নীচে। সরিষা আবাদ করা হয়েছে ৪শ ৬৫ হেক্টর জমিতে। এর পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে। সাথে বোর ধানের বীজ তলাও নষ্ট হচ্ছে। পানি না সরে যাওয়া পর্যন্ত ক্ষতির মাত্রা নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। ক্ষতির মধ্যে পরা কৃষকদের প্রণোদনার জন্য উর্ধ্বতনদের কাছে আবেদন করা হবে।

শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণব কুমার ঘোষ জানান, অনাকাক্সিক্ষত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষক চাষীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। কৃষি অফিসকে সাথে নিয়ে কৃষকদের সাথে বসে ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করা হবে। তাদেরকে অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্রদানের বিষয়ে জোর দেওয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status