শেষের পাতা
তোপের মুখে পালালো পাথরখেকোরা
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
৬ ডিসেম্বর ২০২১, সোমবার, ৮:৫২ অপরাহ্ন
জাফলংয়ের পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা বা ইসিএ জোন থেকে যন্ত্রদানব সেইব মেশিন দিয়ে প্রতিদিন ১০-১২ লাখ টাকার পাথর লুট করছিল লুটপাটকারীরা। এ খবর পেয়ে গত বুধবার সন্ধ্যায় সিলেটের পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান আলমের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে কয়েকটি পাথর ও বালুবাহী ট্রাক জব্দ ছাড়াও জরিমানা করা হয়েছিল। এতেও দমেনি পাথরখেকো। অভিযানের পরপরই তারা যন্ত্রদানব বোমা মেশিন লাগিয়ে পাথর উত্তোলন শুরু করে। এ দৃশ্য দেখে গতকাল সকালে স্থানীয় এলাকার লোকজন জড়ো হয়ে পাথরখেকোদের নৌকা তাড়িয়ে দিয়েছে। বর্ষার মৌসুমে জাফলংয়ের ইসিএ জোন এলাকায় অবাধে বালু লুটপাট চালায় জাফলংয়ে পুলিশের শেল্টারে থাকা বালুখেকোরা। এ কারণে বারবার অভিযান চালালেও বালু উত্তোলন বন্ধ করা যায়নি। পরবর্তীতে স্থানীয় নয়াবস্তি, রাধানগর, লাখেরপাড়সহ কয়েকটি এলাকার মানুষ প্রতিবাদ জানালে বালু ইসিএ জোন এলাকা থেকে বাংলাবাজার এলাকা পর্যন্ত বালু লুটপাট বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর কিছুদিন বিরতি দিয়ে বালু ও পাথরখেকোরা সেইভ মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন শুরু করে। ইতিমধ্যে কয়েক দফা গোয়াইনঘাটের প্রশাসন অভিযান চালালেও পাথরখেকোরা দমেনি। সর্বশেষ গত বুধবার সন্ধ্যায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা পুলিশ, বিজিবি নিয়ে অভিযান চালান। স্থানীয়রা জানিয়েছেন; অভিযানের পরপরই পাথরখেকো সমেদ, সাবু ও রহমতের নেতৃত্বে সেইভ মেশিন দিয়ে পাথর লুটপাট চলছিল। পুলিশের স্থানীয় বিট কর্মকর্তা এসআই লিটন চন্দ্র ও এএসআই মারুফকে ম্যানেজ করে ওই পাথরখেকো চক্রের সদস্যরা অবাধে পাথর লুট করছিল। গোয়াইনঘাট থানার ওসি পরিমল চন্দ্র দেবের বিরুদ্ধেও আছে অভিযোগ। জাফলং নিয়ে গত দুই মাসে নানা ঘটনা ঘটলেও ওসি পরিমলের ব্যর্থতার কারণে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এই উত্তেজনা অবসান করতে জাফলংয়ের নয়াবস্তির মানুষ বহিরাগত নেতৃত্বের অবসান চান। এ নিয়ে তারা গত সপ্তাহে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকের ফাঁকেও এক স্কুলছাত্রের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে পাথরখেকো। ওই স্কুলছাত্র বর্তমানে একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গতকাল সকালে নয়াবস্তি ও কান্দুবস্তির একশ’ লোক জাফলংয়ের ইসিএ জোন এলাকায় যান। এ সময় তারা দেখতে পান প্রায় দুই থেকে আড়াইশ’ সেইভ মেশিন চলছে জুমপাড়সহ কয়েকটি এলাকায়। এ সময় তারা পরিবেশ বিপর্যস্ত করে পাথর উত্তোলনে বাধা দেন। সেইভ মেশিন ও বোমা মেশিনের নিয়ন্ত্রকদের ওই এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিয়ে নৌকাসহ সব মেশিন ব্রিজের নিচের এলাকায় পাঠিয়ে দেন। এদিকে- গতকাল দিনভর পাথরখেকোরা স্থানীয় মেলার মাঠের আস্তানা ও কান্দুবস্তি এলাকায় বৈঠক করেছে। এসব বৈঠককে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা চলছে। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, জাফলংয়ের পাথরখেকো সিন্ডিকেটরা বহিরাগতদের দিয়ে কোয়ারি দখলের চক্রান্ত চালাচ্ছে। বহিরাগতদের নিয়ে জাফলং কোয়ারি দখলে নামলে এলাকার লোকজন প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে। এলাকার যুবক আলীম উদ্দিন জানিয়েছেন, আমরা জাফলংয়ে শান্তি চাই। কিন্তু পাথরখেকোরা কান্দুবস্তি, নয়াবস্তি, রাধানগর ও লাখেরপাড় এলাকার লোকজনকে ভয় দেখিয়ে কোয়ারি দখলে নিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার পাথর লুটপাট করছে। তারা থানা পুলিশের দোহাই দিয়ে এলাকায় ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করছে। এটা আর হবে না। জাফলংয়ের মানুষ নিজেদের সম্পদ রক্ষায় এখন নিজেরাই মাঠে নেমেছে। যেকোনো মূল্যে পাথরখেকোদের প্রতিহত করা হবে বলে জানান তিনি। এদিকে গত দুই মাসে জাফলংয়ে পাথর ও লুটপাটের কারণের এলাকায় সংঘর্ষ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। এসব ঘটনায় শুধুমাত্র কান্দুবস্তি ও নয়াবস্তির মানুষের বিরুদ্ধে অন্তত ১২টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অনেকেই কারাবরণ করেছেন। নয়াবস্তি ও কান্দুবস্তির স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, জাফলংয়ের বালু ও পাথর লুটপাটে বহিরাগতদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাদের নেতৃত্বেই বর্তমানে এলাকার সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী এবং পুলিশের দোহাই দিয়ে একটি পক্ষ ওই বহিরাগতদের নিয়ে জাফলং শাসন করছে। আর তাদের পাথর ও বালু লুটপাটের পথ সহজ করতে নয়াবস্তি ও কান্দুবস্তির মধ্যে দ্বন্দ্ব জিইয়ে রেখেছে। সার্বিক বিষয় ইতিমধ্যে এলাকার সংসদ সদস্য, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদসহ সিলেটের প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকার মানুষ।