বিশ্বজমিন

সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্সকে ‘পুনর্বাসনের’ অভিযোগ ইমানুয়েল ম্যাক্রনের বিরুদ্ধে

মানবজমিন ডেস্ক

৪ ডিসেম্বর ২০২১, শনিবার, ১:৩৭ অপরাহ্ন

সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে আজ শনিবার সাক্ষাত করার কথা রয়েছে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের। পরিকল্পিত এ সাক্ষাতের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো। এ খবর দিয়ে অনলাইন গার্ডিয়ান বলছে, সৌদি আরবের ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে রাষ্ট্রীয় মদতে হত্যা করা হয়। এরপর পশ্চিমা কোনো নেতার সঙ্গে ক্রাউন প্রিন্সের এটাই প্রথম ওয়ান-টু-ওয়ান সাক্ষাত হতে যাচ্ছে।
২০১৮ সালে হত্যা করা হয় জামাল খাসোগিকে।

তারপর থেকে গত তিন বছরে সৌদি আরবে ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে সরাসরি ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠক এড়িয়ে চলছেন পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা। ক্রাউন প্রিন্সকে সৌদি আরবের ভবিষ্যত বাদশা হিসেবে দেখেন অনেকে। তার সঙ্গে কথা বলা এড়িয়ে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর মধ্য দিয়ে তাকে বৈধতা দেয়া থেকে দূরত্ব বজায় রাখছেন তিনি। কিন্তু ইমানুয়েল ম্যাক্রনের সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে নতুন বার্তা দেয়া হচ্ছে। তা হলো পশ্চিমা কমপক্ষে একজন বড় নেতা ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে স্থাপনে প্রস্তুত। অথচ এক বছরেরও কম সময় আগে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো রিপোর্ট দিয়েছে যে, সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকা-কে অনুমোদন দিয়েছিলেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অ্যাগনেস ক্যালামার্ড। তিনি একজন ফরাসি নাগরিকও। বলেছেন, সৌদি আরবে ফ্রান্সের কৌশলগত যে স্বার্থই থাক না কেন, কিছু দিয়েই এমন একজন শাসককে বৈধতা দেয়া যায় না, যে শাসক সাংবাদিককে হত্যা করে, অধিকারকর্মীদের হুমকি দেয়, নারী অধিকারকর্মীদের জেলে ভরে, ইয়েমেনের সাধারণ মানুষকে হত্যা করে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে প্রতারণা করে। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ার মধ্য দিয়ে নিজের এবং নিজের দেশের মর্যাদাকে ছোট করছেন ম্যাক্রন।

ক্রাউন প্রিন্সকে ‘পুনর্বাসনের’ জন্য ম্যাক্রনের যখন এমন সমালোচনা হচ্ছে, তখন তার অফিস থেকে এই সাক্ষাতের পক্ষেই কথা বলা হচ্ছে। বলা হয়েছে, এ অঞ্চলে একটি বড় ‘অ্যাক্টর’ সৌদি আরব। তাদের সঙ্গে যে আলোচনা হবে তা হবে ‘ডিমান্ডিং’ অর্থাৎ চাহিদা বিষয়ক সংলাপ। অন্যদিকে প্রেসিডেন্টের বাসভবন এলিসি প্রাসাদ থেকে বলা হয়েছে, জেদ্দায় অনুষ্ঠেয় বৈঠক ক্রাউন প্রিন্সকে কাদা থেকে টেনে তোলার কোনো উদ্দেশে নয়। পক্ষান্তরে এটা হলো ম্যাক্রনের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল। তিনি এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা চেয়েছেন। ভূমধ্যসাগর থেকে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে আলোচনার মধ্য দিয়ে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে চায় ফ্রান্স।

সৌদি আরব বিষয়ে সিআইএ’তে এনালিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এবং ব্রুকিংস ইন্টেলিজেন্স প্রোজেক্টের সিনিয়র ফেলো ব্রুস রিডেল এই বৈঠককে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এবং তার ইয়েমেন যুদ্ধের বৈধতায় ফ্রান্সের সিল দেয়া হিসেবে অভিহিত করেছেন। এটা হলো ইয়েমেনের জনমানুষের সঙ্গে ফরাসিদের প্রতারণা। এ সময় তিনি জাতিসংঘের সাম্প্রতিক একটি রিপোর্টের দিকে ইঙ্গিত করেন। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইয়েমেন যুদ্ধের কারণে ওই দেশটিতে প্রায় চার লাখ শিশু অনাহারে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে। একে এক বিপর্যয় বলে বর্ণনা করেন রিডেল। এর জন্য তিনি দায়ী করেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে।

ওদিকে তেল উত্তোলন বৃদ্ধির জন্য সৌদি আরবের দ্বারস্থ হওয়ার কথা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। ঠিক এমন খবরের মধ্যে ম্যাক্রন সরাসরি সৌদি আরবেই বৈঠক করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের তিনজন সিনিয়র কর্মকর্তা সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং কাতার সফরে রয়েছেন। এ সফরে তারা অর্থনৈতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করবেন। এ ছাড়া ভবিষ্যৎ ক্লিন এনার্জি তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারিত্ব করতে পারে। এখানে উল্লেখ্য, সৌদি আরবের তেল উত্তোলন বিষয়ক সরকারি প্রতিষ্ঠান সৌদি আরামকো বিশ্বে যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয় তার বড় অংশ এখান থেকে উত্থিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status