বাংলারজমিন

কিশোর প্রেমের বলি মারুফা

শ্রীপুর ও কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি

৪ ডিসেম্বর ২০২১, শনিবার, ১:৩৫ অপরাহ্ন

গাজীপুরের কাপাসিয়ার সিংহশ্রী বড়বেড় গ্রামের মাসুদ মিয়া পেশায় কাঠশ্রমিক। মাসুদের চার মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় মারুফা আক্তার। এলাকায় লেখাপড়ার সুযোগ কম থাকায় মারুফাকে ছোটবেলায় পাশের শ্রীপুর উপজেলার বরমী বরনল গ্রামের নানা কাশেম মিয়ার কাছে দিয়ে দেন তার পরিবার।

নানার দেখভালে স্থানীয় বিদ্যালয়ে ভালোভাবেই লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিল মারুফা। করোনার সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকার সুযোগে নানার বাড়ির প্রতিবেশী এমদাদুল হকের ছেলে ইমন (২০)এর সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন মারুফা। পরে চলতি বছরের মার্চে ইমনের নানা প্রলোভনে পরিবারের অমতে বিয়ে করে নানার বাড়ী ছেড়ে শ্বশুর বাড়িতে চলে যায় সে।

৮মাস সংসার করার পর নির্যাতন শুরু হয় মারুফার ওপর। এক পর্যায়ে শাশুড়ি টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে মারুফাকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেন। প্রায় মাসখানেক পূর্বে মারুফার আশ্রয় হয় বাবার বাড়িতে। সেখান থেকেই শ্রীপুর বরমী বাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সদ্য সমাপ্ত ৮ম শ্রেণীর পরীক্ষায় অংশ নেন মারুফা। কয়েকদিন পরেই তার ভুল বুঝতে পারে সে। বাবা মাকে সে জানায়, স্বামীর আর সংসার করবে না। লেখাপড়া চালিয়ে যাবে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে মারুফার স্বামী ইমন মিয়া মারুফাদের বাড়িতে বেড়াতে যায়। সবাই ভালোভাবে গ্রহণ করে তাকে। এসময় সে জানায় যে, সে মারুফাকে তার সাথে নিতে এসেছে। কিন্তু মারুফা নারাজ ছিল। নানাভাবে বুঝানোর এক পর্যায়ে সে পরদিন (শনিবার) স্বামীর সাথে যেতে রাজি হন। স্বামী ইমন সেদিন শ্বশুরবাড়িতেই থেকে যান।
দিবাগত রাতে তারা একসাথে ঘুমাতে যান। রাত দুইটার দিকে মারুফার স্বামীর ফোন দেখে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠেন মাসুদ। অপরপ্রান্ত থেকে তার ইমন জানান, মারুফাকে খুন করে সে চলে এসেছে। পরে একই বাড়ির একটি কক্ষে গিয়ে তারা মারুফার নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত ইমন মিয়াকে শনিবার দুপুরে শ্রীপুর উপজেলার সাতখামাইর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি শ্রীপুরের বরনল গ্রামের এমদাদুল হকের ছেলে। তার বিরুদ্ধে গতরাতে কাপাসিয়া জেলার বড়বেড় গ্রামের শশুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে স্ত্রীকে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে।


কিশোরীর পিতা মাসুদ মিয়া বলেন, তার চার মেয়ে অনেক স্বপ্ন নিয়ে ভালো লেখাপড়া করতে নানার বাড়িতে পাঠিয়ে ছিলাম। সে লেখাপাড়ায় ভালো ছিল। হঠাৎ না বুঝেই সে প্রেমে জড়িয়ে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ীতে আশ্রয় নেন। আমরা এমন বিয়ে মেনে নেইনি। কয়েকমাস পর থেকেই তার মেয়ের উপর নির্যাতন শুরু করে তার শশুর বাড়ীর লোকজন। এক পর্যায়ে তাকে বাড়ী ছাড়া করা হয়। পরে মেয়েকে আমরা ঘরে ফিরিয়ে আনি।

জামাই বাড়িতে আসায় সবাই তাকে ভালোভাবে গ্রহণ করেছি। আমরা খুব যত্ন করেছি, তার মেয়েও তার সাথে ভাল ব্যবহার করেছে। কিন্তু তার বাড়িতে এভাবে পাশের রুমে সে তার মেয়েকে হত্যা করে চলে যাবে তারা তা আন্দাজও করতে পারেননি।

কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম নাসিম বলেন, এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে শ্রীপুর থেকে অভিযুক্তকে আটক করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, শ্বাসরোধ করে কিশোরীকে হত্যা করা হয়। এদিকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে । এ বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status