প্রথম পাতা

শিক্ষকের মৃত্যুর জের, কুয়েট বন্ধ ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে

৪ ডিসেম্বর ২০২১, শনিবার, ৯:১৯ অপরাহ্ন

অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে সৃষ্ট পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আগামী ১৩ই ডিসেম্বর পর্যন্ত খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিকাল ৪টার  মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টায় সিন্ডিকেটের ৭৬তম সভা শেষে কুয়েটের ভিসি অধ্যাপক কাজী সাজ্জাত হোসেন এ তথ্য জানান। এদিকে হঠাৎ হল ত্যাগের নির্দেশনায় ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করলেও বাস বা ট্রেনের টিকিট পাওয়া নিয়ে অনেকের মধ্যে শঙ্কা দেখা দেয়। ক্যাম্পাস খোলার কিছুদিনের মধ্যে আবার বন্ধ ঘোষণা করায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কাও করছেন শিক্ষার্থীরা।
হারুণ নামে যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, ‘হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা শিক্ষার্থীর জন্য চরম ভোগান্তির। ট্রেনের টিকিট পেলে বাড়ি যাব। আর না পেলে কি করবো, ভাবতে পারছি না।’ আরেক শিক্ষার্থী তানভীর বলেন, ‘করোনার বন্ধের পর গত ২৫শে অক্টোবর ক্যাম্পাসে এসেছিলাম। আবার বন্ধ হয়ে গেল। এখন পড়াশোনা শেষ করতে কতদিন লাগবে জানি না।’ তবে অনেকেই বলেছেন, যেহেতু তদন্তের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তাই আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীরা চিহ্নিত হোক। এদিকে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ছাত্রলীগের একাংশ আবাসিক হল না ছাড়ার জন্য প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। ঘণ্টাখানেক অবস্থান শেষে বিকাল ৪টার দিকে তারা প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে সরে যায়।
এর আগে বেলা ১১টায় খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে কুয়েট শাখা ছাত্রলীগ। এ সময় তারা তদন্ত ছাড়া কাউকে বহিষ্কার না করার দাবি তুলেছেন। শিক্ষক সেলিমের স্বাভাবিক মৃত্যুকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এই ঘটনায় অভিযুক্ত কুয়েট ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান। এ সময় তাদের কর্মসূচি পালনের ঘোষণাও দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, নিজের মনোনীত প্রার্থীকে কুয়েটের লালন শাহ হলের ডিসেম্বর মাসের ডাইনিং ম্যানেজার নির্বাচিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান হল প্রভোস্ট ড. সেলিম হোসেনকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৩০শে নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ ক্যাম্পাসের রাস্তা থেকে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা করা শুরু করে। পরে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধঘণ্টা ওই শিক্ষকের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে। পরে ওই শিক্ষক ড. সেলিম হোসেন দুপুরে খাবারের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাস সংলগ্ন বাসায় যান। দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের দিকে তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। পরে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি অংশের দাবি ছাত্রলীগ নেতাদের মানসিক নির্যাতনের ফলেই কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। এটাকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে দোষীদের শাস্তিতে উত্তাল হয়ে ওঠে কুয়েট ক্যাম্পাস।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status