বাংলারজমিন

শিক্ষকের মৃত্যু

উত্তাল কুয়েট

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে

৩ ডিসেম্বর ২০২১, শুক্রবার, ৯:১২ অপরাহ্ন

মানসিক নির্যাতনে হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর জন্য দায়ী ছাত্রদের বহিষ্কারসহ শাস্তির দাবি জানিয়েছে কুয়েট শিক্ষক সমিতি ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। অপরদিকে শিক্ষক ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যুকে স্বাভাবিক নয় বলে অভিযোগ করে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
কুয়েটের ছাত্র ও শিক্ষকরা জানান, সিসিটিভিতে দেখা যায়- কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাদের মনোনীত ছাত্রকে লালন শাহ্‌ হলের ডিসেম্বর মাসের ডাইনিং ম্যানেজার করার জন্য প্রভোস্ট ড. সেলিমকে চাপ দিয়ে আসছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স ও ইলেট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে বের হচ্ছিলেন অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেন। রাস্তায় কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সিজানের নেতৃত্বে কয়েক শিক্ষার্থী তার পথরোধ করে বিভাগের ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে বাসায় ফিরে বুকে ব্যথা অনুভব করলে দ্রুত তাকে কুয়েট মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয় তার।
ক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হেনস্তা করার পরপরই অসুস্থ হয়ে পড়েন শিক্ষক ড. সেলিম। এরপরই তার মৃত্যু হয়। রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসসহ কয়েক দফা দাবিও জানিয়েছেন তারা। একাত্মতা প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরাও। বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও উপাচার্যের কক্ষের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। প্রফেসর ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর জন্য কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দায়ী করে তাদের বিচার দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা। এছাড়া ১লা ডিসেম্বর দুপুরে ছাত্ররা প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি সুকৌশলে পালিয়ে যান। ছাত্ররা আন্দোলন করলেও তিনি নিজের বাংলোয় অবস্থান করেন। ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে জানতে কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নম্বরে একাধিকবার কল দিলে তিনিও রিসিভ করেননি।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনার সিসি টিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষক মহলে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, শিক্ষক সমিতির সভায় কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় দুর্বার বাংলার পাদদেশে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে সুষ্ঠু তদন্তের উপর ভিত্তি করে মূল অপরাধীদের ছাত্রত্ব বাতিল না হওয়া পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা করেন। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারসহ প্রশাসনের কাছে ৫ দফা দাবি জানান তারা। সমাবেশে ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘আমরা শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু স্বাভাবিক পরিবেশ চাই। যাতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নিরাপদে ক্যাম্পাসে অবস্থান করাসহ নির্বিঘ্ন পদচারণা করতে পারেন। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সজল কুমার অধিকারী বলেন, ‘সেলিম একজন সম্ভাবনাময় শিক্ষক ছিলেন। তার মৃত্যু একটি সম্ভাবনার মৃত্যু। এ ধরনের মানসিক নির্যাতনের মূলোৎপাটন করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে ক্যাম্পাস সবার জন্য নিরাপদ হয়। মানসিক নির্যাতনে সেলিমের মৃত্যুর বিচার না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা ক্লাসে যাবে না।
কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক ড. ইসমাইল সাইফুল্লাহ বলেন, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে কুয়েট প্রশাসন পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। ড. সেলিম কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও লালন শাহ্‌ হলের প্রভোস্ট ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status