দেশ বিদেশ

লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বাড়লো রপ্তানি আয়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

৩ ডিসেম্বর ২০২১, শুক্রবার, ৯:০৮ অপরাহ্ন

রেমিট্যান্স নিম্নমুখী হওয়ার মধ্যে বাড়ছে রপ্তানি আয়। ক্রমেই বাড়তে থাকা এই আয় লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে। সদ্য সমাপ্ত নভেম্বর মাসে ৪০৪ কোটি ১৪ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৩৪ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা, যা গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে ৩১.২৫ শতাংশ বেশি। আর চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের পাঁচ মাসের (জুলাই-নভেম্বর) হিসাবে প্রায় ২০ বিলিয়ন (১ হাজার ৯৭৯ কোটি) ডলার রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪.২৯ শতাংশ বেশি। আর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১৩.২৭ শতাংশ। তবে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ নিয়ে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা। রপ্তানিকারকরা বলছেন, যদি করোনার এই নতুন ধরন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে রপ্তানি বাণিজ্যেও আগের মতো নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বরে) ১ হাজার ৯৭৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা টাকার হিসাবে ১ লাখ ৬৮ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪.২৯ শতাংশ বেশি। এ পাঁচ মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৭৪৭ কোটি ডলার। এ হিসাবেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১৩.২৭ শতাংশ। ইপিবির তথ্য মতে, জুলাই-নভেম্বর সময়ে তৈরি পোশাক ছাড়াও কৃষি প্রক্রিয়াজাত, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, হোম টেক্সটাইল, প্রকৌশল পণ্য ও হস্তশিল্প রপ্তানি বেড়েছে। ফলে সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় কমেছে সাড়ে ১৭ শতাংশ।
মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ১ হাজার ৫৮৫ কোটি ডলার এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২.৯৭ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া ৫৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত, ৫৬ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল, ৪৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ৪৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৮০.১১ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। এরমধ্যে নিট পোশাক থেকে এসেছে ৮৯৮ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে বেশি এসেছে ১৪.৬৪ শতাংশ। ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ৬৮৭ কোটি ডলার। আয় বেড়েছে ১৯.৩২ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৯.৪৫ শতাংশ। ১লা জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের মোট লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪৩.৫০ বিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা আছে ৩৫.১৪ বিলিয়ন ডলার। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৮.৭৬ বিলিয়ন ডলার আয় করে বাংলাদেশ, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১৫.১০ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি (৩৩.৬৭ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম।
পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, এত দ্রুত করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে আমরা ঘুরে দাঁড়াবো, ভাবতে পারিনি। তবে, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন আমাদের নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। জানি না, কী হবে। যদি ওমিক্রন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে আমাদের রপ্তানি আবার থমকে যাবে। আর যদি, তেমনটা না হয়, তাহলে এই ইতিবাচক ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমরা ওমিক্রনকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। সবকিছুই নির্ভর করছে করোনার এই নতুন ধরনের ওপর। যদি ওমিক্রনের ছোবল বিশ্বে ছড়িয়ে না পড়ে, তাহলে আগামী দিনগুলোতেও রপ্তানি আয়ের এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে। একটা ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে আমরা অর্থবছর শেষ করতে পারবো।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কমছেই। সদ্য সমাপ্ত নভেম্বর মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ১৫৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত দেড় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। আর গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে কম ২৫.২৪ শতাংশ। সবমিলিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক কমেছে ২১ শতাংশ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status