দেশ বিদেশ

রামপুরায় বাসে ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ, মামলার পর এলাকায় আতঙ্ক, আটক ২

স্টাফ রিপোর্টার

৩ ডিসেম্বর ২০২১, শুক্রবার, ৯:০৮ অপরাহ্ন

রামপুরায় বাসচাপায় কলেজ শিক্ষার্থী মাইনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয়ের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বাসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলার পর পুরো এলাকায় আতঙ্ক এবং থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত রামপুরা এবং হাতিরঝিল থানায় ৮০০ জনকে আসামি করে পৃথক দু’টি মামলা হয়েছে। মামলায় দুই কিশোরকে পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে হাতিরঝিল থানায় মো. আব্দুল্লাহ (১৭) এবং রামপুরা থানায় মো. শহিদুল বেপারী (১৮) নামে দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সরজমিন রামপুরার টিভি লিংকরোড গলি ঘুরে সাধারণ মানুষের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক দেখা গেছে। অপরিচিত কোনো মানুষ দেখলেই সাবধানতার ভঙ্গিতে এড়িয়ে চলছেন তারা। ডিআইটি রোড পূর্ব রামপুরায় লাজ ফার্মার গলি সংলগ্ন এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, গত সোমবার রাতে বাসচাপার ঘটনার পর বাসা থেকে চিৎকার শুনে বাইরে বের হই। মূল সড়ক থেকে শুরু করে গলির রাস্তা পুরোটা মানুষের ভিড়ে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর একাধিক বাসে বিক্ষুব্ধ মানুষ অগ্নিসংযোগ করে।
এ মামলায় শতাধিক ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের ভাড়াটিয়া এবং ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতার ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তারা খুব অসহায় এবং নিরীহ প্রকৃতির মানুষ। মূল দোষীদের বাদ দিয়ে নির্দোষ মানুষকে গ্রেপ্তারের ফলে এখন আমরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। রামপুরা থানায় গ্রেপ্তার হওয়া শহিদুলের বাবা ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা। মুজিবুর ব্যাপারী মানবজমিনকে জানান, চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে শহীদুল মেজো। বড় ছেলে নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করে। শহীদুল তার সঙ্গে সবজি বিক্রিতে সহায়তা করে। সোমবার রাতে বাসচাপায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনার দিন শহীদুল বাবার সঙ্গেই সবজি বিক্রি করছিল। পরবর্তীতে মানুষের চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় সাধারণ মানুষ যখন বাসে আগুন দিচ্ছিল তখন সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সে। পরবর্তীতে তাকে পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর রাত আড়াইটায় দিকে খবর পাই তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। শহীদুলের বাবা বলেন, আমরা গরিব মানুষ। সবজি বিক্রি করে কোনোভাবে সংসার চলে। আমার ছেলে গাড়ি ভাঙবে কোন দুঃখে। এদিকে ছেলের সঙ্গে গতকাল সকালে রামপুরা থানায় দেখা করেছেন তার মা। ছেলের জন্য নাশতা নিয়ে গেছেন। শহীদুলের মা বলেন, আমার ছেলে নির্দোষ। সে এই ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়। ছেলের মুক্তি দাবি করেন তার মা। এ বিষয়ে এলাকার অপর সবজি বিক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও করোনার কারণে চাকরি চলে যায়। পরবর্তীতে সবজি বিক্রি শুরু করেন। তিনি বলেন, টিভি লিংক রোড এলাকায় সকাল সাড়ে সাতটা থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত সবজি বিক্রি করি। অনেক সময় সবজি আগেভাগে বিক্রি হয়ে গেলে বাসায় চলে যাই। ঘটনার দিন ওই শিক্ষার্থী রাস্তা পার হয়ে অপর পাশে যাওয়ার সময় একটি বাস প্রথমে ছেলেটিকে ধাক্কা দিলে সে উল্টে পড়ে যায়। পরবর্তীতে পেছন থেকে গ্রিন অনাবিল পরিবহনের একটি বাসের চাপায় মাইনুদ্দিন মারা যায়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে এ দুর্ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে জনতা। ঘটনার পর সেখানে বাস আটকে ভাঙচুর করা হয় এবং কয়েকটি বাস পুড়িয়ে দেয়া হয়। মামলা প্রসঙ্গে এই সবজি বিক্রেতা বলেন, আমরা সবজি বিক্রি করে খাই, গাড়ি ভাঙচুর করি না। শুনেছি এলাকার এক সবজি বিক্রেতার কিশোর ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এতো মানুষের মধ্যে শুধুমাত্র একটি ছেলেকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটা শঙ্কার বিষয়।
রামপুরা থানায় হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (উপপরিদর্শক) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের থানায় পৃথক দু’টি মামলার মধ্যে গাড়ি ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪০০-৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত শহীদুল নামে এক সবজি বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার শেষে গত বুধবার আদালতে তুলে রিমান্ড চাইলে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। বর্তমানে তাকে পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হাতিরঝিল থানার তদন্ত কর্মকর্তা (উপপরিদর্শক) মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, অজ্ঞাতনামা ২৫০-৩০০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় রামপুরা রোড এলাকা থেকে গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় মো. আব্দুল্লাহ নামে একজন কিশোরকে পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের বিষয়ে এই কিশোর ইতিমধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছে। তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status