শেষের পাতা

নজর কেড়েছেন মুক্তাদির-আরিফ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২ ডিসেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:২৮ অপরাহ্ন

দীর্ঘদিন পর সিলেটে সমাবেশ করলো সিলেট বিএনপি। এতে ছিল না কোনো বাধা কিংবা চোখ রাঙানিও। নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে সমাবেশ শেষ করলেন। এতে উজ্জীবিত হয়েছে সিলেট বিএনপি। আর আয়োজনেও ছিল না কোনো খামতি। সব নেতারা এক হয়েই এই কর্মসূচি পালন করেছেন। কিন্তু সিলেটের এই আয়োজনে এবার নজর কাড়লেন সিলেট বিএনপির দুই নেতা। বর্তমানে তারা সিলেট বিএনপির অভিভাবকও। এরা হচ্ছেন- বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও কেন্দ্রীয় সদস্য, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এই দুই নেতা সিলেটের সমাবেশ সফলে কাজ করেছেন। ছায়া হয়ে সঙ্গে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবনও। গত এক যুগে অনেক পাল্টে গেছে সিলেট বিএনপি। সাবেক মন্ত্রী ও স্থায়ী কমিটির সদস্য এম সাইফুর রহমান ছিলেন এক সময় সিলেট বিএনপির অভিভাবক। তার মৃত্যুর পর ইলিয়াস আলী ছিলেন দলের নিয়ন্ত্রক। এরপর হাত ঘুরে এখন বিএনপির অভিভাবকের আসনে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সিলেট বিএনপির আয়োজনে গত সোমবারের সমাবেশ হচ্ছে টার্নিং পয়েন্ট। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন- বেগম খালেদা জিয়ার জন্য ডাকা এই সমাবেশে সিলেট বিএনপির সব অংশ, সব বলয়ের নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল। এমনকি সিনিয়র নেতারাও নেমে এসেছিলেন রাজপথে। আর খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও ছিলেন অগ্রভাগে। সিলেট বিএনপির এক সময়ের অভিভাবক খন্দকার আব্দুল মালিকের ছেলে আব্দুল মুক্তাদির কয়েক বছর ধরে সিলেট বিএনপির অভিভাবক হিসেবে কাজ করছেন। তার নেতৃত্বেই সিলেটে দলকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। নগরের কাজিরবাজার তোপখানা এলাকায় খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের বাড়ি ফের জেগে উঠেছে নেতাকর্মীদের পদচারণায়। এক সময় খন্দকার আব্দুল মালিকের জীবদ্দশায় এই বাড়িতেই ছিল বিএনপির নেতাকর্মীদের যাতায়াত। ছেলে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের হাত ধরেই ফের সরব হয়ে উঠেছে খন্দকার আব্দুল মালিকের বাড়ি। সিলেটে বিএনপির সমাবেশকে সফল করতে প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বৈঠক হয়েছে তার বাড়িতে। নেতাকর্মীরা সমাবেশ সফল করতে শলাপরামর্শ ও বৈঠক করেন ওখানে বসেই। কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও সিলেটের নেতারা এসব বৈঠকে যোগ দেন। মঙ্গলবার সমাবেশের দিন সকাল থেকে ফের জেগে উঠে ওই বাড়ি এবং তার আশেপাশের এলাকা। বিশেষ করে সকাল থেকে সিলেট ছাত্রদলের সব অংশের নেতারা ভিড় জমান ওই এলাকায়। খণ্ডখণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন কাজিরবাজারের বাড়ির সামনে। দুপুরের মধ্যে হাজারো নেতাকর্মীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারাও এ সময় ভিড় জমান বাড়িতে। সেখানে বসেই খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির সমাবেশকে ঘিরে সব নির্দেশনা দেন। বেলা ২টার মধ্যে লোকারণ্য হয়ে ওঠে কাজিরবাজার এলাকা। পরে সেখান থেকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা শোডাউন শুরু করেন। আর এই শোডাউন এসে মিলিত হয় রেজিস্ট্রারি মাঠের সমাবেশে। মঙ্গলবারের সমাবেশের সব নির্দেশনায় ছিলেন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। এ কারণে সফলভাবে সমাবেশ শেষ করা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, সময়ের সংক্ষিপ্ততার কারণে সমাবেশে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বক্তব্য না দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের জন্য সময় ছেড়ে দেন। সিলেটের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী হজ পালনে ছিলেন সৌদি আরবে। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, সিলেটের সমাবেশ ঘোষণা হওয়ার কারণে সফর সংক্ষিপ্ত করে আরিফুল হক চৌধুরী সমাবেশের তিনদিন আগে সিলেটে এসে পৌঁছেন। আর নগরে পৌঁছেই তিনি সমাবেশ সফলে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠেন। এমনকি তার বাসায়ও দফায় দফায় বৈঠক করেন। এসব বৈঠকেও খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ছাড়া কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা অংশ নেন। একটি গোছানো প্রোগ্রাম করতে আরিফুল হক চৌধুরী এতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। তবে সমাবেশের দিন মঙ্গলবার ভিন্নভাবে নজর কাড়েন আরিফুল হক চৌধুরী। নগর ভবনের সামনে থেকে বিশাল মিছিল নিয়ে এসে তিনি সমাবেশস্থলে যোগ দেন। আর এই মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন আরিফুল হক চৌধুরী। ফলে আরিফের এই মিছিলটি ছিল অন্যতম আকর্ষণ। মিছিলে আগত নেতাকর্মীরা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি ছাড়াও মুখে কালেমা পাঠ করেন। আর কালেমা পাঠ করতে করতে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে গিয়ে হাজির হন। খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের মতো মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সমাবেশে বক্তব্য দেননি। তিনিও তার সময়টুকু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে দিয়ে দেন। তবে সমাবেশের প্রথম থেকে গোটা সময়ই মঞ্চের সামনের সারিতে বসা ছিলেন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও আরিফুল হক চৌধুরী। সমাবেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা জেলা বিএনপি নেতা এমরান আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন; আমাদের তালিকায় বক্তব্য দেয়ার কথা ছিল খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর। কিন্তু সময় কম থাকায় দু’জনই বক্তব্য না দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের দেয়ার সুযোগ করে দেন। তিনি জানান, সমাবেশের মূল অর্ডিনেটর ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. জীবন। তবে সার্বিক বিষয় দেখভাল করেন সিলেটের নেতা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও আরিফুল হক চৌধুরীসহ অন্য সবাই। জেলা বিএনপি নেতা ও সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল জানিয়েছেন; এই সমাবেশটি ছিল আবেগের। বেগম খালেদা জিয়ার জন্য সবাই দলবল নিয়ে এসে সমাবেশে যোগ দেন। এবং শেষ পর্যন্ত নেতাকর্মীরা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। সিলেট জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মকসুদ আহমদ জানিয়েছেন, সিলেট জেলা যুবদলও বড় মিছিল করেছে। কাফনের কাপড় পরেও নেতাকর্মীরা কর্মসূচিতে অংশ নেন। সিলেটের এই সমাবেশের মাধ্যমে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status