শেষের পাতা

কুমিল্লায় সিটি কাউন্সিলর হত্যা মামলা

দুই আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে

১ ডিসেম্বর ২০২১, বুধবার, ৯:১০ অপরাহ্ন

কুমিল্লায় চাঞ্চল্যকর সিটি কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেল হত্যা মামলার দুই আসামি পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। নগরীর সংরাইশ এলাকায় গোমতী নদীর পাড়ে গত সোমবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো- মো. সাব্বির হোসেন ও মো. সাজন। নিহত সাব্বির সুজানগর এলাকার রফিক মিয়ার ছেলে এবং সাজন সংরাইশ এলাকার কাকন মিয়ার ছেলে। ডিবি পুলিশের এস আই পরিমল চন্দ্র দাস সাংবাদিকদের জানান, নিহতদের বিরুদ্ধে হত্যা ও মাদকসহ অন্তত ৭-৮টি করে মামলা রয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, একটি পাইপ গান, তাজা গুলি ও গুলির বেশকিছু খোসা জব্দ করেছে। এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সিসিটিভির ফুটেজে কাউন্সিলরের কিলিং মিশনে অংশ নেয়া হিট স্কোয়াডের যে ৬ জনের পরিচয় শনাক্তকরণের দাবি করা হয়েছিল ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত সাব্বির ও সাজন তাদের মধ্যে অন্যতম।
পুলিশ জানায়, কাউন্সিলর সোহেল ও হরিপদ সাহা হত্যা মামলার অন্যতম দুই আসামি নগরীর সংরাইশ ও নবগ্রাম এলাকায় অবস্থান করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার গভীর রাতে পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখার একাধিক টিম অভিযান চালায়। অভিযানকালে সংরাইশ গোমতী নদীর বেড়িবাঁধের বালু মহালের কাছে ডিবি ও থানা পুলিশের টিম পৌঁছালে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। এ সময় আত্মরক্ষায় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে সাব্বির (২৮) ও সাজনকে (৩২) গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। অভিযানের সময় সন্ত্রাসীদের হাতে পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়েছেন বলে দাবি পুলিশের। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আনয়ারুল আজিম জানান, অস্ত্র-গুলি উদ্ধার, পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা-নিহতের ঘটনায় থানায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক মামলা হয়েছে। নিহত সাব্বির ও সাজনের লাশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বিকালে তাদের পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। কাউন্সিলর ও তার সহযোগী হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হচ্ছে, মো. সুমন, মো. মাসুম, আশিকুর রহমান রকি, আলম মিয়া, জিসান মিয়া ও রাব্বি ইসলাম ওরফে অন্তু। এদের মধ্যে অন্তু গত সোমবার বিকালে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেয়ার পর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।  
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২২শে নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কালো পোশাকে মুখোশ পরা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা নগরীর পাথুরিয়াপাড়া এলাকায় কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেলের থ্রি-স্টার এন্টারপ্রাইজের কার্যালয়ে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এ ঘটনায় কাউন্সিলর সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহা মারা যান। নিহত কাউন্সিলরের ভাই সৈয়দ মো. রুমন বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এলাকাবাসীর ঝাড়ু মিছিল: এদিকে খুনিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ঝাড়ু মিছিল করেছে কুমিল্লা নগরীর সুজানগর ও পাথুরিয়াপাড়া এলাকাবাসী। গতকাল বেলা ১২টায় ঝাড়ু মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। ঝাড়ু মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের দাবি ছিল যারা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে তাদের যেন এলাকায় কবর দেয়া না হয়। এ ছাড়াও মামলার ১ ও ২ নম্বর এজাহারনামীয় আসামিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
ঝাড়ু মিছিলে অংশগ্রহণকারী পাথুরিয়াপাড়া এলাকার যুবক আবদুস সালাম বলেন, ‘পুলিশ যারারে মারছে তারা এই এলাকার কুখ্যাত। তারার কারণে আইজ সুজানগর পাথুরিয়াপাড়া কলঙ্কিত হইছে। তারারে এই এলাকায় মাডি দিয়ে কলঙ্কিতকরণ যাইতো না। সুজানগর এলাকার জ্যোৎস্না বেগম বলেন, কাউন্সিলর সোহেল আমডার বাপ মা আছিলো। তারা আমডার বাপ মারে মাইরালাইছে। তারারে এই এলাকাত কবর দেওন যাইতো না। আমডা তারার কবর দেখতাম চাই না।’ নিহত কাউন্সিলর সৈয়দ সোহেলের স্ত্রী  রুনা বেগম বলেন, পুলিশের প্রতি আমার আস্থা আছে। তবে দুইজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে এই খবরেও আমি ও আমার সন্তানরা খুশি হতে পারিনি।  কারণ, এখনো মামলার ১ ও ২ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। আমি চাই তাদের গ্রেপ্তার ও কঠিন বিচার হোক।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status