প্রথম পাতা
কূটনীতিকদের প্রশ্নহীন ব্রিফিং, বৃটেন ও কানাডা অনুপস্থিত
খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই- পররাষ্ট্রমন্ত্রী
কূটনৈতিক রিপোর্টার
৩০ নভেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:৪১ অপরাহ্ন
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসাসহ সম-সাময়িক ৭ ইস্যুতে ঢাকাস্থ বিদেশি দূতদের জরুরি ব্রিফিং করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুুল মোমেন। সোমবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঘণ্টাব্যাপী ওই ব্রিফিং হয়। দায়িত্বশীল সূত্র এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষ্যমতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপে সরকারের পক্ষে বলা হয়েছে- বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনা যাবে। তিনি দেশের যে কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবেন। তবে যেহেতু তিনি একটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এবং সরকার মহানুভবতা দেখিয়ে সেই দণ্ডাদেশ স্থগিত করে তাকে বাসায় থাকার সুযোগ দিচ্ছে তাই চাইলেই তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। তারপরও যদি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান, তাহলে অবশ্যই তাকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হবে। কূটনীতিকদের সঙ্গে আলাপে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন এ-ও বলেন, খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতে সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই বরং সরকার খুশি হবে তার চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র বিদেশে পাঠিয়ে কিংবা বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে চিকিৎসা করিয়ে তিনি সুস্থ হয়ে উঠলে। এ বিষয়ে সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলেও জানান মন্ত্রী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে- রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিসহ মোট ৫১ মিশন প্রধানকে ব্রিফিংয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এরমধ্যে ৪৯জন সশরীরে হাজির ছিলেন, যার বেশির ভাগই জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক। তারা মনোযোগ দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা শুনেছেন, নোটও নিয়েছেন। ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী বরাবর কূটনীতিকদের দফায় দফায় প্রশ্ন আহ্বান করা হলেও প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসার বিষয়ে কেউই কোনো আগ্রহ প্রকাশ করেননি। তবে এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক করোনা টিকার বুস্টার ডোজ কূটনীতিকরা পাবেন কিনা জানতে চান। ফলে অনেকটা প্রশ্নহীনভাবেই ব্রিফিংটি শেষ হয়। বৈঠকে বৃটেন এবং কানাডার কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। যদিও তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সূত্র বলছে, কানাডার তরফে ব্রিফিংয়ের আমন্ত্রণ সংক্রান্ত ই-মেইল জটিলতার বিষয়টি পরবর্তীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নোটিশে আনা হয়েছে। বৃটেনের অনুপস্থিতির কারণ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি। ব্রিফিং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হোস্ট কান্ট্রির আমন্ত্রণে বিদেশি মিশনগুলোর যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা কূটনৈতিক শিষ্টাচার। এর ব্যত্যয় হতে পারবে না এমন নয়, তবে সাধারণত এটা হয় না। বৈশ্বিক মহামারির কারণে প্রায় দেড় বছর বিরতির পর সোমবার অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে সব মিশনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল উল্লেখ করে এক কর্মকর্তা গতকাল মানবজমিনকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রাচার বিভাগে সংরক্ষিত ই-মেইলেই শনিবার প্রত্যেক মিশনে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়। রোববার অনেক মিশন তাদের মিশন প্রধানের অপারগতার কথা জানিয়ে অন্য প্রতিনিধি প্রেরণের জন্য নাম প্রস্তাব করে এবং তাতে মন্ত্রণালয় অনাপত্তি জানায়। এ কারণে আমন্ত্রণের প্রায় ৯৫ ভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে বলে দাবি করেন ওই কর্মকর্তা। তিনি কানাডার দাওয়াত সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়টি অস্বীকার করেন। উল্লেখ্য, ওই ব্রিফিংয়ে সরকারের প্রতিনিধিরা দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে দাবি করেন। সেই সঙ্গে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রোববার উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ১০০০ ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদাহরণ তুলে ধরেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সার্বিক অর্থে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। কোথাও কোথাও অতি উৎসাহীদের কারণে কিছু সহিংসতা হয়েছে, যাকে খুব বড় করে দেখার সুযোগ নেই। সদ্য সমাপ্ত কপ-২৬, প্যারিস শান্তি আলোচনা, রোহিঙ্গা সংকট, ভাসানচরে বাস্তুচ্যুতদের সাময়িক স্থানান্তর, ৪-৫ই ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বিশ্বশান্তি সম্মেলন নিয়েও কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কূটনৈতিক ব্রিফিং শেষে অভিন্ন ভেন্যুতে সফররত সৌদি পরিবহনমন্ত্রী সালেহ বিন নাসের আল-জাসারের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে বিকালে সৌদি পরিবহনমন্ত্রীকে নিয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়- অন্তত ৩০টি সৌদি বেসরকারি কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। ওইসব কোম্পানি কোন খাতে কীভাবে বিনিয়োগ করবে তা নিয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে।