শেষের পাতা

তবুও সম্ভাবনা দেখছে বাংলাদেশ

ইশতিয়াক পারভেজ, চট্টগ্রাম থেকে

৩০ নভেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:২২ অপরাহ্ন

আবিদ আলী ও আবদুল্লাহ শফিক ১০৯ রানের অপরাজিত জুটি গড়ে চতুর্থ দিন শেষ করেন। এখন জয়ের জন্য প্রয়োজন মাত্র ৯৩ রান। হাতে আছে সারা দিনে ৯৩ ওভার আর অক্ষত সব উইকেট। পাকিস্তানের জয় ঠেকাতে পারবে কি বাংলাদেশ! টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন অসম্ভব বেশ কয়েকটি জয়ের গল্প আছে। সেই গল্প যারা লিখেছেন তারাতো জায়গা করে নিয়েছেন ইতিহাসের পাতায়। কিন্তু বাস্তবতা বলে অনেকটা নিশ্চিত হার জেনেও নিয়ম রক্ষায় আজ চট্টগ্রাম টেস্টের পঞ্চম দিন মাঠে নামবে টাইগাররা।
পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টের আগে ফিসফাঁস, গুঞ্জন, প্রশ্ন আর হতাশার গল্প। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম চক্রে ব্যর্থতার অজুহাত হয়েছিল করোনাভাইরাস। এবার দ্বিতীয় চক্রে কি একই পরিণতি ঘটবে! তবে সব শঙ্কার মেঘ সরিয়ে সাগরিকায় জেগেছিল আশার প্রদীপ। ধারাবাহিক না হলেও জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ব্যাটিং-বোলিংয়ে কিছুটা হলেও শোনা গিয়েছিল জেগে উঠার গল্প। প্রথম ইনিংসে ৩৩০ রানে অল আউট হয়েও পাকিস্তানকে চেপে ধরেছিল টাইগার বোলাররা। ২৮৬ রানে গুটিয়ে যায় তাদের প্রথম ইনিংস। ৪৪ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে মুমিনুল হক সৌরভের দল। কিন্তু আবারো ব্যাটিং ব্যর্থতা। ২৫ রানে ৪ ইউকেট হারিয়ে ধুঁকতে শুরু করে। তবে সেখান থেকে লিটন, মুশফিক ও ইয়াসির মিলে দলকে আশার আলো দেখাতে শুরু করে। কিন্তু ১৫৭ রানেই থামে দ্বিতীয় ইনিংস। লিডের সুবাদে পাকিস্তানের সামনে ছুড়ে দেয় ২০২ রানের লক্ষ্য। কিন্তু সফরকারী দুই ওপেনার বদলে দেয় সব চিত্র।
যদিও প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো এখনো সুযোগ দেখছেন অসম্ভব অলৌকিক কোনো আশায়। দিন শেষে তিনি বলেন, ‘দিনের প্রথম সেশনে উইকেট পড়ছে। যেভাবে ছেলেরা লড়াই করেছে তাতে আমি গর্বিত। পাকিস্তান ম্যাচে এগিয়ে আছে। তাদের ৯৩ রান প্রয়োজন, আমাদের জিততে হলে বিশেষ কিছু করতে হবে। টেস্ট ক্রিকেটে যেকোনো কিছুই সম্ভব। আমাদের জয়ের সুযোগ আছে এটা বিশ্বাস করেই কাল (আজ) মাঠে নামতে হবে। প্রথম আধঘণ্টায় এক-দুটি উইকেট তুলে নিতে পারলে, যেকোনো কিছুই সম্ভব।’ গতকাল বাংলাদেশের জন্য চতুর্থ দিনের শুরুটা ছিল ভীষণ ভাবে হতাশার। কারণ আগের দিন লিড নিয়ে ব্যাটিং ব্যর্থতায় দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়।  তবে এদিন আশার আলোও জ্বলেছিল। ৪ উইকেটে ৩৯ রান নিয়ে শুরু করে দিনের প্রথম বলেই হাসান আলিকে দারুণ এক চার মারেন মুশফিকুর রহীম। কিন্তু তৃতীয় বলেই আউট। তবে ব্যাটিং ভরসার বিদায়েও লড়াই শুরু করেন আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান লিটন দাস। তাকে দারুণ সঙ্গ দিতে শুরু করেন ইয়াসির আলী চৌধুরী। কিন্তু ১৪৪ কিলোমিটার গতির বল নিচু হয়ে আঘাত করে দেয় ইয়াসিরের হেলমেটে। পরের ওভারেই মাঠ ছাড়েন দারুণ খেলতে থাকা অভিষিক্ত ব্যাটসম্যান ৩৬ রানে অপরাজিত থেকে। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ না টিকলেও বাংলাদেশ টিকে ছিল লড়াইয়ে। ইয়াসিরের কনকাশন বদলি নুরুল হাসান সোহান জুটি জমিয়ে তোলেন লিটনের সঙ্গে।
কিন্তু এবার সেই খামখেয়ালিপনা। লং অন সীমানায় ফিল্ডার থাকার পরও আচমকা উড়িয়ে মারেন সোহান। ফিল্ডার ছিলেন সেই সুযোগের অপেক্ষাতেই। ১৫ রান করে তিনি ফেরেন মাথা নিচু করে। দলের বড় লিডের আশাও তখন আসলে ভূপাতিত। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান লিটন আবারো খেলেন দুর্দান্ত। এবার তাকে ৫৯ রানে থামান আফ্রিদি। বাংলাদেশের লেজও গুটিয়ে যায় দ্রুত। ৪ রানের মধ্যে শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে সব সম্ভাবনার সমাধি। ওই পুঁজি নিয়ে বোলারদের কিছু করা ছিল কঠিন। অভাবনীয় কিছু করা তো বহুদূর, তারা পারেনি নিজেদের স্বাভাবিক পারফরম্যান্সও মেলে ধরতে। আবিদ ও শফিক তাই অনায়াসেই দলকে এগিয়ে নেন জয়ের পথে। ৫৬ রানে দিন শেষ করেন আবিদ, ৫৩ রানে শফিক। তারা দুজন বা কোনো একজন সেঞ্চুরি পাবেন কিনা, উত্তর মিলবে পঞ্চম দিনে। তবে ম্যাচে জিতবে কোন দল, সেই উত্তর এখন মোটামুটি সবারই জানা।
 তবে বাস্তবতা তো মেনে নিতেই হয়। কোচ দিন শেষে দোষটা সরাসরি দিয়েছেন টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের। তিনি বলেন, ‘এটা হতাশাজনক। এই উইকেটে তারা যেভাবে আউট হয়েছে তা দেখে আমরা খুশি নই। সাদমান তার সর্বশেষ টেস্টে শতক হাঁকিয়েছে, কিন্তু তা খেলেছে ৫-৬ মাস আগে। নতুন বলে আমরা চাপে পড়ে যাচ্ছি। আমরা একটি মানসম্পন্ন বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে খেলছি। সাইফ মাত্র ওর ষষ্ঠ ম্যাচ খেললো। সে অনেক অনভিজ্ঞ। সাদমান হয়তো বড়জোর দশটির মতো ম্যাচ খেলেছে। এই মানের বোলারদের বিপক্ষে ভালো করা ওদের জন্য কঠিন। তাই টেস্টে ওদের আরও অনেক কাজ করতে হবে।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status