বাংলারজমিন
ভালো নেই কর্ণফুলীর সাম্পান মাঝিরা
জালাল রুমি, চট্টগ্রাম থেকে
৩০ নভেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার, ৭:২৭ অপরাহ্ন
ওরে ও সাম্পান ওয়ালা, তুঁই আঁরে গরিলে দিওয়ানা- কর্ণফুলী নদী আর এখানকার সাম্পান মাঝিদের নিয়ে এমন অনেক গান ভেসে বেড়ায় চট্টগ্রামে। একসময় বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার অনেক গল্প এই সাম্পান মাঝিদের গানের সুরে সুরে ফুটে উঠতো। সাম্পান মাঝিদের তখনকার সেই জৌলুস এখন আর নেই। আর্থিক দুরবস্থার কারণে অনেকেই বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে গাছ-বাঁশকাটা, ধানকাটা, মাছধরাসহ বিকল্প পেশায় চলে যাচ্ছেন। রাঙ্গামাটির লুসাই পাহাড়ে সৃষ্টি হয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকায় সাগরের মোহনায় মিলিত হয়েছে কর্ণফুলী। আর এই কর্ণফুলী নদীকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে সাম্পান মাঝিদের জীবনযাত্রা। এই সাম্পান মূলত হাতে চালিত ছোট ছোট ডিঙি নৌকা। যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি প্রায় ২ শত বছর আগে থেকে বন্দরে আসা জাহাজের মালামাল বিভিন্ন জায়গায় নেয়ার জন্য ছোট ছোট নৌকা তৈরি করতো মাঝিরা। এক সময় কর্নফুলীর তীরের মানুষের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল সাম্পান। কর্ণফুলী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের তথ্যমতে, এখনো কর্ণফুলী নদীর ২৩টি ঘাটের মধ্যে ১২টি ঘাট দিয়ে প্রায় দুই হাজার সাম্পান মাঝি যাত্রী পারাপার করেন। একসময়ের খরস্রোতা কর্ণফুলী পাড় দখল, দূষণসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে নাব্যতা হারাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে সাম্পান মাঝিদের জীবন-জীবিকার ওপর। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের ঐতিহ্য নানা নামের বাহারি নৌকা আর সাম্পান মাঝি। নগরীর কোতোয়ালির অভয়মিত্র ঘাটে ঝালমুড়ি ও পান-সিগারেট বিক্রি করেন ৪৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ আলী। একসময় ইসানগর ঘাটে সাম্পান চালাতেন তিনি। তবে গত বছরের লকডাউন হওয়ার পর প্রশাসন কর্ণফুলীতে সাম্পান চলাচল সীমিত করে দেয়। যে কারণে ৭ সদস্যের পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে পড়ে যান। একপর্যায়ে দীর্ঘদিনের পেশা ছেড়ে শহরে ঝাল- মুড়ি ও পান সিগারেট বিক্রির পেশা শুরু করেন। মোহাম্মদ আলী বলেন, এই সাম্পানের সঙ্গে আমাদের বাপ- দাদাদের স্মৃতি মিশে আছে। তবে দিন দিন এই পেশায় টিকে থাকা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। আমার মতো এ রকম অনেকেই বৈঠা ছেড়ে অন্য কাজে লেগে গেছে।
সূত্রমতে, একসময় মাঝিদের প্রতিনিধিরাই সিটি করপোরেশন থেকে ঘাটের ইজারা পেতো। তবে কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা ইজারা ভাগিয়ে নিচ্ছে। আর তারা মাঝিদের কাছ থেকে যাত্রী প্রতি অতিরিক্ত টোল আদায় করছে। এই বিষয়ে চট্টগ্রাম ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি আলিউর রহমান রুশাই বলেন, ‘এক শ্রেণির প্রভাবশালীদের কারণে আজকে মাঝিরা সাম্পান থেকে দূরে সরে আসছে। এই প্রভাবশালীরা ঘাটের ইজারা সিটি করপোরেশন ও উপজেলা প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজেরাই নিচ্ছে। দীর্ঘদিন সাম্পান মাঝিদের নিয়ে কাজ করা এই সমাজকর্মী বলেন, সাম্পান চালানো শুধু একটি পেশা নয়। এটি চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। তাই এই পেশার যাতে কোনোরকম ক্ষতি না হয় সেটি আমাদেরকেই দেখতে হবে। সরকারিভাবে প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে।
সূত্রমতে, একসময় মাঝিদের প্রতিনিধিরাই সিটি করপোরেশন থেকে ঘাটের ইজারা পেতো। তবে কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা ইজারা ভাগিয়ে নিচ্ছে। আর তারা মাঝিদের কাছ থেকে যাত্রী প্রতি অতিরিক্ত টোল আদায় করছে। এই বিষয়ে চট্টগ্রাম ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি আলিউর রহমান রুশাই বলেন, ‘এক শ্রেণির প্রভাবশালীদের কারণে আজকে মাঝিরা সাম্পান থেকে দূরে সরে আসছে। এই প্রভাবশালীরা ঘাটের ইজারা সিটি করপোরেশন ও উপজেলা প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজেরাই নিচ্ছে। দীর্ঘদিন সাম্পান মাঝিদের নিয়ে কাজ করা এই সমাজকর্মী বলেন, সাম্পান চালানো শুধু একটি পেশা নয়। এটি চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। তাই এই পেশার যাতে কোনোরকম ক্ষতি না হয় সেটি আমাদেরকেই দেখতে হবে। সরকারিভাবে প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে।