বাংলারজমিন

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে মৃৎশিল্পীদের অর্থনৈতিক অবস্থা

মো. রফিকুল ইসলাম, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) থেকে

৩০ নভেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার, ৭:২৭ অপরাহ্ন

আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে মৃৎশিল্পে। স্বল্প সময়ে এবং স্বল্প খরচে অধিক পরিমাণে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করতে পারছেন মৃৎশিল্পীরা। নিজেদের টিকিয়ে রাখতে প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর গ্রামের পালপাড়ার কুমাররা। ফলে বদলে যেতে শুরু করেছে মৃৎশিল্পীদের অর্থনৈতিক অবস্থাও। মৃৎশিল্পীদের আর প্রচলিত পদ্ধতিতে চাক ঘোরাতে হয় না। এখন আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় তারা তৈরি করছেন মৃৎশিল্পের বিভিন্ন উপকরণ। ইলেকট্রিক মটরের সাহায্যেই ঘুরছে পাল সম্প্রদায়ের মাটির জিনিসপত্র তৈরির চাক। এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিন ব্যবহার করে মৃৎশিল্পের কারিগরদের শারীরিক শ্রম সাশ্রয় হচ্ছে। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় নিজের ক্যারিয়ারকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছেন পাল সম্প্রদায়ের লোকজন। তারা মৃৎশিল্পের মালামাল তৈরি করছেন ইলেকট্রিক মটরের সাহায্যে। চিরিরবন্দর উপজেলার নশরতপুর গ্রামের দিঘলনালীপাড়ার মৃত নছিরউদ্দিন শাহ্‌র ছেলে এস এম মজিবর রহমান। পেশায় তিনি একজন ইলেকট্রিশিয়ান। তার উপজেলার গ্রামীণ শহর রানীরবন্দরে খানসামা সড়কের দরগাহ্‌ পাড়ে মেসার্স রাজা ইলেকট্রিক অ্যান্ড ওয়ার্কশপ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি ভাবতে ও স্বপ্ন দেখতে থাকেন কীভাবে পাল সম্প্রদায়ের মানুষদের কষ্ট লাঘব করা যায়। এ স্বপ্ন ও ভাবনা থেকেই তিনি উদ্ভাবন করেন কুমারদের জন্য বৈদ্যুতিক চাক মেশিন। তার এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিনটি এসি বৈদ্যুতিক মটরের পরিবর্তে এসি থেকে ডিসিতে রুপান্তরিত হয়ে স্বল্প বিদ্যুৎ খরচে ডিসি মটর ব্যবহার হচ্ছে এবং এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিনটি ঘুরছে। এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিন ২.৫ অশ্বশক্তিতে ১ হাজার ৪৭০ আরপিএম (গতি) রেগুলেটরের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে। এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিন তৈরিতে খরচ পড়ছে মাত্র সাড়ে ৯ হাজার টাকা। মৃৎশিল্পী নিরঞ্জন পাল (৩৮) ও শ্যামল চন্দ্র পাল (৫০) জানান, আগে প্রচলিত পদ্ধতিতে মাটি দিয়ে সারাদিন মাত্র ১০০ থেকে ১৫০টি ফুলের টব বা হাঁড়ি-পাতিল তৈরি করতে পারতাম। এখন এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিন দিয়ে আমরা সারাদিন ৭০০ থেকে ১ হাজার মাটির ফুলের টব বা হাঁড়ি-পাতিল তৈরি করতে পারছি। বিদ্যুৎ খরচও কম লাগে। একটি মেশিনে মাসে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে।
প্রতিবন্ধী রুপ কুমার পাল (৩০) এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিন ব্যবহার করে মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র অনায়াসে তৈরি করতে পারছেন। এ মেশিন ব্যবহারে সময় এবং শ্রম সাশ্রয় হচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈদ্যুতিক চাক মেশিন উদ্ভাবক এস এম মজিবর রহমান জানান, এ বৈদ্যুতিক চাক মেশিনটি দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারলে মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগরদের সময় ও শ্রম সাশ্রয় হবে এবং ৩ গুণ উৎপাদন বেশি হবে। ফলে মৃৎশিল্পীরা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হবে। এ মেশিনটি কীভাবে আরও উন্নত করা যায় তার চিন্তা-ভাবনা করছি। তিনি আরও জানান, মৃৎশিল্পের উন্নয়নে মাটির মণ্ড তৈরির মেশিন তৈরিতে মনোনিবেশ করেছেন। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সাহায্য-সহযোগিতা পেলে এ মেশিন বৃহৎ পরিসরে বাজারজাত করতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status