বিনোদন

আলাপন

শাবানা আপা ছিলেন অত্যন্ত ধৈর্যশীল মানুষ -আজিজ রেজা

মুজাহিদ সামিউল্লাহ

২৯ নভেম্বর ২০২১, সোমবার, ৯:৩৮ পূর্বাহ্ন

সিনেমার প্রাণ হচ্ছে চিত্রনাট্য বা গল্প। কিন্তু কোনো কোনো সিনেমায় গল্পকে ছাপিয়ে যায় ওই সিনেমার নাচ ও গান। এমনও ইতিহাস রয়েছে এদেশের সিনেমায় দুর্বল চিত্রনাট্য কিন্তু সেই সিনেমার দৃষ্টিনন্দন কোরিওগ্রাফির জন্য ছবিটি হিট হয়েছে। কিন্তু নায়ক নায়িকাদের ওইসব দৃশ্যে নাচের মুদ্রা তুলে দেন নেপথ্যের কারিগর নৃত্যপরিচালক। দেশীয় সিনেমায় যে কজন নৃত্য পরিচালক তাদের সৃজনশীল কোরিওগ্রাফি দিয়ে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছেন তাদের একজন আজিজ রেজা। জাতীয় চলচ্চিত্র পুুরস্কারপ্রাপ্ত এই নৃত্যপরিচালক কেমন আছেন? উত্তরে আজিজ রেজা বলেন, আল্লাহপাকের রহমত ও সবার দোয়ায় ভাল আছি।

আপনিতো স্বর্ণালী যুগের শাবানা, কবরী, ববিতা, সূচরিতা, রোজিনা, দোয়েল, অঞ্জনা, নূতন, অঞ্জু ঘোষ থেকে শুরু করে বর্তমান প্রজন্ম পরীমনির সঙ্গে কাজ করেছেন। জানতে চাই এ নায়িকাদের মধ্যে কে আপনার দৃষ্টিতে নৃত্যে পারদর্শী ছিলেন? এ নৃত্য পরিচালক বলেন, কিংবদন্তি নায়িকাদের সম্পর্কে বলার মত যোগ্যতা যোগ্যতা অর্জন করিনি। তবুও যেহেতু কয়েক যুগ ধরে আমি নৃত্য পরিচালক হিসেবে ওনাদের সঙ্গে কাজ করেছি একটু হয়তো বলতে পারবো। প্রথমেই বলতে চাই শাবানা আপার কথা।

ওনার সঙ্গে আমার অনেক ছবিতে নৃত্য পরিচালক হিসেবে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। শাবানা আপা ছিলেন অত্যান্ত ধৈর্যশীল মানুষ। তার জন্যই আমি সিনেমার নৃত্য পরিচালক হতে পেরেছি। আর চিত্র পরিচালক ঝন্টু ভাই যদি তার সিনেমায় সুযোগ না দিতেন তাহলে আমার নৃত্য পরিচালক হয়ে ওঠা হতো না। সেইসঙ্গে সিনেমায় আমার নৃত্যগুরু প্রয়াত আমির হোসেন বাবুর কাছে চির ঋণী। উনি যদি ওই সময় তার সহযোগী না বানাতেন আমাকে হয়তো আজ আজিজ রেজা হতে পারতাম না। সিনেমায় অনেক সুন্দরী নায়িকা ছিলেন। কিন্তু নৃত্য পারদর্শী নায়িকা খুব কমই ছিলেন। তাদের দুজন নায়িকাকে আমি নাচের ‘মহারানী’ বলি।

তারা হলেন অঞ্জনা ও নূতন। নৃত্যে রয়েছে তাদের অসম্ভব দক্ষতা। এর বাইরে শাবানা আপা যে কোনো নাচের মুদ্রা শেখার আগ্রহ ও ধৈর্য দেখাতেন। ববিতা ম্যাডাম অসম্ভব বিনয়ী অভিনেত্রী। ওনার একটা নিজস্ব স্টাইল ছিল। তার অভিনীত কালজয়ী সিনেমা ‘বাদী থেকে বেগম’ এ ক্ল্যাসিক্যাল নাচে তার দক্ষতা আর মরহুম গহর জামিলের কাছে তার ওই নাচের জন্য দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ বাংলা চলচ্চিত্রে স্মরণীয় আজও। কবরী আপার সেই শৈশব থেকেই নাচের সঙ্গে বেড়ে উঠা। নায়িকা হওয়ার অনেক আগে থেকেই উনি মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করতেন।

খুব সহজেই উনি মুদ্রা রপ্ত করতে পারতেন। দোয়েল, দীতি, রোজিনা, অঞ্জু ঘোষ, জিনাত এরাও শেখার প্রতি আগ্রহ দেখাতেন। আর অঞ্জনা ও নতুন এ দুু’জনার যখন নৃত্য নির্দেশনা দিতাম তারা দু’জন এই বিষয়ে এতবেশি পারদর্শী ছিলেন আমি উল্টো তাদের থেকে নতুন নতুন কাজ শিখতাম। এবার চলচ্চিত্রের নায়কদের সম্পর্কে জানতে চাই। আজিজ রেজা বলেন, রাজ্জাক ভাই আমার অনেক আগেই সিনেমার বরেণ্য নৃত্য পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন। আমি নিজেকে পরম সৌভাগ্যবান মনে করি মহারাজের সঙ্গে কাজ করেছি। আমার মতো একজন তরুণ নৃত্য পরিচালকের সঙ্গে উনি যখন কাজ করতেন উনি শিশুর মতো আমার প্রদর্শিত নাচের মুদ্রা তুলে ধরতেন।

হয়তো আমি রাজ্জাক ভাইকে নির্দেশ দিতে ভয় করছি। কিন্তু তিনি হেসে আমার কাঁধে হাত রেখে আমাকে সহজ করতেন। বলতেন পেশায় কেউ বড় ছোট নয়, আমরা সবাই সমান। বুলবুল আহমেদ ভাইয়ের কথা কী আর বলবো অসম্ভব বিনয়ী, স্পষ্টভাষী একজন মানুষ। ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’ সিনেমার কথা মনে পড়ছে। ‘শত জনমের পর তুমি এলে আমার জীবনে’- এই গানে বুলবুল ভাই আর শাবানা আপা আমার কোরিওগ্রাফীতে এ দৃশ্য পর্দায় জীবন্ত করে তুলেছিলেন। আলমগীর ভাইকে আমি সব সময় অমিতাভের স্টেপগুলো বেশি করে দিতাম। তার সঙ্গে অমিতাভের নাচের স্টাইল খুবই মানাতো। ফারুক ভাই গ্রামের যুবকদের মতো খুব হালকা নাচে সাবলীল।

আপনিতো দেশের গণ্ডি পেরিয়ে কলকাতায় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছেন। বিশেষ করে প্রসেনজিৎ, চীরঞ্জিৎ ইন্দ্রানী হালদার, ঋতুপর্ণা, রচনা ব্যণার্জী, কোয়েল, সোহমসহ অনেকেই আপনার কোরিওগ্রাফিতে কাজ করেছেন? উত্তরে তিনি বলেন, হালের সোহম ও কোয়েল যখন শিশুশিল্পী আমার কোরিগ্রাফিতে তারা ‘মান সম্মান’ সিনেমায় কাজ করেছে। ঋতুপর্ণার প্রথম ছবির কোরিওগ্রাফার আমি ছিলাম।

বর্তমানে আপনার হাতে নতুন কি কি কাজ রয়েছে? ‘নাগনাগিনীর প্রেম’ ছবির কাজ করছি। পরিচালক সুমনের নতুন দুটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হবো। এক সময়ের মহা ব্যস্ততা থেকে বর্তমানে অনেকটা দূরে। সময় কীভাবে কাটে? আজিজ হেসে বলেন, আমার একটি নাচের স্কুুল রয়েছে। যখন ব্যস্ত ছিলাম সিনেমায় তখনও স্কুলের ক্লাস নিতাম। তাছাড়া আমি বর্তমান নৃত্যশিল্পী সমিতির সভাপতি। সমিতির সদস্যদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status