শেষের পাতা
সড়কে শিক্ষার্থীরা, অনিয়মের যেন শেষ নেই
পিয়াস সরকার
২৯ নভেম্বর ২০২১, সোমবার, ৯:০৯ অপরাহ্ন
উত্তর সিটি করপোরেশনের গাড়িচালক রাজু। এই চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৩ সালে। আট বছর ধরে এভাবেই গাড়ি চালাচ্ছেন তিনি। ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখতে চাইলে উল্টো তিনি বলেন, এটা পুলিশের গাড়ি। এই গাড়ির লাইসেন্স লাগে না। বাক-বিতণ্ডার একপর্যায়ে বলেন, সিটি করপোরেশনের গাড়িচালকের আবার লাইসেন্স লাগে নাকি।
ঘটনাটি ঘটে গতকাল। গাড়িটির চালক রাজু শিক্ষার্থীদের তোয়াক্কা না করেই এগিয়ে যেতে থাকেন। এ সময় সেখানে থাকা দুই শিক্ষার্থীর ডাকে চলে আসে বেশ ক’জন। বাধ্য হন লাইসেন্স বের করতে। তাতে দেখা যায়, আট বছর আগেই মেয়াদ শেষ লাইসেন্সের। শিক্ষার্থীরা পুলিশকে জানালে জরিমানা করা হয় তৎক্ষণাৎ। গাড়ি নম্বর ঢাকা মেট্রো ঠ-১৩২৮৩৮। গাড়িতে মার্কার দিয়ে লিখে দেয়া হয় লাইসেন্স নাই।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। গতকাল ধানমণ্ডি ২৭ নম্বরে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়ক ও গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়ার জোরালো দাবি জানান। রাপা প্লাজার সামনে তিন রাস্তার মোড়ের মাঝে বসে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এক দল শিক্ষার্থী স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে রাখে। আরেক দল শিক্ষার্থী সড়কের যানবাহনে চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন বাসে হাফ ভাড়া নেয়া হচ্ছে কিনা তার খোঁজ নেয় ও ‘ডিজেল চালিত’ লেখা স্টিকার ছিঁড়ে ফেলেন। যদিও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক পুলিশ আসাদ গেট থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ সড়কের দিকে ডাইভারশন দেয়।
গতকাল বেলা ১২টার দিকে সড়কে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এতে অংশ নেয় নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, তেজগাঁও সরকারি কলেজ, লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, মুন্সি আব্দুর রউফ কলেজ, মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজ, তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, হলিক্রস কলেজ, ধানমণ্ডি গভর্মেন্ট বয়েজ হাইস্কুলসহ নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
প্রতিষ্ঠানের পোশাক পরিধান করে শিক্ষার্থীরা ‘দাবি মোদের একটাই, নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘হাফ পাস না দিলে, বাস দেখি কেমনে চলে’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘জেগেছেরে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়। আর তাদের দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে।
শিক্ষার্থীরা পুরো সময়টা জুড়ে পরীক্ষা করে যানবাহন। এতে দেখা যায়, অধিকাংশ যানবাহনের চালকই কোনো না কোনো সমস্যা নিয়ে সড়কে গাড়ি চালাচ্ছেন। প্রায়শই দেখা যায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হচ্ছে চালকদের। বিশেষ করে বাসচালক ও সহকারী ঔদ্ধত্য আচরণও করেন। এক প্রাইভেটকারে ছিলেন ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা। তাদের চালকের লাইসেন্স চেক করে শিক্ষার্থী দেখেন জুনে শেষ হয়েছে লাইসেন্সের মেয়াদ। পেছনে বসে থাকা কর্মকর্তা বলেন, আমি নিজেও জানতাম না তার লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে তার পুলিশকে না ডাকার অনুরোধে সাড়া দেয়নি শিক্ষার্থীরা। পুলিশ ডেকে জরিমানা করা হয় সেই চালককে।
আরেক প্রাইভেটকারের চালকের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয় সেপ্টেম্বরে। কিন্তু চালকের দাবি তার মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তার এই কথার পক্ষে কোনো যুক্তি দেখাতে পারেননি তিনি। এনিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চলে বেশকিছু সময় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। আর ছোট পিকআপ ভ্যানে গ্যাসের ব্যারেল নিয়ে যাচ্ছিলেন মো. সবুজ নামে এক চালক। শিক্ষার্থীরা লাইসেন্স চেক করছে তা দেখেই গাড়ি নিয়ে দ্রুত কেটে পড়তে চান তিনি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা গাড়ির সামনে ও উপরে উঠে পড়ায় তা করতে পারেননি। এরপর শিক্ষার্থীরা জানতে পারে লাইসেন্সের আবেদন করেছেন দুই বছর আগে। এই আবেদন ফরম নিয়েই চালক হয়েছেন তিনি। চালক মো. সবুজ বলেন, ভাই আমি লেগুনা চালাইতাম। এখন পিকআপ চালাই। লাইসেন্স করা হয় নাই। মাপ কইরা দেন না ভাই। পিকআপটি পাশে রাখার নির্দেশনা দেয় শিক্ষার্থীরা। এই সুযোগে পিকআপ নিয়ে পালিয়ে যান চালক।
ঢাকা মেট্রো গ-২৯-৯৫৯২ নম্বরের প্রাইভেটকারটি আটকিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। এই গাড়ির চালক কোনোভাবেই লাইসেন্স বের করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, সার্জেন ডাইক্যা আনো, হেরা দেকবো। তোমরা ক্যা? প্রায় ১০ মিনিট ধরে চলে কথাকাটাকাটি। এরপর বাধ্য হন লাইসেন্স দেখাতে। তাতে দেখা যায়, ২৭শে জুন ২০২১ এ মেয়াদ শেষ হয়েছে তার লাইসেন্সের। এই চালককে জরিমানা করার পর দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য বলেন, আসলে হাজার হাজার গাড়ির মধ্যে সব গাড়িকে চেক করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। আপনারা আমাদের কাজে সহযোগিতা করেছেন এজন্য ধন্যবাদ। আমরা এই চালকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সবথেকে বেশি উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় বাসচালকদের সঙ্গে। বিকাশ পরিবহনের এক চালক লাইসেন্স ঠিক থাকা সত্ত্বেও দেখাতে অস্বীকৃতি জানান। ‘তিনি বলেন, লাইসেন্স চেকের কাজ পুলিশ করবো। পোলাপাইনে কেন করবো? এটা কি হ্যাগো কাম? স্কুলের পোশাক পইরা আছে। কি হিগছে হ্যারা? আমি ওগো বাপের বয়সী আমারে কীভাবে তুই কইরা কয়, এই শিক্ষা দেয় স্কুলে? এরপর কিছুটা শান্ত হন শিক্ষার্থীরা। আপনি করে সম্বোধন করবার পর সেই চালক লাইসেন্স দেখান। কালক্ষেপণ না করেই যেতে দেয়া হয় বাসটিকে।’
আজিমপুরগামী এক বাসচালকের কাছে জানতে চাওয়া হয় হাফ পাস নিয়েছে কিনা। তিনি উত্তরে বলেন, আমরা সারাদিন হাফ পাস নিয়েছি। এইযে দেখেন কাগজ হাফ পাসের। এ সময় বাস থেকে নেমে এক শিক্ষার্থী বলেন, হাফ পাস নিতে চায়নি আমরা জোর করে দিয়েছি।
ঠিকানা ও সাভার পরিবহনের দুটি বাস জব্দ করে পুলিশ। এই দুই বাসেরই চালকের স্থানে ছিলেন চালকের সহকারী। ঠিকানা পরিবহনের বাসটিকে দেয়া হয় ডাম্পিংয়ে। আর সাভার পরিবহনের বাসটির নামে মামলা দেয়া হয়। ঠিকানা পরিবহনের চালকের আসনে থাকা সহকারী বলেন, ওস্তাদ বাড়িতে গেছে। এইজন্য আমি বাস লইয়া বের হইছি। শিক্ষার্থীরা বাসটিতে আটকে ফেললে তিনি সুযোগ বুঝে সেখান থেকে পালিয়ে যান।
আর ঠিকানা পরিবহনের চালকের আসনে থাকা সহকারী ওবায়দুর বলেন, ওস্তাদের অসুখ। আইজ একটা ট্রিপ মারতে দিছে। এই দুই বাসের সম্পর্কে জানতে চাইলে কর্তব্যরত সার্জেন্ট রিয়াদ হাসান ঠিকানা পরিবহনের ভাড়া সংগ্রহকারীকে আটক ও বাকিরা পালিয়েছে বলে জানান। শিক্ষার্থীরা বেলা ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত অবস্থান নিয়েছিলো। এ সময় শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে পাঁচটি মামলা ও ৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। এরই মাঝে নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় নতুন মোড় নেয় আন্দোলন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন নিরাপদ সড়কের দাবিতে। তারা আজ সোমবারও সড়কে অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আর মঙ্গলবারের মধ্যে হাফ পাসের নির্দেশনা সম্বলিত প্রজ্ঞাপন না দেয়া হলে বিআরটিএ অফিস ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।
আন্দোলনে নেতৃত্ব স্থানীয়দের মধ্যে মুন্সি আব্দুর রউফ কলেজের আলমাস হোসেন একজন। আলমাস বলেন, ২০১৮ সালে বৃহৎ আন্দোলন হলো। সেই আন্দোলনের মাধ্যমে সড়ক আইন হলো। কিন্তু চিত্র কতোখানি পাল্টালো? সড়কের অবস্থা একই রয়েছে। খাতা কলমে পরিবর্তনের জন্য শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নাম লিখিয়েছিল? আর সবথেকে বড় দাবি হাফ পাসই তো আদায় হয়নি। আমরা সড়কের চিত্র পরিবর্তন চাই। নিরাপদ সড়ক চাই। আর কোনো নাঈম সড়কে প্রাণ হারাক তা চাই না। আমাদের দাবি বাস্তবিক অর্থে বাস্তবায়ন চাই। দেশের স্বার্থে দাবি আদায় করতেই হবে আমাদের।
ঘটনাটি ঘটে গতকাল। গাড়িটির চালক রাজু শিক্ষার্থীদের তোয়াক্কা না করেই এগিয়ে যেতে থাকেন। এ সময় সেখানে থাকা দুই শিক্ষার্থীর ডাকে চলে আসে বেশ ক’জন। বাধ্য হন লাইসেন্স বের করতে। তাতে দেখা যায়, আট বছর আগেই মেয়াদ শেষ লাইসেন্সের। শিক্ষার্থীরা পুলিশকে জানালে জরিমানা করা হয় তৎক্ষণাৎ। গাড়ি নম্বর ঢাকা মেট্রো ঠ-১৩২৮৩৮। গাড়িতে মার্কার দিয়ে লিখে দেয়া হয় লাইসেন্স নাই।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। গতকাল ধানমণ্ডি ২৭ নম্বরে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়ক ও গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়ার জোরালো দাবি জানান। রাপা প্লাজার সামনে তিন রাস্তার মোড়ের মাঝে বসে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এক দল শিক্ষার্থী স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে রাখে। আরেক দল শিক্ষার্থী সড়কের যানবাহনে চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন বাসে হাফ ভাড়া নেয়া হচ্ছে কিনা তার খোঁজ নেয় ও ‘ডিজেল চালিত’ লেখা স্টিকার ছিঁড়ে ফেলেন। যদিও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক পুলিশ আসাদ গেট থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ সড়কের দিকে ডাইভারশন দেয়।
গতকাল বেলা ১২টার দিকে সড়কে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এতে অংশ নেয় নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, তেজগাঁও সরকারি কলেজ, লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, মুন্সি আব্দুর রউফ কলেজ, মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজ, তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, হলিক্রস কলেজ, ধানমণ্ডি গভর্মেন্ট বয়েজ হাইস্কুলসহ নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
প্রতিষ্ঠানের পোশাক পরিধান করে শিক্ষার্থীরা ‘দাবি মোদের একটাই, নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘হাফ পাস না দিলে, বাস দেখি কেমনে চলে’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘জেগেছেরে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়। আর তাদের দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে।
শিক্ষার্থীরা পুরো সময়টা জুড়ে পরীক্ষা করে যানবাহন। এতে দেখা যায়, অধিকাংশ যানবাহনের চালকই কোনো না কোনো সমস্যা নিয়ে সড়কে গাড়ি চালাচ্ছেন। প্রায়শই দেখা যায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হচ্ছে চালকদের। বিশেষ করে বাসচালক ও সহকারী ঔদ্ধত্য আচরণও করেন। এক প্রাইভেটকারে ছিলেন ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা। তাদের চালকের লাইসেন্স চেক করে শিক্ষার্থী দেখেন জুনে শেষ হয়েছে লাইসেন্সের মেয়াদ। পেছনে বসে থাকা কর্মকর্তা বলেন, আমি নিজেও জানতাম না তার লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে তার পুলিশকে না ডাকার অনুরোধে সাড়া দেয়নি শিক্ষার্থীরা। পুলিশ ডেকে জরিমানা করা হয় সেই চালককে।
আরেক প্রাইভেটকারের চালকের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয় সেপ্টেম্বরে। কিন্তু চালকের দাবি তার মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তার এই কথার পক্ষে কোনো যুক্তি দেখাতে পারেননি তিনি। এনিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চলে বেশকিছু সময় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। আর ছোট পিকআপ ভ্যানে গ্যাসের ব্যারেল নিয়ে যাচ্ছিলেন মো. সবুজ নামে এক চালক। শিক্ষার্থীরা লাইসেন্স চেক করছে তা দেখেই গাড়ি নিয়ে দ্রুত কেটে পড়তে চান তিনি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা গাড়ির সামনে ও উপরে উঠে পড়ায় তা করতে পারেননি। এরপর শিক্ষার্থীরা জানতে পারে লাইসেন্সের আবেদন করেছেন দুই বছর আগে। এই আবেদন ফরম নিয়েই চালক হয়েছেন তিনি। চালক মো. সবুজ বলেন, ভাই আমি লেগুনা চালাইতাম। এখন পিকআপ চালাই। লাইসেন্স করা হয় নাই। মাপ কইরা দেন না ভাই। পিকআপটি পাশে রাখার নির্দেশনা দেয় শিক্ষার্থীরা। এই সুযোগে পিকআপ নিয়ে পালিয়ে যান চালক।
ঢাকা মেট্রো গ-২৯-৯৫৯২ নম্বরের প্রাইভেটকারটি আটকিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। এই গাড়ির চালক কোনোভাবেই লাইসেন্স বের করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, সার্জেন ডাইক্যা আনো, হেরা দেকবো। তোমরা ক্যা? প্রায় ১০ মিনিট ধরে চলে কথাকাটাকাটি। এরপর বাধ্য হন লাইসেন্স দেখাতে। তাতে দেখা যায়, ২৭শে জুন ২০২১ এ মেয়াদ শেষ হয়েছে তার লাইসেন্সের। এই চালককে জরিমানা করার পর দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য বলেন, আসলে হাজার হাজার গাড়ির মধ্যে সব গাড়িকে চেক করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। আপনারা আমাদের কাজে সহযোগিতা করেছেন এজন্য ধন্যবাদ। আমরা এই চালকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সবথেকে বেশি উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় বাসচালকদের সঙ্গে। বিকাশ পরিবহনের এক চালক লাইসেন্স ঠিক থাকা সত্ত্বেও দেখাতে অস্বীকৃতি জানান। ‘তিনি বলেন, লাইসেন্স চেকের কাজ পুলিশ করবো। পোলাপাইনে কেন করবো? এটা কি হ্যাগো কাম? স্কুলের পোশাক পইরা আছে। কি হিগছে হ্যারা? আমি ওগো বাপের বয়সী আমারে কীভাবে তুই কইরা কয়, এই শিক্ষা দেয় স্কুলে? এরপর কিছুটা শান্ত হন শিক্ষার্থীরা। আপনি করে সম্বোধন করবার পর সেই চালক লাইসেন্স দেখান। কালক্ষেপণ না করেই যেতে দেয়া হয় বাসটিকে।’
আজিমপুরগামী এক বাসচালকের কাছে জানতে চাওয়া হয় হাফ পাস নিয়েছে কিনা। তিনি উত্তরে বলেন, আমরা সারাদিন হাফ পাস নিয়েছি। এইযে দেখেন কাগজ হাফ পাসের। এ সময় বাস থেকে নেমে এক শিক্ষার্থী বলেন, হাফ পাস নিতে চায়নি আমরা জোর করে দিয়েছি।
ঠিকানা ও সাভার পরিবহনের দুটি বাস জব্দ করে পুলিশ। এই দুই বাসেরই চালকের স্থানে ছিলেন চালকের সহকারী। ঠিকানা পরিবহনের বাসটিকে দেয়া হয় ডাম্পিংয়ে। আর সাভার পরিবহনের বাসটির নামে মামলা দেয়া হয়। ঠিকানা পরিবহনের চালকের আসনে থাকা সহকারী বলেন, ওস্তাদ বাড়িতে গেছে। এইজন্য আমি বাস লইয়া বের হইছি। শিক্ষার্থীরা বাসটিতে আটকে ফেললে তিনি সুযোগ বুঝে সেখান থেকে পালিয়ে যান।
আর ঠিকানা পরিবহনের চালকের আসনে থাকা সহকারী ওবায়দুর বলেন, ওস্তাদের অসুখ। আইজ একটা ট্রিপ মারতে দিছে। এই দুই বাসের সম্পর্কে জানতে চাইলে কর্তব্যরত সার্জেন্ট রিয়াদ হাসান ঠিকানা পরিবহনের ভাড়া সংগ্রহকারীকে আটক ও বাকিরা পালিয়েছে বলে জানান। শিক্ষার্থীরা বেলা ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত অবস্থান নিয়েছিলো। এ সময় শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে পাঁচটি মামলা ও ৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। এরই মাঝে নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় নতুন মোড় নেয় আন্দোলন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন নিরাপদ সড়কের দাবিতে। তারা আজ সোমবারও সড়কে অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আর মঙ্গলবারের মধ্যে হাফ পাসের নির্দেশনা সম্বলিত প্রজ্ঞাপন না দেয়া হলে বিআরটিএ অফিস ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।
আন্দোলনে নেতৃত্ব স্থানীয়দের মধ্যে মুন্সি আব্দুর রউফ কলেজের আলমাস হোসেন একজন। আলমাস বলেন, ২০১৮ সালে বৃহৎ আন্দোলন হলো। সেই আন্দোলনের মাধ্যমে সড়ক আইন হলো। কিন্তু চিত্র কতোখানি পাল্টালো? সড়কের অবস্থা একই রয়েছে। খাতা কলমে পরিবর্তনের জন্য শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নাম লিখিয়েছিল? আর সবথেকে বড় দাবি হাফ পাসই তো আদায় হয়নি। আমরা সড়কের চিত্র পরিবর্তন চাই। নিরাপদ সড়ক চাই। আর কোনো নাঈম সড়কে প্রাণ হারাক তা চাই না। আমাদের দাবি বাস্তবিক অর্থে বাস্তবায়ন চাই। দেশের স্বার্থে দাবি আদায় করতেই হবে আমাদের।