শেষের পাতা

দেশের স্থল, বিমান ও নৌ বন্দরে সতর্কতা জারির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

মরিয়ম চম্পা

২৮ নভেম্বর ২০২১, রবিবার, ৯:২২ অপরাহ্ন

বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা কমে গেছে। এ অবস্থায় নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন বিষয়ে এখনই সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের কঠোর নজরদারিতে রাখার পাশাপাশি সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করতে হবে নিয়মিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন ঠেকাতে এখনই আমাদের ল্যান্ডপোর্ট, এয়ারপোর্ট এবং সী-পোর্টে অধিকতর এবং পরিপূর্ণ সতকর্তা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, প্রথমত, দেখতে হবে এই ভ্যারিয়েন্টটি টিকা প্রতিরোধ করে কিনা? আরেকটি হলো এটার কারণে চিকিৎসা ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে কিনা। এই দুটো জিনিস আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে। তবে সবচেয়ে প্রথমে যেটা মাথায় রাখতে হবে, যতগুলো ভ্যারিয়েন্ট আছে এখন পর্যন্ত সেগুলোর সবগুলোকে টিকা দিয়ে প্রতিরোধ করা যায় কিনা। এ ছাড়া যে ভ্যারিয়েন্টগুলো তাড়াতাড়ি ছড়ায় সেগুলো আমাদের জন্য বিশেষ করে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক।
এগুলোকে যদি আগে থেকেই চিহ্নিত করা যায় এবং চিকিৎসা দেয়া যায় তাহলে নিরাময় সম্ভব। এখন আমাদের কি করতে হবে? প্রথমত, আমাদেরকে এয়ারপোর্ট, সী-পোর্ট এবং ল্যান্ডপোর্টে ভিজিলেন্সি (সতর্কতা) বাড়াতে হবে। যাতে এটা আগেই শনাক্ত করা যায়। এবং যারা তাদের সংস্পর্শে আসবে তাদেরকে সকলের থেকে আলাদা করে আরলি টেস্ট করতে হবে যেটা রেপিড এন্টিজেন টেস্ট। এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে টিকা নিশ্চিত করতে হবে। ফলে এটা কারও হলেও সেটা সিবিআর হবে না। আর যদি টিকা না নেয়া থাকে তাদের ক্ষেত্রে ওমিক্রন ভাইরাস খুব তাড়াতাড়ি ছড়ায় এবং ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। এবং ফুসফুসকে আক্রান্ত করলে যেকোনো ভ্যারিয়েন্ট মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ায়। যাদের শরীরে ইমিউন ক্যাপাসিটি কম তাদের বেলায়ও এটা হুমকিস্বরূপ।

ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চের (আইইডিসিআর) অন্যতম পরামর্শক ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, এক্ষেত্রে পরিপূর্ণ সতর্ক হতে হবে। যারা আক্রান্ত হবে সকলের জিনোম সিকোয়েন্স করতে হবে। সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় সব জায়গায় কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা এবং আক্রান্ত দেশ থেকে কেউ আসলে তাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করতে হবে। যারা শনাক্ত হবে প্রত্যেকের নমুনাকে জিনোম সিকোয়েন্স করতে হবে। এটা ছাড়া বোঝা যাবে না ভাইরাসটি এসেছে কিনা।
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও আইইডিসিআরের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, প্রথমেই আমাদেরকে চার থেকে পাঁচ জনের একটি বিশেষজ্ঞ বা আপদকালীন কমিটি গঠন করতে হবে। যারা এই ভ্যারিয়েন্টটিকে মনিটর করবে। ভ্যারিয়েন্টটি কি রকম, কোন কোন দেশে ছড়াচ্ছে, কতোটুকু মারাত্মক এটাকে মনিটর করতে হবে। যাতে করে সে অনুযায়ী আমাদের দেশ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। যে দেশ থেকে ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া যাচ্ছে সেসব দেশের সঙ্গে আমাদেরকে আপাতত চলাচল ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে। যেহেতু অন্য দেশ হয়ে ভাইরাসটি আসতে পারে তাই আমাদের দেশে যারা আসবে তাদের জন্য দুই ডোজ টিকা বাধ্যতামূলক থাকতে হবে।
এবং পিসিআর টেস্ট নেগেটিভে নিয়ে আসতে হবে যাতে করে কোনোভাবে এটা দেশে প্রবেশ করতে না পারে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বেনজির আহমেদ বলেন, আমাদের আক্রান্ত রোগী এখন অনেক কম। এরমধ্যে যদি রোগী অনেক বেড়ে যায় তাহলে আমাদের ধরে নিতে হবে ভাইরাসটি এসেছে। আক্রান্ত দেশগুলো থেকে দেশে যদি কেউ প্রবেশ করে সেক্ষেত্রে পিসিআর টেস্ট করলে হবে না। জিনোম সিকোয়েন্সিং করে দেখতে হবে ভ্যারিয়েন্টটা কি? আগামী মার্চ মাসের আগে শতকরা ৮০ ভাগ লোককে টিকার আওতায় আনতে হবে। এ ছাড়া মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদির বিকল্প নেই।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status