বাংলারজমিন

সুর পাল্টিয়েছেন সেলিম নেপথ্যে কি?

জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে

২৭ নভেম্বর ২০২১, শনিবার, ৮:৩৯ অপরাহ্ন

সুর পাল্টিয়েছেন সরাইল সদর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিম খন্দকার। গতকাল বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে সরাইল আওয়ামী লীগ নেতারা তার নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন বলে দাবি করেন। ৪৮ বছর পর সরাইল সদরের মাটিতে এই প্রথম নৌকার বিজয় ঘটার প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন তিনি। লিখিত বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বাচনে তাকে সহযোগিতা করছে না, মানবজমিনে প্রকাশিত তার এই বক্তব্য আদৌ সত্য নয় বলে দাবি করেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ‘উজানের লোকজনকে ধুলা বানাবেন রফিক, সরাইলে আতঙ্ক’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং দলের কেউই তার নির্বাচন করছে না বলে জানিয়ে ছিলেন সেলিম। তবে এর ব্যাখ্যায় সংবাদ সম্মেলনে সেলিম জানান, ‘যা বিশেষ মুহূর্তে মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়’। মানবজমিনের কাছে দেয়া বক্তব্যে তিনি আওয়ামী লীগের লোকজন তার পক্ষে নয়, বরং বিপক্ষে কাজ করছে বলেই জানিয়েছিলেন। তাদের প্রভাব ও শক্তির কারণে তার এ বিষয়ে কথা বলা মুশকিল বলেও জানান। দলের লোকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল জব্বারের নির্বাচন করছে বলেই জানান সে সময়। তার সমর্থকদের ভয় দেখানো হচ্ছে বলেও জানিয়েছিলেন। তবে মানবজমিনে খবর প্রকাশের পর দলের নেতাদের চাপে পড়েন সেলিম। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সেলিম আরও বলেন, প্রকৃত অর্থে বর্তমানে সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এডভোকেট নাজমুল হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট আবদুর রাশেদ, এডভোকেট জয়নাল উদ্দিন,  সৈয়দ আলী আবদালসহ সকল স্তরের নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে আমার নির্বাচন পরিচালিত হচ্ছে। সরাইল সদরের প্রতিটি গ্রামে ও মহল্লায় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নৌকা মার্কার নির্বাচনী বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ায় আমি নৌকার বিজয়ে শতভাগ আশাবাদী। উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এডভোকেট নাজমুল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে আলীনগর মাদ্রাসা মাঠ, উচালিয়াপাড়া ও কুট্টাপাড়ায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে উঠোন বৈঠক ও গণসংযোগ করেছেন বলে জানান। এদিকে এক নির্বাচনী সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুরের দেয়া বক্তব্যের ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। খবর প্রকাশের পর বিষয়টি সরাইলে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। গত ১৭ই নভেম্বর রাতে উপজেলার শাহজাদাপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোসাম্মৎ আছমা বেগমের সমর্থনে আয়োজিত এক সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে বলেন- ‘আপনাদের সুযোগ হাতছাড়া কইরেন না। দেওড়া আমার মামার বাড়ি। আমরা জানি তার হালকা একটু উজানে। আপনারা সাহস করে দাঁড়াইয়া থাকলে, এই উজান-মুজানে কাম অইতো না। তারার উজানে গাঁও আছে, শাহবাজপুর আছে, সরাইল আছে। আমরা আছি কুট্টাপাড়ার মোড়, চৌরাস্তার মোড়। বাপ ডাহাইয়া দিমু, যদি এবার ১৯/২০ করে দেওড়ার কোনো প্রার্থী। ক্লিয়ার কইরা বইলা গেলাম, যদি কোনো জুলুম অত্যাচার করতে চাই এই মাইনরিটি গ্রামে, এটার জবাব আমরা প্রশাসন দিয়া দিমু এবং ওইদিনই দিমু তাৎক্ষণিক। ৫ মিনিটের মধ্যে দেখবেন দুলা উড়াই লাইছে বাইরাইয়া। কোনো বেডা যদি এখানে জোর জবরদস্তি করতে আসে। আমি পাপী মুখে বইলা গেলাম। আপনারা মনে রাইখেন কথাটা ২৮ তারিখ। আমি তো হালার ‘ঘোড়া’ লাইয়া চেয়ারম্যান অইলেও আমি তো চালাক মানুষ। আমি আবার জালের ভিতরে গিয়া হামাইয়া গেছিগা। আমারে তো কোনো বেডা কইতা পারে না, এই তুমি তো আওয়ামী লীগ না, ‘ঘোড়া’। আওয়ামী লীগের হেরার বাপের কাম করি। হেরা যদি করে এক হাত, আমি করি ৬ হাত। বলার সাহসই পায় না তুমি স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলা।’
দল থেকে বহিষ্কৃত উপজেলা চেয়ারম্যানের এ বক্তব্যের নিন্দা জানান উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এডভোকেট নাজমুল হোসেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখানে অস্তিত্ব নিয়েই আছে। পুরো শক্তি নিয়েই দল এখানে কাজ করছে। জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন- উপজেলা চেয়ারম্যানের এ বক্তব্য পাগলের প্রলাপ ছাড়া কিছুই নয়। দলের বৈঠকে আলোচনার পর এ বিষয়ে আইনি কোনো পদক্ষেপ নেয়া যায় কিনা সেটি আমরা দেখবো। আল মামুন সরকার জানান, সরাইল সদরে রফিক ঠাকুর আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে এটা ঠিক। তবে কোনো কোনো জায়গায় সে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে। আগামীকাল রোববার সরাইল উপজেলার ৯ ইউনিয়নে ভোট। অভিযোগ রয়েছে এই ৯ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের পছন্দের লোকজনকে সমর্থন করছেন। কোনো কোনো ইউনিয়নে একাধিক প্রার্থীকেও সমর্থনের মায়াজালে আবদ্ধ রেখেছেন তারা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status