দেশ বিদেশ

মৌলবাদী শক্তির পুনরুত্থানের আশঙ্কা ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের

সংসদ রিপোর্টার

২৬ নভেম্বর ২০২১, শুক্রবার, ৯:০২ অপরাহ্ন

সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতসহ মৌলবাদী শক্তির পুনরুত্থানের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার। গতকাল সংসদ অধিবেশনে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন। রাশেদ খান মেনন বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন বাংলাদেশ কোনো ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র হবে না। হবে অসামপ্রদায়িক রাষ্ট্র। কিন্তু জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসন এই ধর্মনিরপেক্ষতাকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। ফিরিয়ে এনেছিলেন ধর্ম নিয়ে রাজনীতি। ফিরিয়ে এনেছিলেন স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে। সামরিক শাসক এরশাদও একই কাজ করেছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, ইসলাম আমাদের দেশের মানুষের প্রাণের ধর্ম। সেই ধর্মকে ব্যবহার করা হয় রাজনৈতিক প্রয়োজনে। তারা রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করেছে, সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ করছে। জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকাকে চ্যালেঞ্জ করছে। রাশেদ খান মেনন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তালেবানদের সঙ্গে যে আপস করেছিল তারই ফলশ্রুতিতে তালেবানরা যখন কান্দাহার থেকে কাবুল রওনা হয়, তখন তিন লাখ সরকারি সেনা আনুগত্য পরিবর্তন করেছে। আজ ধর্মবাদী রাজনীতির সঙ্গে আপস বাংলাদেশে জামায়াতের পুনরুত্থান ঘটাবে কিনা বলা যায় না। বাংলাদেশ-পাকিস্তান ক্রিকেট মাঠে বাংলাদেশি যুবকদের পাকিস্তানি জার্সি গায়ে পাকিস্তানি পতাকা উত্তোলন নতুন বার্তা দিচ্ছে। তিনি বলেন, এই পঞ্চাশ বছরে দেখেছি দু’টি সামরিক শাসন এবং একটি সেনা শাসন। এই পঞ্চাশ বছরে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা যেমনি পর্যুদস্ত হয়েছে, তেমনি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিজয়ও হয়েছে। দেখেছি যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক পুনর্বাসন এবং একইসঙ্গে পরবর্তীতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। রাশেদ খান মেনন বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর গৌরবের আবার অগৌরবের। এই পঞ্চাশ বছরে আমরা লেস ডেভেলপমেন্ট থেকে ডেভেলপমেন্টের রোল মডেল হয়েছি। একইসঙ্গে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের। এজন্য অভিনন্দন প্রধানমন্ত্রীকে। কিন্তু আমরা যে উদারনৈতিক অর্থনীতি অনুসরণ করছি তাতে আমাদের উন্নয়ন অন্তর্ভুক্তিমূলক হচ্ছে না। আজ জন্ম নিচ্ছে তীব্র বৈষম্যের। রাশেদ খান মেনন বলেন, শেখ হাসিনার এই তিন টার্মে দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হচ্ছে। সব সূচকে পাকিস্তানকে আমরা ছাড়িয়ে গেছি। জিডিপি ও মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। কিন্তু দেশের সম্পদ মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর হাতে। কোভিডকালেও কোটিপতিদের সংখ্যা বেড়েছে। ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ এই অঞ্চলে প্রথম। গড় জাতীয় আয় বাড়লেও জনগণের আয় কমেছে। কোটিপতিদের সংখ্যা বাড়লেও  ৫ লাখ কৃষকের ব্যাংক হিসাব বন্ধ হয়ে গেছে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, ১৫ দল, তিন জোটের অঙ্গীকার, ১৪ দল গঠনের মধ্য দিয়ে আমরা বর্তমান পর্যায়ে এসেছি। নেতৃত্বে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এর ভিত্তি ছিল অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য। আমাদের জোট আছে, ১৪ দলে আছি। তবে কেবল দিবস পালনে। নীতি-নির্ধারণে কোনো অংশ নয়। সরকারের দায় আমাদেরও বহন করতে হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তুলকে অসামপ্রদায়িক-গণতান্ত্রিক চেতনায় দেশ পরিচালনার আহ্বান জানান তিনি। মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে স্বাধীন হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। পাকিস্তানি ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার অঙ্গীকার নিতে হবে। বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status