শেষের পাতা

মামলা ষড়যন্ত্রমূলক দাবি মামুনুলের আইনজীবীর

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে

২৫ নভেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:২১ অপরাহ্ন

হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় আদালতে
সাক্ষ্য দিয়েছেন তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী আলোচিত সেই জান্নাত আরা ঝর্ণা। গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালতে প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা তিনি সাক্ষ্য দেন। দুপুর সোয়া ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত আসামি পক্ষের আইনজীবীরা ঝর্ণাকে জেরা করেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রাকিবুজ্জামান রকিব জানান, গত ৩রা এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টের একটি রুমে নিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জান্নাত আরাকে ধর্ষণ করেন মামুনুল হক। এর আগে দুই বছর ধরে তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করছিলেন আসামি। আদালতে বাদী আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে বারবার প্রমাণের চেষ্টা করেছেন, জান্নাত আরা ঝর্ণা মামুনুল হকের স্ত্রী। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বাদীকে ৪১ বার প্রশ্ন করেছেন, কিন্তু বাদী প্রতিবার বলেছেন- তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। জেরাকালে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা মামুনুল হকের স্ত্রী জান্নাত আরা এটা প্রমাণ করতে পারেননি। মামলার ৪৩ সাক্ষীর মধ্যে মামলার বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আদালতের কাঠগড়ায় প্রথমে মামুনুল হক বার বার বাদীকে উদ্দেশ্য করে দিকনির্দেশনামূলক কথা বলার চেষ্টা করেছেন। সাক্ষী দেয়ার সময় মুখের হিজাব খুলতে বলায় কাঠগড়ায় উপস্থিত মামুনুল হক ঝর্ণাকে বলেন, ‘শরীয়তের হুকুম হিজাব খুলবা না ঝর্ণা’। এতে ঝর্ণা একবার হিজাব খুলে বিচারককে মুখ দেখিয়ে ফের হিজাব দিয়ে মুখ ঢেকে রাখেন। এ ছাড়াও মামুনুল হক দৃষ্টিভঙ্গিতে বাদী ঝর্ণাকে তার দিকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন। মামলার এজাহারে যা উল্লেখ রয়েছে তাসহ বিভিন্ন বিষয় বাদী সাক্ষীতে উল্লেখ করেন।
আদালতে আসামি পক্ষের আইনজীবী বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মো. জয়নুল আবেদীন মেসবাহ্‌ বলেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে এই ধর্ষণের মামলা করা হয়েছে। বাদীকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলেও তিনি রাজি হননি। সেখানে তিনি ডাক্তারের কাছে বলেছেন, কলেমা পড়ে মামুনুল হকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে। তার অনুমতি ছাড়াই ডিএনএ পরীক্ষা করানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জান্নাত আরা বলেছেন- মামুনুল হক তাকে কলেমা পড়ে শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে করেছেন। মামুনুল হকের কথায় তিনি ঢাকায় এসেছেন। তিনি এই শারীরিক সম্পর্কের কথা কাউকে বলেননি। জেরায় বাদী অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। সে ক্ষেত্রে আমরা মনে করি, সফলতা পেতে পারি।’
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) নাজমুল হাসান জানান, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মামুনুল হককে আদালতে হাজির করা হয়। এদিন মামলার বাদী ঝর্ণা সাক্ষী দিয়েছেন। বিকাল ২টায় সাক্ষী শেষে মামুনুল হককে ফের কাশিমপুর কারাগারে নেয়া হয়েছে।
এজাহারে ঝর্ণা অভিযোগ করেছেন, স্বামী শহীদুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে ২০০৫ সালে মামুনুল হকের সঙ্গে ঝর্ণার পরিচয় হয়। সাংসারিক মতানৈক্যের মধ্যে মামুনুল সুকৌশলে প্রবেশ করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে থাকেন। সাংসারিক টানাপড়েনের একপর্যায়ে মামুনুলের ‘পরামর্শে’ ২০১৮ সালের ১০ই আগস্ট শহীদুলের সঙ্গে ঝর্ণার বিচ্ছেদ হয়। তার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল তাকে ঢাকায় আসার জন্য ‘প্ররোচিত’ করেন। ঢাকায় আসার পর তার পরিচিত বিভিন্ন অনুসারীর বাসায় রেখে মামুনুল নানাভাবে তাকে ‘কুপ্রস্তাব’ দেন। এর ধারাবাহিকতায় মামুনুলের পরামর্শে কলাবাগানে এক বাসায় সাবলেট থাকতে শুরু করেন ঝর্ণা। বিয়ের আশ্বাস দেখিয়ে এবং অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কও করেছেন। কিন্তু বিয়ের কথা বললে মামুনুল করছি-করবো বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। বাদী আরও অভিযোগ করেন, ঘোরাঘুরির কথা বলে ২০১৮ সাল থেকে মামুনুল বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্টে তাকে নিয়ে যেতেন। সর্বশেষ গত ৩রা এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টে ঘুরতে নিয়ে গিয়েও মামুনুল হক তাকে ‘ধর্ষণ’ করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status