দেশ বিদেশ

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস

সুব্রত বিশ্বাস (শুভ্র)

২৫ নভেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:১০ অপরাহ্ন

আজ ২৫শে নভেম্বর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। নারীর ওপর যেকোনো ধরনের নির্যাতনের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে সর্বস্তরের মানুষের উদ্বুদ্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে এ দিনটি পালন করা হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ২৫শে নভেম্বরকে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
১৯৬০ সালের ২৫শে নভেম্বর লাতিন আমেরিকার ডমিনিকান রিপাবলিকের স্বৈরাচারী শাসক রাফায়েল ক্রজিলোর বিরুদ্ধে একটি আন্দোলন চলাকালে শাসকচক্র প্যাট্রিয়া, মারিয়া তেরেসা ও মিনার্ভা মিরাকেল নামের ৩ বোনকে হত্যা করে। এই হত্যার প্রতিবাদে ১৯৮১ সালে লাতিন আমেরিকার এক নারী সম্মেলনে ২৫শে নভেম্বরকে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৯৩ সালে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত মানবাধিকার সম্মেলনে ২৫শে নভেম্বরকে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ হিসেবে মেনে নেয়া হয়। কিন্তু জাতিসংঘ দিবসটিকে স্বীকৃতি দিতে দীর্ঘ সময় ব্যয় করে। অবশেষে ১৯৯৯ সালের ১৭ই ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ২৫শে নভেম্বরকে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, পরিবর্তিত হচ্ছে সমাজ কাঠামো, বিকশিত হচ্ছে সভ্যতা। পরিবর্তন হচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রায়। কিন্তু বাস্তব সত্য এটাই যে, বন্ধ হচ্ছে না নারী নির্যাতন। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী এবং সমাজ-সভ্যতার উন্নয়নে তাদের অবস্থান অনস্বীকার্য। কিন্তু তারপরও নারীরা শান্তি, নিরাপত্তা ও অধিকারের দিক দিয়ে এখনো পুরুষের সমকক্ষ নয়। অর্থাৎ এই নারীর কারণেই একটি সন্তান পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়, পৃথিবীর আলো উপভোগ করতে পারে এবং একটি সুন্দর জীবনের সূচনা করে।
প্রতি ৩ জন নারীর মধ্যে একজন তার জীবনে কোনো না কোনো সময়ে শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়। প্রতি ৩ জন নারীর মধ্যে দুজন স্বামী/বিপরীত লিঙ্গের বন্ধু/পরিবারের সদস্যদের দ্বারা পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হন। নির্যাতনের শিকার নারীদের মধ্যে বেশির ভাগই নির্যাতনের বিরুদ্ধে সমাজ লোকলজ্জার ভয়ে মুখ খোলেন না।
বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে বিবিসি ও ইউএনএফপি-এ প্রদত্ত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে বিবাহিত নারীদের মধ্যে প্রায় ৮৭ শতাংশ পারিবারিক সহিংসতার শিকার। ঐ নারীদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ প্রতিনিয়ত প্রহৃত হয়, এদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ নির্যাতিত নারীর চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এক তৃতীয়াংশ নারী স্বামী দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়। নির্যাতনের ৫০ শতাংশ নারী ১৪ বছরের আগেই ধর্ষণের শিকার হন। এ ছাড়া এসিড নিক্ষেপ, আগুন দেয়া, সমাজচ্যুত করা, জোরপূর্বক তালাক দেয়া এগুলো প্রতিনিয়ত হচ্ছে।
মানব সভ্যতার পেছনে নারীর অবস্থানকে কোনোভাবেই ছোট করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। লাখ লাখ বছর আগে গুহাবাসী নারী-পুরুষ যৌথ প্রচেষ্টায় যে জীবন শুরু করেছিল, তা ক্রমেই বিকশিত হয়ে আজকের সভ্যতার সৃষ্টি হয়েছে। তাই  ভোগ্যপণ্য হিসেবে না দেখে তাকে তার সঠিক মর্যাদা দিতে হবে। সকল অপমান  থেকে নারীকে মুক্ত করতে হবে। নারীরা প্রতিনিয়ত কোনো না কোনোভাবে নিয়মিত নির্যাতনের শিকার হন। নির্যাতিত নারীদের অধিকাংশই নীরবে নির্যাতন সহ্য করেন। এই নির্যাতন নারীর অগ্রগতির পটে একটি মারাত্মক হুমকি বা বাধা।
উন্নয়নের মহাসড়কে আগুয়ান বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীর আবদান অনস্বীকার্য। ভুলে গেলে চলবে না, নারী ভোটও কিন্তু অর্ধেক ভোট। নারীবান্ধব সমাজ অর্থনীতিকে এগিয়ে নেবে। নারীকে নিরাপদ পৃথিবী দাও, নারী তোমাদের দেবে ততধিক বাসযোগ্য এক সমাজের নিশ্চয়তা।
লেখক:  সমন্বয়ক, মিডিয়া সেল এবং কাউন্সিলর, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status