ফেসবুক ডায়েরি

খাদ্যের অভাব নয়, অভাব মানুষের আর্থিক সক্ষমতার; এর চেয়ে বড় বৈষম্য কী হতে পারে?

আলী রীয়াজ

৫ নভেম্বর ২০২১, শুক্রবার, ২:৩২ অপরাহ্ন

দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, উভয়ই আমাদের মনোযোগ দাবি করে। যারা বাংলাদেশে আছেন তাঁদের যেমন তেমনি যারা বাংলাদেশ নিয়ে ভাবেন, গবেষণা করেন তাঁদেরও।

বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে যে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় বেড়েছে, উল্লেখযোগ্য ভাবেই বেড়েছে। ব্যুরোর হিসেব অনুযায়ী এখন দেশের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ ডলার। মাথাপিছু গড় আয়ের হিসেবের ফাঁক ফোঁকর সবাই বোঝেন, ফলে যাঁদের পকেট শুন্য তাঁরা নিশ্চয় আগামী কাল ব্যাংকে হাজির হয়ে তাঁর ভাগের টাকা চাইবেন না।

কিন্ত সরকারের পক্ষ থেকে যখন এই সুসংবাদ দেয়া হয়েছে ঠিক সেই সময়ে আর একটা তথ্য জানা গেছে। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)-এর যৌথভাবে করা একটি জরিপ বলছে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ দেশের ১৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ বা সোয়া ৩ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই বছরের মার্চ মাসে নতুন দরিদ্রের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৪৫ লাখ। অর্থাৎ গত ছয় মাসে ৭৯ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়েছে। তাঁর মানে দাঁড়াচ্ছে যে একদিকে দেশের এক বড় সংখ্যক মানুষ যখন আরও দরিদ্র হচ্ছেন সেই সময়ে দেশের মানুষের গড় আয় বাড়ছে।

এই গড় আয়ের হিসেবের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষ করে ভিত্তি বছর বদলে দেয়ার কারণে। এই পদ্ধতিগত আলোচনা নিশ্চয় গুরুত্বপূর্ণ, তাতে উন্নয়নের ফাঁকিটা বোঝা যায়। কিন্ত যেটা সহজেই বোঝা যায় তা হচ্ছে এই বাস্তবতা – দরিদ্র বাড়ছে। কেমন দারিদ্র – ‘জরিপে দেখা যায়, মানুষের খাদ্যের ক্ষেত্রে ব্যয় কোভিডকালের তুলনায় কমে গেছে। শহরে দরিদ্র মানুষের মাথাপিছু ব্যয় ছিল ৬৫ টাকা। এখন তা ৫৪ টাকা। গ্রামে ব্যয় ছিল ৬০ টাকা, এখন ৫৩ টাকা।’ তার মানে মানুষ খেতে পারছেন না। খাদ্যের অভাব আছে তা নয়, অভাব মানুষের আর্থিক সক্ষমতার। এর চেয়ে বড় বৈষম্য কী হতে পারে? একই সঙ্গে জরিপ প্রতিবেদনটির একজন প্রতিবেদক বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিনের কথাটি স্মরণ করা যাতে পারে, ‘নতুন এই দারিদ্র্য সাময়িক নয়, দীর্ঘমেয়াদি। এটি বেশ উদ্বেগের ও ক্ষতিকর।’ এই দরিদ্র মানুষদের নিয়ে সরকারের উদ্বেগ আছে এমন মনে হয়না।

যারা কষ্টেসৃষ্টে বেঁচে-বর্তে আছেন, সীমিত আয়ে চলছেন তাঁদের জীবন যাপনের ওপর আরেক দফা খড়গ নামার ব্যবস্থা হয়েছে – ডিজেল কেরোসিনের দাম বেড়েছে ২৩%। এর প্রভাব যে সব জিনিষপত্রের ওপরে পড়বে সেটা বোঝার জন্যে জ্যোতিষী হতে হয় না, অর্থনীতিবিদও নয়। বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের দাম প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে। নিম্ন এবং নিম্ন মধ্যবিত্তের জন্যে বেঁচে থাকার সংগ্রাম কঠিন হচ্ছে প্রতিদিন। কিন্ত বাংলাদেশে অর্থ বিত্তের আলোকচ্ছটা এত যে বাংলাদেশের এই চিত্রটা নিয়ে আমরা কতটা ভাবি, ভাবতে চাই সেটাই প্রশ্ন।

আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট।

(লেখাটি লেখকের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status