মত-মতান্তর
এ কালের হারুন অর রশিদের আক্ষেপ, বেবাক কষ্ট খালি গরিবের
কাজল ঘোষ
৫ নভেম্বর ২০২১, শুক্রবার, ১১:২৯ পূর্বাহ্ন
নামটি শুনেই চমকে উঠেছিলাম। মনে পরে যায় বাগদাদের সেই শাসকের কথা। যার নাম ছিল হারুন অর রশিদ। তিনি ছিলেন ইসলামের স্বর্ণযুগ বলে পরিচিত সময়ের খলিফা। একেবারে ইশকুলের পাঠ্য বইতে ব্যতিক্রমি এই শাসকের একটি কাহিনি এখনও আন্দোলিত করে। যিনি কিনা প্রজাদের কষ্ট দেখতে, অবস্থা বুঝতে রাতে ছদ্মবেশে নগরীতে ঘুরে বেড়াতেন। প্রজাদের কষ্টের প্রতিকার করতেন।
হারুন অর রশিদের তেমন একটি ঘটনার গল্প খুব মনে আছে। তিনি এক রাতে নগরীতে হেঁটে যাচ্ছিলেন হঠাৎ কানে আসে শিশুদের কান্না। কাছে গিয়ে বুঝতে পারেন খাদ্যের অভাবে শিশুরা কান্না করছে। মা তাদের খাবার রান্নার কথা বলে অপেক্ষায় রেখেছে। কিন্তু দিনান্তে সেই মা তেমন কোন খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেনি সন্তানদের জন্য। হারুন অর রশিদ তাদের খাবারের ব্যবস্থা করে মহলে ফিরেন।
হাজার বছরের সেই বাগদাদ নগরী আর খলিফা হারুন থেকে ফিরি কারওয়ান বাজারের হট্টগোলে। নিম্ন আর মধ্যবিত্তের কপালে ভাঁজ। এটি বলি রেখা বা বয়সের জন্য নয়। এ অবস্থা বাজার মূল্যের খেসারত দিতে গিয়ে। নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যে মানুষ অস্থির। প্রতিকার নেই। যার যেভাবে খুশি দাম বাড়াচ্ছে। বলা নেই, কওয়া নেই ডিজেলের দাম বেড়ে গেল লিটারে পনের টাকা। পন্য পরিবহনের ট্রাক গেল অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে। রাষ্ট্র কোন খবর রাখছে কি? চারপাশের স্থবিরতা দেখে মনে তো হয় না। তারচেয়ে অনেক বেশি সরব দেখতে পাচ্ছি দূর প্রবাসে বিনিয়োগ সন্মেলন নিয়ে। ডিজেলের দাম লিটারে পনের টাকা বাড়ায় সাধারণ মানুষকে কি পরিমান বাড়তি অর্থ দিতে হবে নিত্যপণ্যে এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কোন পর্যায়েই আলোচনার খবর দেখিনি। একটির মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য বিষয়গুলোর কি হবে?
এমনটি ভাবতে ভাবতেই বাজারের ভিড়ে কথা বলছিলাম ষাটোর্ধ রিকশাচালক হারুন অর রশিদের সঙ্গে। রাজশাহীর পদ্মাপাড়ের মানুষ হারুন পাঁচ সন্তান নিয়ে ঢাকায় থিতু হয়েছেন বছর দশেক আগে। বাস করেন রাজধানীর তেজতুরি বাজার এলাকায়। কিন্তু ফি বছর এই খরচ যেভাবে বাড়ছে তাতে তার পথে বসা ছাড়া আর উপায় নেই। ভালোই ছিলেন। কিন্তু এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। খরচের বোঝা বাড়ছেই। প্রতিবেদককে দেখে নিজ থেকেই বলে উঠেন, বাবা আমরা কি করুম? দিনে তিন কেজি চাল আর এক কেজি আটা লাগে সংসারে। প্রতিদিন দশ থেকে পনের টাকা কইরে বাড়লে আমার খরচ মাসে বাড়ছে দুই তিন হাজার টাকা। এ টাকা কোত্থেকে পামু? বাবা, বেবাক কষ্ট খালি গরিবের।
সম্বিৎ ফিরে নিজের আয়নায় তাকাই। দু’মাস আগে এক ডজন ডিম কিনেছি পঁচাশি থেকে নব্বই টাকা করে। এখন তা পৌঁছে গেছে একশত তিরিশে। মহল্লায় একের পর এক দোকানে জিজ্ঞাসা করেও এর সদুত্তর পাইনি, কেন বাড়লো এই দাম? গরিবের মাংস বা প্রোটিন বলে পরিচিত ডিমের দাম নিয়ে মিডিয়া কর্মী হিসাবে সরকারের মন্ত্রণালয়ের বা বাজার মনিটরিংয়ে যুক্তদের কোন তৎপরতা চোখে পরেনি এখনও পর্যন্ত।
বাসে বসে অফিস আসছি। পাশে বসা এক যাত্রীর ফোনে অপর প্রান্তের কথা কানে এলো। তিনি বলছেন, কি খবর? খুব ভালো? হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘট। বুয়েটের পরীক্ষার্থী এখন ঘরেই বসে আছে। আরেকজন নরসিংদী থেকে চাকরির পরীক্ষায় ঢাকায় না আসতে পেরে হা পিত্যেশ করছে। গতকাল রাতে পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণায় সারাদেশের পরীক্ষার্থীদের মাথায় হাত। রাজধানীর বহু পরীক্ষা কেন্দ্রে আজ চাকরি প্রার্থীদের অংশ নিতে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। আবার আজই পরীক্ষা সাত কলেজেরও। সু-শাসন কোথায়? এসব নিয়ে ভাবার প্রশাসন কোথায়? কোথাও এ-নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কথা বলতে শুনছি না। বিষয়টি যেন এমন, বকাউল্লা বকে যা, শোনাউল্লা শুনে যা।
বাসে বসা অপর যাত্রী চড়া সুরে সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি বলে উঠলেন, এমনটি হবেই। সরকারকে বলার কেউ নেই। এ-জন্যই দেশে শক্তিশালী বিরোধীদল লাগে। এই যে ডিজেলের দাম বাড়লো, বাজারের লাগামহীন চিত্র কে বলবে এসব নিয়ে? এমন কথার রেশ না কাটতেই নির্ধারিত স্টপেজে নামি। কিন্তু মাথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে যাত্রীর কথাগুলো। অসংখ্য মানুষ দুর্ভোগে আর আমরা মাথাপিছু আয় বাড়ছে সেই গল্প বলছি। কিন্তু সেই আয়ের সুফল তো দেখতে পাচ্ছি না। অর্থনীতি ভালো বুঝি না, কিন্তু এটুকু বুঝি মানুষ শান্তিতে নেই। বড় লোক আরও বড় হচ্ছে আর গরিব মানুষ নিঃস্ব থেকে কেবলই নিঃস্ব হচ্ছে।
হারুন অর রশিদের তেমন একটি ঘটনার গল্প খুব মনে আছে। তিনি এক রাতে নগরীতে হেঁটে যাচ্ছিলেন হঠাৎ কানে আসে শিশুদের কান্না। কাছে গিয়ে বুঝতে পারেন খাদ্যের অভাবে শিশুরা কান্না করছে। মা তাদের খাবার রান্নার কথা বলে অপেক্ষায় রেখেছে। কিন্তু দিনান্তে সেই মা তেমন কোন খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেনি সন্তানদের জন্য। হারুন অর রশিদ তাদের খাবারের ব্যবস্থা করে মহলে ফিরেন।
হাজার বছরের সেই বাগদাদ নগরী আর খলিফা হারুন থেকে ফিরি কারওয়ান বাজারের হট্টগোলে। নিম্ন আর মধ্যবিত্তের কপালে ভাঁজ। এটি বলি রেখা বা বয়সের জন্য নয়। এ অবস্থা বাজার মূল্যের খেসারত দিতে গিয়ে। নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যে মানুষ অস্থির। প্রতিকার নেই। যার যেভাবে খুশি দাম বাড়াচ্ছে। বলা নেই, কওয়া নেই ডিজেলের দাম বেড়ে গেল লিটারে পনের টাকা। পন্য পরিবহনের ট্রাক গেল অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে। রাষ্ট্র কোন খবর রাখছে কি? চারপাশের স্থবিরতা দেখে মনে তো হয় না। তারচেয়ে অনেক বেশি সরব দেখতে পাচ্ছি দূর প্রবাসে বিনিয়োগ সন্মেলন নিয়ে। ডিজেলের দাম লিটারে পনের টাকা বাড়ায় সাধারণ মানুষকে কি পরিমান বাড়তি অর্থ দিতে হবে নিত্যপণ্যে এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কোন পর্যায়েই আলোচনার খবর দেখিনি। একটির মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য বিষয়গুলোর কি হবে?
এমনটি ভাবতে ভাবতেই বাজারের ভিড়ে কথা বলছিলাম ষাটোর্ধ রিকশাচালক হারুন অর রশিদের সঙ্গে। রাজশাহীর পদ্মাপাড়ের মানুষ হারুন পাঁচ সন্তান নিয়ে ঢাকায় থিতু হয়েছেন বছর দশেক আগে। বাস করেন রাজধানীর তেজতুরি বাজার এলাকায়। কিন্তু ফি বছর এই খরচ যেভাবে বাড়ছে তাতে তার পথে বসা ছাড়া আর উপায় নেই। ভালোই ছিলেন। কিন্তু এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। খরচের বোঝা বাড়ছেই। প্রতিবেদককে দেখে নিজ থেকেই বলে উঠেন, বাবা আমরা কি করুম? দিনে তিন কেজি চাল আর এক কেজি আটা লাগে সংসারে। প্রতিদিন দশ থেকে পনের টাকা কইরে বাড়লে আমার খরচ মাসে বাড়ছে দুই তিন হাজার টাকা। এ টাকা কোত্থেকে পামু? বাবা, বেবাক কষ্ট খালি গরিবের।
সম্বিৎ ফিরে নিজের আয়নায় তাকাই। দু’মাস আগে এক ডজন ডিম কিনেছি পঁচাশি থেকে নব্বই টাকা করে। এখন তা পৌঁছে গেছে একশত তিরিশে। মহল্লায় একের পর এক দোকানে জিজ্ঞাসা করেও এর সদুত্তর পাইনি, কেন বাড়লো এই দাম? গরিবের মাংস বা প্রোটিন বলে পরিচিত ডিমের দাম নিয়ে মিডিয়া কর্মী হিসাবে সরকারের মন্ত্রণালয়ের বা বাজার মনিটরিংয়ে যুক্তদের কোন তৎপরতা চোখে পরেনি এখনও পর্যন্ত।
বাসে বসে অফিস আসছি। পাশে বসা এক যাত্রীর ফোনে অপর প্রান্তের কথা কানে এলো। তিনি বলছেন, কি খবর? খুব ভালো? হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘট। বুয়েটের পরীক্ষার্থী এখন ঘরেই বসে আছে। আরেকজন নরসিংদী থেকে চাকরির পরীক্ষায় ঢাকায় না আসতে পেরে হা পিত্যেশ করছে। গতকাল রাতে পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণায় সারাদেশের পরীক্ষার্থীদের মাথায় হাত। রাজধানীর বহু পরীক্ষা কেন্দ্রে আজ চাকরি প্রার্থীদের অংশ নিতে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। আবার আজই পরীক্ষা সাত কলেজেরও। সু-শাসন কোথায়? এসব নিয়ে ভাবার প্রশাসন কোথায়? কোথাও এ-নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কথা বলতে শুনছি না। বিষয়টি যেন এমন, বকাউল্লা বকে যা, শোনাউল্লা শুনে যা।
বাসে বসা অপর যাত্রী চড়া সুরে সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি বলে উঠলেন, এমনটি হবেই। সরকারকে বলার কেউ নেই। এ-জন্যই দেশে শক্তিশালী বিরোধীদল লাগে। এই যে ডিজেলের দাম বাড়লো, বাজারের লাগামহীন চিত্র কে বলবে এসব নিয়ে? এমন কথার রেশ না কাটতেই নির্ধারিত স্টপেজে নামি। কিন্তু মাথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে যাত্রীর কথাগুলো। অসংখ্য মানুষ দুর্ভোগে আর আমরা মাথাপিছু আয় বাড়ছে সেই গল্প বলছি। কিন্তু সেই আয়ের সুফল তো দেখতে পাচ্ছি না। অর্থনীতি ভালো বুঝি না, কিন্তু এটুকু বুঝি মানুষ শান্তিতে নেই। বড় লোক আরও বড় হচ্ছে আর গরিব মানুষ নিঃস্ব থেকে কেবলই নিঃস্ব হচ্ছে।