রকমারি

লম্বা দাঁত বা টাস্কের উৎস জানতে গবেষণায় বিজ্ঞানীরা

২৮ অক্টোবর ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৩:০৯ অপরাহ্ন

এই পৃথিবীতে কয়েক কোটি বছর আগে গন্ডারের মত দেখতে একপ্রকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী ঘুরে বেড়াত। কচ্ছপের সঙ্গেও খানিকটা মিল ছিল তাদের। এই প্রাণীদের বলা হত ডাইসাইনোডন্টস। এরকম নাম হবার কারণ এদের কুকুরের স্বদন্তের মত দেখতে দুটি শক্তপোক্ত দাঁত ছিল। পালক বা আঁশযুক্ত কোনো প্রাণীর দেহে এই ধরণের দাঁত পাওয়া যাবে না। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের গবেষক মেগান হুইটনি বলেছেন, এই দাঁত বা টাস্ক প্রাণীর অ্যানাটমির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, দেখা গেছে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যেই কেবল এই ধরণের লম্বা দাঁত দেখা যায়। ডাইসাইনোডন্টগুলি ছিল থেরাপসিড নামক একটি বিলুপ্ত গোষ্ঠীর অন্তর্গত। পার্মিয়ান যুগে এরা নীল গ্রহের বুকে ঘুরে বেড়াত, আজ থেকে ২০০ মিলিয়ন বছর আগে ট্রায়াসিক যুগে এদের বিলুপ্তি ঘটে। পরিবেশের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে তৈরী হয়েছিল তাদের দৈহিক গঠন। ১৫০ বছরেরও বেশি আগে প্রথম ডাইসাইনোডন্ট ফসিলগুলি পরীক্ষা করার পর থেকে প্রাণীদেহে এই ধরণের প্রসারিত দাঁতগুলি বিজ্ঞানীদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। বিখ্যাত জীবাশ্মবিদ রিচার্ড ওয়েন ১৮৪৫ সালে এই ধরণের দাঁত নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানিয়েছিলেন যে তারা বেশিরভাগই ডেন্টিন দিয়ে তৈরি, এনামেল এবং সিমেন্টামের পাতলা স্তর এতে উপস্থিত, দেখতে অনেকটা খরগোশের দাঁতের মত। আবার হাতির দেহে এই দাঁত অনেকটা লম্বা আকারের হয়। বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীগুলি কীভাবে আচরণ করত তা জানতে হলে দাঁত কীভাবে বাড়ে তা সঠিকভাবে বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি মানবদেহের বিবর্তন বোঝার জন্যেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মুখগহ্বরের ভেতরে যে দাঁত থাকে তার সঙ্গে এর কিছু পার্থক্য আছে, এই লম্বা দাঁত বা টাস্ক মৌখিক গহ্বর থেকে বেশ কিছুটা দূরে থাকে। ওয়ালরাস এবং ম্যামথ এর মত স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহে যেমন দেখা যেত। মুখের ভেতরে যে দাঁত থাকে সেগুলি কিন্তু একটা সময়ের পর আর বৃদ্ধি পায় না, কিন্তু টাস্ক ক্রমাগত লম্বা হতে থাকে। ইঁদুর এবং খরগোশ এর কথায় আসা যাক, তাদের লম্বা দাঁতগুলি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে পারে, কিন্তু এগুলি এনামেল নামক একটি শক্ত-আবরণ দ্বারা আবৃত থাকে। টাস্কগুলি এনামেল দ্বারা আবৃত থাকলেও এর ধারালো কোনগুলি প্রাণীদের অস্বস্তির কারণ হয়। টাস্কগুলি একটি শক্ত লিগামেন্ট দ্বারা প্রাণীদেহের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। বেঁচে থাকার লড়াই যখন উপস্থিত তখন শিকারীদের পর্যুদস্ত করতে টাস্ক সাহায্য করে, আবার মাটি খননের প্রাণীরা এই বিশেষ দাঁতের ব্যবহার করে তাই এর গঠনও হয় বেশ শক্তপোক্ত। ডাইসাইনোডন্ট দাঁতের পরিসরের দিকে তাকিয়ে, গবেষকরা কুকুরের ক্যানাইনের কিছু মিল পেয়েছিলেন। ডাইসাইনোডন্ট প্রজাতিটির বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এদের দেহে পরবর্তীকালে আর এই ধরণের লম্বা দাঁত দেখতে পাওয়া যায়নি। এই প্রাচীন প্রাণীদের মধ্যে দাঁতের বিকাশ যেভাবে হয়েছিল তা দেখে বোঝা যায় কেন টিকটিকি, মাছ বা উভচর প্রাণীর মধ্যে কেন টাস্ক দেখা যায় না। কারণ টাস্ক গঠনের জন্য একটি শক্তপোক্ত চোয়াল প্রয়োজন যাতে লিগামেন্ট দ্বারা এটি সংযুক্ত থাকতে পারে, বলছেন শিকাগোর ফিল্ড মিউজিয়ামের একজন কিউরেটর কেন অ্যাঞ্জিয়েলসিক।

সূত্র: sciencealert.com
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status