প্রথম পাতা

এ যেন অসহায় আত্মসমর্পণ

ইশতিয়াক পারভেজ, আবুধাবি (আরব আমিরাত) থেকে

২৮ অক্টোবর ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:৫০ অপরাহ্ন

আবুধাবির চায়না ক্যাম্পের শ্রমিক মতিন মিয়া। ধীরে ধীরে হেঁটে আসছিলেন শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়ামের দিকে। তাপ থেকে বাঁচতে মাথার উপরে তুলে রেখেছেন বড় একটি লাল সবুজের পতাকা। মাঠের দিকে হেঁটে আসতে তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে লম্বা পথ। কিন্তু মুখে নেই একটুও ক্লান্তির ছাপ। জানালেন খুব বেশি বেতন পান না। তবুও টিকিট কিনেছেন, স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে করিয়েছেন পয়সা খরচ করে কোভিড-১৯ টেস্ট। বানিয়েছেন বড় একটা পতাকাও। আশা একটাই জিতুক না জিতুক, হারুক অন্তত লড়াই করুক। তার মতো এমন আশা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন হাজারখানেক টাইগার সমর্থক। কিন্তু লড়াই তো দূরের ব্যাপার ৮ উইকেটে হেরেছে দল। কোন অদৃশ্য চাপে এমন ছন্নছাড়া বাংলাদেশ! সবশেষ এশিয়া কাপেও এমন ছিল না! হারলেও করেছে দুর্দান্ত লড়াই। গতকালও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১২৪ রানে থামে ইনিংস। এত অল্প পুঁজি নিয়ে বোলারদেরও প্রতিরোধ গড়ার কিছু ছিল না। তাদের শরীরী ভাষায় ছিল না বিশ্বকাপের উত্তেজনা আর লড়াইয়ের তেজ। কোনো এক অদৃশ্য শক্তি যেন চেপে ধরেছে তাদের লড়াই আর প্রতিরোধের শক্তি। ম্যাচ শুরুর আগে স্টেডিয়ামের বাইরে সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবি পরিচালক নাঈমুর রহমান দুর্জয়ও বেশ অবাক টাইগারদের এমন আচরণে। তিনি বলেন, ‘আমি খুবই অবাক হচ্ছি বাইরের আলোচনা নিয়ে কেন ক্রিকেটাররা এই সময় মন্তব্য করবে! ওদের তো এখন ম্যাচে ফোকাস থাকার কথা। আমিও এখন কিছু বলতে চাই না। সমস্যা থাকলেও আমরা পরে তা সমাধান করবো এখন বিশ্বকাপ হোক একমাত্র লক্ষ্য।’
এই বিশ্বকাপে দারুণ করবে বাংলাদেশ- এমনটাই আশা ছিল ক্রিকেট বোদ্ধাদের। ক্যারিবীয় কিংবন্তি ক্লাইভ লয়েড একদিন আগেই আশার কথা শুনিয়েছিলেন। বলেছিলেন এই বিশ্বকাপে দারুণ কিছু করবে বাংলাদেশ। কিন্তু তা আর হলো কই! সুপার টুয়েলভ পর্বে হেরেছে টানা দুই ম্যাচ। সেমিফাইনাল খেলতে হলে পরের টানা তিন ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা আর অস্ট্রেলিয়াকে হারাতেই হবে। এতদিন দলে অন্তর্কোন্দল, কোচ-অধিনায়ক দূরত্ব, বোর্ডের সঙ্গে ক্রিকেটারদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য প্রকাশ্যে আসে। ধারণা করা হচ্ছিল এতেই পারফরম্যান্সে ফেলেছে প্রভাব। এবার হানা দিয়েছে ইনজুরি। দারুণ বল করতে থাকা পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ইনজুরিতে দল থেকে ছিটকে পড়েছেন। তার পরিবর্তে দলে জায়গা করে নিয়েছেন রুবেল হোসেন। তবে গতকাল একাদশে রুবেলের জায়গা হয়নি। বিশ্বকাপ মিশনে গতকালই প্রথম মাঠে নেমেছিলেন তরুণ পেসার শরিফুল ইসলাম। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একাদশে এই একটি পরিবর্তন।

মাঠের বাইরে এক ভক্ত চিৎকার করছিলেন আজ জিতবেই বাংলাদেশ। তার সঙ্গে তাল মেলাচ্ছেন বাকিরা। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর ম্যাচে উল্টো হতাশার চিত্র। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ১৭১ রান করলেও গতকাল ব্যাটাররা ব্যর্থ। নাঈমুর রহমান জানালেন আরব আমিরাতের উইকেট ও কন্ডিশনে টাইগারদের দারুণ কিছু করার কথা। কিন্তু মাঠে ইংল্যান্ডকে দেখে মনে হয়েছে নিজেদের ঘরেই যেন খেলছে। টসে হেরে উল্টো ছুড়ে দিয়েছিল স্পিন চ্যালেঞ্জ। সফলও হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাটাররা উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন বাজে শটে। অন্যদিকে টাইগারদের পাল্টা আক্রমণে বল হাতে নিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু ভুল করেননি ইংলিশ ব্যাটাররা। পাত্তাই দেয়নি বাংলাদেশের স্পিন শক্তিকে। আইসিসি টি-টোয়েন্টি অলরাউন্ডারদের র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠার দিনে ভালো কাটেনি সাকিবের। জেসন  রয়ের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় ইংল্যান্ড। বল হাতে একটুও প্রভাব ফেলতে পারেননি সাকিব কিংবা মোস্তাফিজুর রহমান। পঞ্চম ওভারে বোলিংয়ে এসে জস বাটলারকে ফিরিয়ে ৩৯ রানের জুটি ভাঙেন নাসুম আহমেদ। কিন্তু খুনে ব্যাটিং জেসন রয়ে এগিয়ে যেতে থাকে ইংল্যান্ড। এই উইকেটে সঠিক লাইন-লেন্থ কোনটা সেটাই যেন খুঁজে পাচ্ছিলেন না বোলাররা। সেই সুযোগে দ্রুত গতিতে ৩৩ বলে জেসন স্পর্শ করেন ফিফটি। অন্যদিকে তাকে দারুণ সঙ্গ দিতে থাকা জস বাটলারকে সাজঘরে ফিরিয়ে স্বস্তি এনে দেন নাসুম আহমেদ। তবে ডেভিড মালানকে নিয়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন রয়। শরিফুল তাকে ফিরিয়ে ভাঙেন ৭৩ রানের জুটি। নাসুমের চমৎকার ক্যাচে ফেরার আগে তিন ছক্কা ও পাঁচ চারে ৩৮ বলে রয় করেন ৬১ রান। তবে ম্যাচ ততক্ষণে ইংলিশদের নিয়ন্ত্রণে। জনি বেয়ারস্টোকে নিয়ে বাকিটা সারেন মালান। আইসিসি টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ব্যাটসম্যান অপরাজিত থাকেন তিন চারে ২৮ রানে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভালো অবস্থায় থেকেও নিজেদের ভুলে জয় হাতছাড়া করার পর এই বাজে পারফরম্যান্স। কোণঠাসা বাংলাদেশ পরের ম্যাচ খেলবে আগামী বুধবার, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status