শেষের পাতা
রাহাত হত্যা
স্বীকার করেছে ঘাতক সাদী
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২৮ অক্টোবর ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:৪৬ অপরাহ্ন
ভারত পালিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে গ্রেপ্তার হয়েছে দক্ষিণ সুরমার ছাত্রলীগ নেতা সামসুদ্দোহা সাদী। মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুরের দুর্গম চরাঞ্চল থেকে তাকে সিআইডি কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার করেছেন। এদিকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে দক্ষিণ সুরমার ছাত্রলীগ নেতা ও কলেজ ছাত্র রাহাতকে খুনের ঘটনা স্বীকার করেছে। সিলেট সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান গতকাল বিকেলে মানবজমিনকে জানিয়েছেন; গ্রেপ্তার হওয়া সাদীকে সিলেটে আনার প্রক্রিয়া করা হচ্ছে। তাকে নিয়ে আসার পর সিআইডি এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবে। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম রাহাত। তার বাড়ি শহরতলির পুরান তেতলী গ্রামে। সে তেতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের উপক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ছিল। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দক্ষিণ সুরমা কলেজের ফটকের কাছে ছুরিকাঘাত করে অপর ছাত্রলীগ কর্মী সাদী। পরে হাসপাতালে আনার পথে মারা যায়। এদিকে ঘটনার পর আসামি গ্রেপ্তারের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসীসহ কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা। গত রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে আরিফুল ইসলাম রাহাতের খুনিদের গ্রেপ্তার করতে আল্টিমেটাম দেয় দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এই অবস্থায় ঘটনার পর সিলেট থেকে পালিয়ে কুষ্টিয়া চলে যায় ঘাতক সাদী। ওখান থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সিআইডি তাকে গ্রেপ্তার করেছে। এরপর সাদীকে নিয়ে ঢাকার সিআইডির তরফ থেকে গতকাল দুপুরে প্রেস ব্রিফিং করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি জানায়, রাহাত খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হওয়ায় ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে সিআইডি। বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধরের নির্দেশনায় এলআইসি’র একটি চৌকস টিম কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের দুর্গম চর এলাকা থেকে সামসুদ্দোহা সাদীকে গ্রেপ্তার করে। সিআইডির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাদী রাহাতকে খুনের ঘটনা স্বীকার করেছে। সাদী জানিয়েছে- বয়সে সাদী ছিলেন রাহাতের চেয়ে বড়। এজন্য তিনি রাহাতের কাছে সিনিয়র দাবি করে আসছিলেন। এ নিয়ে উভয়ের বিবাদের অংশ হিসেবে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়। ঘটনার সময় সাদীর পকেটে ছোরা ছিল বলে জানায় সিআইডি। সেটি দিয়েই তিনি রাহাতকে ছুরিকাঘাত করেন। সিআইডি জানায়; ঘটনার পর সাদী পালিয়ে ঢাকার মিরপুরে অবস্থান করেন। সেখান থেকে আত্মগোপনে কুষ্টিয়ায় চলে যান। রাহাত খুনের ঘটনায় গত শুক্রবার রাতে রাহাতের চাচা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় ৩ জনের নামোল্লেখ ও ৫-৭ জনকে অজ্ঞাত হিসেবে আসামি করা হয়েছে।’ ছাত্রলীগের কর্মীরা জানিয়েছেন, সাদী সিলেট ছাত্রলীগের কাশ্মীর গ্রুপের কর্মী। দক্ষিণ সুরমা কলেজের ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। কলেজে অধ্যয়নকালীন একবার তাকে বহিষ্কারও করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, কলেজছাত্র আরিফুল ইসলাম রাহাতের প্রধান খুনি ছাত্রলীগ নেতা শামসুদ্দোহা সাদী নিজেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে রক্ষা করতে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এজন্য সে সিলেট থেকে পালিয়ে গিয়ে আত্মগোপন করে কুষ্টিয়া জেলায়। সাদীকে ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট মাঠে নামে। সিলেট মহানগর পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্তের কাজ শুরু করে অন্যান্য সংস্থাও। তারা রাহাতের খুনিদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে সিআইডি’র একটি চৌকস দল সাদীর খোঁজ পায়। গতকাল দুপুরের পর কুষ্টিয়া জেলার একটি সীমান্ত এলাকা হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে সিআইডির হাতে পাকড়াও হয় শামসুদ্দোহা সাদী।