খেলা

মরুর বুকে ‘সবুজ রাজকন্যা’ জায়েদ স্টেডিয়াম

ইশতিয়াক পারভেজ, আবুধাবি (আরব আমিরাত) থেকে

২৮ অক্টোবর ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:২৪ অপরাহ্ন

দুই পাশে ধুধু মরুভূমি, মাথার ওপর উত্তপ্ত সূর্য। ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা গাড়ির এসিও কাজ করছে না ঠিকভাবে। ভাবতেই গা শিউরে ওঠে, অতীতে এখানে মানুষ খোলা আকাশের নিজের উটের পিঠে কীভাবে পাড়ি দিতো মাইলকে মাইল পথ! ঠিক এমন এক মরুভূমিতে সবুজের আশা করা ভীষণ। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাত যেন সব সম্ভবের দেশ। তারই প্রমাণ রাজধানী আবুধাবির শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়াম, যেন মরুর বুকে ‘সবুজ রাজকন্যা’। মূল স্টেডিয়ামে রয়েছে মনোরম গ্রিন গ্যালারিও। হ্যাঁ, এখানে বাংলাদেশ দল গতকাল মুখোমুখি হয়েছে ইংল্যান্ডের। দুবাই শহর থেকে ১৩০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে  স্টেডিয়ামের বাইরে পৌঁছাতেই দেখা মিললো সবুজের মেলা। স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশিরা লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে আর জার্সি পরে ভিড় জমিয়েছেন। বিশ্বকাপের মাঠে টাইগারদের সাহস আর সমর্থন দিতে তাদের পাগলামিও যেন আকাশ ছোঁয়া। এই স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে সংবাদকর্মী থেকে শুরু করে দর্শকদের সকলের জন্য প্রয়োজন ৪৮ ঘণ্টা আগে করা করোনা পিসিআর টেস্ট রিপোর্ট। তাই ম্যাচের আগে সকলেই সেটি সপন্ন করেছে গাঁটের পয়সা খরচ করে। তাদের আশা এখানেই ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যাট করতে নেমে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দল তাদের হতাশ করেছে দারুণ ভাবে।
আবুধাবি মূল শহর থেকে স্টেডিয়ামের আবস্থান ৩০ কিলোমিটার দূরে। গোটা স্টেডিয়াম গড়ে তোলা হয়েছে পুরনো এক মরুশহরের ওপর। পাশাপাশি দু’টি মাঠ একটি মূল ভেন্যু আরেকটি অনুশীলনের জন্য। দু’টি মাঠ থেকেই আপনার প্রশ্ন জাগতে পারে কীভাবে এমন তপ্ত মরুভূমিতে এমন চোখ ধাঁধানো সবুজের সমাহার! খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমন সবুজ গড়ে তোলার পিছনে দারুণ ঘাম আর শ্রম দিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের শ্রমিকরা। বলতে গেলে এই দুই দেশের প্রবাসী শ্রমিকদের হাতেই গড়ে উঠেছে শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়াম। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির এই স্টেডিয়াম স্থাপিত হয় ২০০৪ এ। এর ধারণক্ষমতা ২০,০০০, এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে মোট অনুষ্ঠিত ম্যাচ হয়েছে ১১৩ টি। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৫০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ এই মাঠে গড়িয়েছে। এখন বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ আয়োজনের রেকর্ড শেখ আবু জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামেরই।
যেখানে আগে ব্যাট করা দল গুলো সংগ্রহ করেছে প্রথম ইনিংসে গড়ে ১৪০ রান। কিন্তু এমন ব্যাটিং উইকেটে টাইগাররা গুটিয়ে গেছে মাত্র ১২৪ রানে তাও আবার এক উইকেট হাতে রেখে।  
পারস্য উপসাগরের একটি ছোট ত্রিভুজাকৃতি দ্বীপে অবস্থিত আবুধাবি। যা মাকতা এবং মুসাফাহ সেতুর মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। আঞ্চলিক ও কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যালয় ছাড়াও এখানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারেরও অবস্থানস্থল। এছাড়া এখানে সুপ্রিম অয়েল কাউন্সিল অবস্থিত এবং এটা আবুধাবির আমিরি পরিবারের বসবাসের স্থান। আবুধাবির রাষ্ট্রপ্রধান এই পরিবারেরই সদস্য। এই অঞ্চলের ত্বরিত গতির উন্নয়ন, নগরায়ন, তেল ও গ্যাস সম্পদের প্রাচুর্য এবং তুলনামূলক উচ্চ মাথাপিছু আয়ের কারণে এই শহরটি বর্তমানে উন্নত ও সমৃদ্ধ মহানগরীতে পরিণত হয়েছে। তবে এখানে এখনো মাইলের পর মাইলজুড়ে শুধু ধুধু মরুভূমি।
তবে এমন মরুর বুকে এমন সবুজ রাজ্য গড়ে তুলতে খরচও নেহাত কম হয়নি। প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ ডলার খরচে এই স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়। পরে ২০০৪ সালে স্কটল্যান্ড এবং কেনিয়ার মধ্যকার প্রথম- শ্রেণির ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পথচলা শুরু হয় আবু জায়েদ স্টেডিয়ামের। ভেন্যুটিতে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজিত হয় আরও বছর দুয়েক পর। দুই চিরশত্রু ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ওয়ানডে দিয়ে। আইসিস একাডেমি এবং দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের সঙ্গে ২০১৯ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ হয়েছিল আবুধাবির এই স্টেডিয়ামে। ২০ হাজার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়ামে এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের দু’টি ম্যাচ ছাড়াও সুপার টুয়েলভের ১০টি এবং টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status