প্রথম পাতা

সাক্ষাৎকার

অবস্থার পরিবর্তনে জাতীয় সরকারের বিকল্প নেই

কাজল ঘোষ

২৭ অক্টোবর ২০২১, বুধবার, ৯:২৩ অপরাহ্ন

রাজনীতিতে হাতেখড়ি বায়ান্নতে। ভাষা আন্দোলনের সময়। পরিণত বয়সে ছিলেন ডিসিপ্লিন ফোর্সে। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। সামরিক বাহিনী থেকে স্ব-ইচ্ছায় পদত্যাগ করে যোগ দেন সক্রিয় রাজনীতিতে। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মূলকেন্দ্রে কাজ শুরু করেন। পরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে রাজপথের লড়াইয়ে, ক্ষমতায় এলে মন্ত্রীও হন। দাবার চালে বদল হয় কোর্টেরও। এবার লড়াইটা নিজের প্ল্যাটফরম নিয়ে। গড়ে তোলেন এলডিপি (লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি)। ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য ২০০৭ সালে স্বল্প সময় কাজ করেন সরাসরি শেখ হাসিনার সঙ্গেও। পরে খালেদা জিয়ার অনুরোধে যোগ দেন বিশদলীয় ঐক্যজোটে। সময়ের বদলে নিজেকে আমূল বদলেছেন। রাজনীতি, পরিবার, পরিজন নিয়ে একটি শৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত মানুষটির পথচলা দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থেকে। সহপাঠী ছিলেন প্রয়াত সাহিত্যিক ও চিন্তক আহমদ ছফা’র। দিনের প্রাত্যহিক কার্যক্রম শুরু করেন মধ্যভাগে। বিকাল সন্ধ্যায় চলে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক। বলছিলাম প্রবীণ রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, বীরবিক্রমের কথা। মহাখালীর ডিওএইচএস’র বাসায় দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, সাফল্য-ব্যর্থতা, বর্তমান সংকট, সার্বিক পরিস্থিতির উত্তরণে করণীয় নিয়ে কথা বলেন অভিজ্ঞ এই রাজনীতিক। বলেন, গণতন্ত্রে সরকারি ও বিরোধী উভয় দলেরই দায় থাকে। কিন্তু বিগত পনের বছর সংসদে বিরোধী দল বলে কিছু নেই। দেশে চলছে একদল ও এক ব্যক্তির শাসন। সকল প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ করা হয়েছে। এই অবস্থায় নির্বাচন দিলেও দেশের কোনো পরিবর্তন আসবে না। অবস্থার পরিবর্তনে দরকার জাতীয় সরকার।

প্রশ্ন: দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এমন বলাবলি আছে। কিন্তু এতকিছুর পরও আপনার দৃষ্টিতে কোথাও কোনো ঘাটতি চোখে পড়ে কিনা?
-রাস্তাঘাট বানানো, উঁচু উঁচু ভবন বানানো, সেতু তৈরি, নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ, মেট্রোরেল, বিভিন্ন সেক্টরে বড় বড় প্রকল্প বানানোকে যদি উন্নয়নের মহাসড়ক বলি তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, বিগত বছরগুলোতে পত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে বিদেশে। এই টাকার মালিক কে? এই টাকার মালিক হচ্ছে দেশের আপামর জনগণ। বিভিন্নভাবে গুটিকয়েক রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তা দেশের ষোল কোটি মানুষের রক্ত চুষে খাচ্ছে।
দেশে ভালো মানুষের বড় অভাব। যে মানুষ আল্লাহর নির্দেশিত পথে নিজেকে পরিচালিত করেন, যে জনপ্রতিনিধি নিজে এবং তার এলাকার মানুষকে সৎ পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করেন। কিন্তু বর্তমানে উল্টোটাই হচ্ছে, যার যেভাবে ইচ্ছা দেশ সেভাবেই চলছে। দুর্নীতি যত্রতত্র। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে একটি সরকার যখন দেশে থাকে তখন জনগণ মনে করে তারাও সরকারের অংশ। জনগণ কখন মনে করে সে সরকারের অংশ যখন সে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনপ্রতিনিধিকে দেশ পরিচালনার আসনে বসাতে পারে।

২০০১ সালের পর থেকে যে ক্ষত শুরু হয়েছে ২০০৯ সালের পর তা আরও গভীর হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনাভোটে ১৫৪ জন এমপি নির্বাচিত হয়েছে- এটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা। বিরোধী দলবিহীন সংসদ চলছে দশ বারো বছর ধরে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলও জনসভা করে, জনগণের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে থাকে, দেশের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু আমাদের দেশে কি হচ্ছে?

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট দেশ নয়; আবার চীন বা রাশিয়াও নয়। এটি পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ। অথচ আমরা কি দেখছি? এখানে যারা সরকারে আছেন তারাই শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের সাহায্য নিয়ে জনসভা করে থাকেন। বিরোধী দলগুলোকে কোনো জনসভা করতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি ক্লোজডোর মিটিং করতে গেলেও অনেক ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। কয়েকদিন আগেই জনগণের একমাত্র ভরসাস্থল ছিল জাতীয় প্রেস ক্লাব সেটিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

প্রশ্ন: সরকারপক্ষ বিরোধী দলকে চাপে রাখে তা সত্ত্বেও বিরোধী দল একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলে। কিন্তু এই লম্বা সময়ে বিরোধী দল হিসেবে আপনাদের রাজপথে দেখা যাচ্ছে না?  
-বিষয়টি অ্যাকটিভ বা ইন-অ্যাকটিভের নয়। এরশাদকে আমরা স্বৈরাচার বলছি। কিন্তু সে সময়ও বিরোধী দল হিসেবে আমরা জনসভা করেছি। সরকারি অফিস ঘেরাও করে আমরা আমাদের প্রতিবাদলিপি দিয়েছি। কিন্তু বর্তমান সরকারের সময় তা সম্ভব নয়। প্রতিনিয়ত বিরোধীকর্মীরা গুম হয়ে যাচ্ছে, গুপ্তহত্যার শিকার হচ্ছে, মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে। বোমা ফাটিয়েছে, বাস জ্বালিয়েছে  ছাত্রলীগ-যুবলীগ কিন্তু মামলা দেয়া হচ্ছে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। বিএনপি দেশের একটি সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। তাদের প্রায় কয়েক লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। অনেক নেতা আছেন যাদেরকে সপ্তাহের পাঁচদিনই কোর্টে যেতে হয়। সকালে কোর্টে গিয়ে তারা সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন। যাদের অর্থবিত্ত আছে তাদের হয়তো চলে যাচ্ছে। কিন্তু যারা গরিব নেতাকর্মী তাদের কি অবস্থা? তাদের জীবন কীভাবে চলছে? তাদের পরিবারগুলো কীভাবে বেঁচে আছে? তাদের অভিশাপ এই সরকারকে ছাড়বে না।
প্রশ্ন: চলমান এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব কীভাবে?
-উত্তরণের পথ একটাই- মানুষকে ন্যায়ের পথে ফিরে আসতে হবে। মানুষকে তার প্রাপ্য ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। জন্মগতভাবে প্রতিটি মানুষের কিছু অধিকার রয়েছে। বর্তমানে সেই অধিকারগুলো খর্ব করা হয়েছে। এ সরকারের সময় জনগণকে যেভাবে জিম্মি করা হয়েছে তা অতীতে কোনো সরকার কখনো করেনি। দুনিয়ার কোনো দেশেই এমনটি হয়নি। রোমানিয়ায় ছচেসকোর সময় এমনটি হয়েছিল। সেখানে ঘর থেকে বের হলেই মানুষকে হত্যা করা হতো। এ ধরনের পরিস্থিতি এখন বাংলাদেশেও বিরাজমান।
প্রশ্ন: দীর্ঘসময় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আপনার কোনো দায় দেখেন কিনা?
- আইয়ুব খানের শাসনামল দেখেছি, যুক্তফ্রন্টের শাসনামল দেখেছি, শেখ মুজিবের শাসনামল দেখেছি, জিয়াউর রহমানের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলাম। কিন্তু বর্তমানে যে সরকার চলছে এর সঙ্গে কোনোটিরই তুলনা হয় না। বর্তমানে রাজতন্ত্র বা কমিউনিজমের চেয়েও খারাপ শাসন চলছে। কমিউনিজমেও মানুষের অধিকার থাকে, কিন্তু এখানে এখন মানুষের কোনো অধিকার নেই।
প্রশ্ন: নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে ফের আলোচনা শুরু হয়েছে। আপনার দল এবং জোটের অবস্থান কি হবে?
-যেখানে প্রতিষ্ঠান ঠিক নেই, পুলিশ ছাত্রলীগ, যুবলীগ। অফিসারদের মধ্যে তিন ভাগের দুই ভাগ ছাত্রলীগ-যুবলীগ, বিচারকের মধ্যে ছাত্রলীগ-যুবলীগ। সেখানে নির্বাচন কার সঙ্গে করবেন? আপনাকে সুষ্ঠু নির্বাচন কে দেবে? প্রতিষ্ঠান ঠিক না করে এখানে নির্বাচন দেয়ার কোনো অর্থ হয় না। বর্তমানে এখানে নির্বাচনের নামে নির্বাচন নির্বাচন খেলা চলছে। আমি এ ধরনের নির্বাচন সমর্থন করি না, বর্তমান ব্যবস্থায় এ ধরনের নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রশ্নই আসে না।
প্রশ্ন: কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা আপনি করছেন, লম্বা সময় তো আপনারাও ক্ষমতায় ছিলেন, তখন এগুলো শক্তিশালী করার জন্য আপনাদের ভূমিকা কি ছিল?
-আমি যতদিন প্রশাসনে ছিলাম কখনো দলীয় কাউকে পদায়নের চেষ্টা করিনি, এমনকি যারা করেছে তাদের বাধা দিয়েছি। একজন মন্ত্রী বা এমপি হিসেবে জনগণের কাছে যে দায়বদ্ধতা ছিল তা পালন করতে চেষ্টা করেছি। আমি বলবো না যে, আমি শতভাগ ঠিক কাজ করতে পেরেছি, আমারও ব্যর্থতা আছে। আরও ভালো কিছু কাজ হয় তো করা যেতো। দল হিসেবে বিএনপি’র সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো অনেকবার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানগুলো ভালোভাবে পরিচালনার জন্য যে আইনগুলো প্রণয়ন করা জরুরি ছিল তারা তা করতে পারেনি। যে আইনগুলো প্রণয়ন করা হয়েছিল তাও আওয়ামী লীগ ব্রুটাল মেজরিটির নামে বাতিল করে দিয়েছে। যেমন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এর দাবি প্রথম তুলেছিল জামায়াত। ছিয়ানব্বইতে আওয়ামী লীগ জামায়াতের দাবির সঙ্গে একাত্মতা করে তাদের নিজেদের দাবি হিসেবে উত্থাপন করে। পরে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে তারা সরকার অচল করে দেয়ার চেষ্টা করে। আমরা জনগণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম বিধায় তখন বেগম জিয়াকে পরামর্শ দিয়েছিলাম সকলের জন্য যা মঙ্গল সেটিই করেন। আপনারা জানেন দেশে একসময় প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকার ছিল। কোনো সরকারই খারাপ নয় যদি তা ঈমানদার সরকার হয়। বেঈমান-মুনাফেক না হলে কোনো পদ্ধতিই খারাপ না। আমার চিন্তা ঠিক থাকতে হবে, আমার মধ্যে মনুষ্যত্ব থাকতে হবে। বর্তমানে মনুষ্যত্ব বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যার কারণে দেশে এত ধরনের গজব চলছে এবং সামনের দিনগুলোতে এমন গজব চলতেই থাকবে।  
প্রশ্ন: কিন্তু পরিত্রাণ দেখেন কিনা?
-পৃথিবীতে এমন কিছু বিষয় নেই যার শেষ নেই। সবকিছুরই শেষ আছে। এই গজব থেকেও পরিত্রাণ আছে। আশা করি, দেশ একদিন এই গজব থেকেও মুক্ত হবে।  
প্রশ্ন: তাহলে দেশ চলছে কীভাবে?
-দেশ চলছে বাতাসের উপরে। দেশ চলছে একদলীয় শাসন বাকশালের মাধ্যমে। যদিও এটি আক্ষরিকভাবে বা সাংবিধানিকভাবে প্রবর্তন করা হয়নি। দেশে চলছে একদলীয় ও এক ব্যক্তির শাসন।
প্রশ্ন: একটি কথা প্রায়ই আলোচনায় আসে, লেস ডেমোক্রেসি মোর ডেভেলপমেন্ট- আপনি এর ব্যাখ্যা কীভাবে করবেন?
-ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলবে। ডেমোক্রেসির মাধ্যমে ডেভেলপমেন্ট হওয়া উচিত, ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে ডেমোক্রেসি নয়। প্রথমে একজন মানুষকে তার বাঁচার অধিকার দিতে হবে তারপর উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করেন। প্রথমত কাবিন করতে হবে, তারপর বিয়ে করে বৌকে ঘরে আনতে হবে। এখন তো কোনো কিছু না করে প্রথমেই রুমে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আগে গণতন্ত্র থাকতে হবে, মানুষের অধিকার থাকতে হবে- তারপর অন্য কিছু।
প্রশ্ন: যখন পথে নামেন সাধারণ মানুষ আপনাকে রাজনীতিবিদ হিসেবেই চিনে থাকে। মোটা দাগে রাষ্ট্রের ব্যর্থতার জন্য রাজনীতিকদের (আপনাদেরই) মানুষ দোষারোপ করে?
-যদি দেশে গণতন্ত্র থাকে তাহলে আপনি বিরোধী দলকে দায়ী করতে পারেন। কিন্তু যখন দেশে গণতন্ত্র থাকে না, তখন আপনি বিরোধী দলকে দায়ী করতে পারেন না। গণতন্ত্রে বিরোধী দল এবং সরকারি দল উভয়েই প্রতিটি কর্মকাণ্ডের জন্য সমানভাবে দায়ী থাকে। হয়তো সরকারে যারা থাকেন তাদের দায় বেশি থাকে আর বিরোধী দলের দায় কম থাকে। কিন্তু বিরোধীপক্ষ দায় এড়াতে পারে না। বিগত বিশ বছর যাবৎ বাংলাদেশে কোনো বিরোধী দল নেই, দেশে বাকশালি শাসন চলছে। সুতরাং আপনি বিরোধী দলকে দায়ী করতে পারেন না।
প্রশ্ন: আমাদের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের কোনো আশা দেখেন কি?
-আমি সবসময় আশাবাদী মানুষ। মহান সৃষ্টিকর্তার ওপর আমার দৃঢ় বিশ্বাস আছে। তিনি নিশ্চয়ই নির্যাতিত, বঞ্চিত মানুষের হৃদয়ের কান্না শুনছেন। আমি বিশ্বাস করি বর্তমান স্বৈরশাসনেরও শেষ আছে। কীভাবে হবে সেটাই দেখার বিষয়।
প্রশ্ন: দেশের সব সংকটের দায় বর্তায় রাজনীতিকদের ওপরই, আপনি একমত?
-যারা সরকারে আছেন এ দায় মূলত তাদেরই। যারা সরকারে আছেন বা বিভিন্ন স্থানে পদায়ন হয়েছে এর মধ্যে তাদের বেশির ভাগই ছাত্রলীগ বা যুবলীগ। বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে সকল জায়গাতেই এটি করা হয়েছে। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা ছিল সেগুলোও বর্তমান সরকার দলীয়করণ করেছে। বর্তমানে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই যা রাজনীতিমুক্ত। এই প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের নির্বাচনে দেশের পরিবর্তন আসবে না। এই পরিস্থিতির পরিবর্তনে দরকার “জাতীয় সরকার’’। জাতীয় সরকার এসে যদি প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক করে নির্বাচন দেয়, তখন আপনি ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। জাতীয় সরকারের বাইরে অন্য কোনো কায়দায় নির্বাচন হলে তা মানুষের কাজে আসবে না।
প্রশ্ন: জাতীয় সরকার কি বিতর্ক মুক্ত হবে। আমরা তো দেখেছি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কতো কাণ্ড হয়েছে?
-যাদের বিরুদ্ধে কখনো কোনো ধরনের অভিযোগ নেই এমন ব্যক্তিদের বেছে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই, পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ নেই, অশিক্ষিত নয়, কখনো কোনো বিচারে দণ্ডিত নন, এমনদের একত্রিত করে জাতীয় সরকার গঠন করতে পারলে ভালো কিছু নিশ্চয়ই হবে।
প্রশ্ন: সিদ্ধান্তটি কে নেবে? কথা হচ্ছে আমাদের এখানে তো কোনো বিষয়ে বড় দুটি দল আজ পর্যন্ত একমত হতে পারেনি?
-এই ফয়সালা আসমানে হবে। সময়ই তা বলে দেবে। উত্তরটি আপনার কাছে অ্যাবস্টাক বা বিমূর্ত মনে হতে পারে। কিন্তু অনেক সময় বিমূর্ত বিষয়ই বাস্তব হয়ে যায়। নিকট অতীতের দিকে তাকালে আপনি দেখবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকা অবস্থায় অন্তত ২০০০ সাল পর্যন্ত যে ক’টি নির্বাচন হয়েছে কম বেশি বিতর্ক থাকলেও তার অনেকটাই সহনশীল পর্যায়ে ছিল। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে কোনোটিই ফেয়ার হয়নি। নির্বাচন শতভাগ ফেয়ার হবে- এটা আমিও মনে করি না, শতকরা দুই তিন ভাগ অভিযোগ থাকবেই। তবে ২০০০ সালের আগ পর্যন্ত আমরা মনুষ্যত্বের পর্যায়ে ছিলাম আর এরপরে নাই। ১৯৫২ সালে যখন রাজনীতিতে যুক্ত হই আমি তখন স্কুলের ছাত্র। দীর্ঘ সময়ে অনেক রকম শাসন দেখেছি। কিন্তু বর্তমানে যে পর্যায়ে গেছে এতটা নিম্ন পর্যায়ে এর আগে কখনো যায়নি। আওয়ামী লীগ বর্তমান সময়ে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে। এ পরিস্থিতির উন্নতি করতে হলে উপরের দিকে ওঠে আসতে হবে।  
প্রশ্ন: একসময় বিদেশি মিডিয়ায় শিরোনাম হতো দুই বেগমকে নিয়ে, বলা হতো টু ব্যাটলিং বেগমস।
-এখন ওয়ান বেগম ব্যাটলিংস। ওয়ান বেগম ইজ ব্যাটলিং অ্যাগেইনস্ট হারসেলফ। এখন টু বেগম নেই। গত বারো বছর ওয়ান বেগম গেম ইন দ্যা গ্রাউন্ড। আরেক বেগমকে মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করে কারাবন্দি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ এমন একটি দল যারা বিচারককে পেটানোর জন্য হাইকোর্ট প্রাঙ্গণেও ঢুকেছে। বাংলাদেশে এ ধরনের উদাহরণ আর একটিও নেই। প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলীকে এই দলের লোকেরাই হত্যা করেছে। সত্য কখনো গোপন থাকে না। সত্য একদিন প্রকাশ হবেই। এখন এই যে এত রাস্তাঘাটের নতুন নতুন নাম দেখতে পাচ্ছেন এগুলো হয়তো আগামী দিনে কোনোটাই থাকবে না। একটি কথা সবসময় স্মরণ রাখতে হবে মানুষ হচ্ছে সৃষ্টির সবচেয়ে সেরা জীব। অথচ সৃষ্টির সেরাকে কয়েকজন রাজনীতিবিদ কুকুরের পর্যায়ে নিয়ে গেছে, পুরো বাংলাদেশ দখল করে খাচ্ছে। এটা কখনো বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। আমরা যারা বিরোধী দলে আছি তারা বেয়াদব না বলে, ভদ্র বলে, বর্তমান সরকার যা খুশি তাই করে যাচ্ছে। মানুষের পর্যায়ে আছি বলেই, অমানুষেরা যা করতে পারে আমরা তা করতে পারি না।
প্রশ্ন: সামনের দিনগুলো কেমন যাবে বলে মনে করেন?
-মুসলমানরা বলেন, হার কারবালা কি বাত ইসলাম জিন্দা হোতা হে। প্রতিটি বিপদের পরে আল্লাহ মানুষকে শান্তি দেন। এ দেশের মানুষ প্রায় পনের বছর যাবৎ জেলের মধ্যে আবদ্ধ। এই জেলের তালা ভাঙবে, দেশ মুক্ত হবে এবং মানুষ সুন্দরভাবে পরিচালিত হবে- সেদিন বেশি দূরে নয়। আল্লাহ নিশ্চয়ই মানুষের হৃদয়ের কান্না শুনছেন এবং তিনি আমাদেরকে সুযোগ দেবেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status