এক্সক্লুসিভ

পর্তুগালের কৃষিতে এগিয়ে বাংলাদেশিরা

এনামুল হক, পর্তুগাল থেকে

২৭ অক্টোবর ২০২১, বুধবার, ৮:২৫ অপরাহ্ন

পর্তুগাল দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। এটি আইবেরীয় উপ-দ্বীপের পশ্চিম অংশে, স্পেনের দক্ষিণে ও পশ্চিমে অবস্থিত। এই  দেশটির তিনদিকে দিয়ে ঘেরা আটলান্টিক মহাসাগর। পর্তুগালের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর লিসবন।
পর্তুগালের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস হলো কৃষি উৎপাদন। ২০১৭ সালে পর্তুগালের মূল ভূ-খণ্ডের ২৬% অঞ্চল কৃষি এলাকায় দখলকৃত।  সেই হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে ২৩৪০৯১৪ হেক্টর জমি কৃষি কাজে ব্যবহার হচ্ছে। গত ২০২০ সালের করোনা মহামারিতে বিশ্ব শ্রম বাজারে আতঙ্ক ও অস্থিরতা প্রতিফলন পর্তুগালেও বিরাজমান। গত দেড় বছর করোনা মহামারির প্রভাব পড়েছে পর্তুগালের পর্যটন এবং কৃষি শিল্পে। যার কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও ট্যুরিজম রিলেটেড অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এই দুর্যোগকালীন সময়ে চাকরি হরিয়েছেন কয়েক হাজার প্রবাসী। করোনা পরবর্তীতে পর্তুগালের অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে পর্তুগাল সরকার বর্তমানে অগ্রাধিকার দিচ্ছে কৃষি শিল্পে। এমন মুহূর্তে বাংলাদেশিরা জায়গা করে নিয়েছেন কৃষি কাজ, কন্সট্রাকশন,  ডেইরি ফার্ম, মিল্কিং ফার্ম, পোল্ট্রি ফার্ম এবং গ্রিন হাউজসহ বিভিন্ন  সেক্টরে।
বর্তমানে পর্তুগালের কৃষি শিল্পে বিশ্বের অনেক দেশের শ্রমিক কাজ করছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দক্ষিন এশিয়ার বাংলাদেশ,  নেপাল, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং ব্রাজিল, রোমানিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশ। অতিতে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে কৃষি কাজে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেতো  নেপালি শ্রমিকগণ। বর্তমান  প্রেক্ষাপটে নেপাল তাদের সেই সুনাম আর ধরে রাখতে পারেনি এই সেক্টরে। সেই সুবাদে কৃষি  সেক্টরে নতুন করে স্থান দখল করে নিয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বর্তমান সময়ে পর্তুগালে কৃষি শ্রমিক হিসেবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বেশ ভালো সুনাম রয়েছে।
পর্তুর গিমারেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক হাবিবুল্লাহ বলেন, আমরা এখানে প্রায় ২৫ জন বাংলাদেশি কাজ করছি। আমাদের সঙ্গে আরও নেপালি ও ভারতের কিছু শ্রমিক আছে। আমাদের এই এগ্রিকালচার  কোম্পানিতে প্রায় ৩৫/৪০ জন শ্রমিক কাজ করে। শনিবার ও রোববার দুইদিন সরকারি ছুটি আছে। এই কোম্পানিতে আমি যখন প্রথম আসি তখন বাংলাদেশি শ্রমিক ছিল মাত্র ৮ জন। কিন্তু এখন প্রায় সব শ্রমিকই বাংলাদেশি। কোম্পানিতে যদি নতুন কোনো লোকের প্রয়োজন হয়। প্রথমে প্রাধান্য পায় বাংলাদেশি শ্রমিক।    
মিলফনতেছ থেকে দুলাল আহমেদ বলেন- বর্তমানে এখানে রোজ   বেরি, স্ট্রবেরি, ব্লোবেরি, কিউ ভি, আঙ্গুর, জয়তুন, আপেল, মাল্টা জাতীয় বিভিন্ন এগ্রিকালচার  কোম্পানিতে কাজ করছে প্রবাসীরা। গাছের পরিচর্যা, ওষুধ ছিটানো, পচা ও মরা ফল বাছাই করার এবং ফল গাছ থেকে সংগ্রহ করে প্যাকেট জাত করার কাজ করে থাকি। এই কাজ শুরু হয় মার্চ মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত  মোট নয় মাস। বাকি তিন মাস আর কোনো কাজ থাকে না। এই সময়ে অনেক প্রবাসী ছুটিতে চলেন দেশের উদ্দেশে।  
তবে উল্লেখ্য, পর্তুগালের কৃষি  সেক্টর গুলি রাজধানী লিসবন  থেকে বেশ কয়েকশ’ কিলোমিটার দূরে সবগুলো এগ্রিফার্ম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহরগুলো হলো- মিলফনতেছ, ফারো তাবিরা, গিমারিশ, ব্রাগা, লেরিয়া, কিইমব্রা ও এবেইরো অঞ্চল। প্রত্যেক কোম্পানিতে শ্রমিকদের জন্য থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু কাজের মধ্যে ঝুঁকি রয়েছে তাই প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলক করতে হয়।
বর্তমান পর্তুগালের আইন আনুযায়ী একজন শ্রমিকের মাসিক  বেতন ন্যূনতম ৭৪০.৮৩ ইউরো। যারা কৃষিকাজ করেন তাদের  বেতন কাঠামো কোম্পানি অনুযায়ী বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তবে ন্যূনতম প্রতিঘণ্টায় ৪.৫০ ইউরো প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে মাসে ২২দিন কাজ করতে পারে একজন শ্রমিক। যা মাসিক বেতন দাঁড়ায় (৮ী২২=১৭৬) ঘণ্টায় ৭৯২ ইউরো। এই বেতনের ১১% ট্যাক্স সরকারকে দিতে হবে।  এছাড়াও প্রতিটি কোম্পানি তাদের শ্রমিকদের খাবারের জন্য প্রতিদিন ৪.৫০ ইউরো করে দিতে হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status