ইতিহাস থেকে
পারস্য রাজ্য এবং ডাক কাঠামো
শামীমুল হক
২৬ অক্টোবর ২০২১, মঙ্গলবার, ৪:১২ অপরাহ্ন
একশ’ পাঁচ খ্রিস্টাব্দে চীনের তাইলুনে কাগজ আবিষ্কার হলে সূচনা হয় সভ্যতার আরেক বৈপ্লবিক যাত্রা। অবশ্য মানব সভ্যতার শুরু হয়েছিল পূর্বে, কিন্তু ডাক ব্যবস্থার সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে উঠেছিল পশ্চিমের পারস্য রাজ্যে। ৫৩৬ খ্রিস্টাব্দে পারস্য রাজ্যে ডাক ব্যবস্থা চালু হয়। পারস্য রাজা সাইরাস তার প্রাদেশিক গভর্নরদের সঙ্গে যোগাযোগের লক্ষ্যে ডাক ব্যবস্থা চালু করেন। এ জন্য রাজা ভূমধ্যসাগর থেকে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত ১৫০ মাইল দীর্ঘ উন্নত রাস্তা তৈরি করেন এবং এ রাস্তায় ১১১টি ডাক রিলে স্টেশন স্থাপন করেন। ডাক পরিবহনের জন্য কুরিয়ার নামক ডাক-কর্মচারী নিয়োগ দেন। গ্রিক দার্শনিক হেরোডেটাস পারস্য রাজ্যে ডাক আদান-প্রদানের ব্যবস্থা সম্পর্কে লিখেছেন- এসব সংবাদ বাহকের তুলনায় কোনো কিছুই দ্রুতগামী ছিল না। বরফ কিংবা বৃষ্টি, গরম কিংবা রাতের আঁধার কিছুই এ ডাকবাহকদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করা থেকে নিবৃত্ত করতে পারতো না। এ বক্তব্যটি এখনো নিউ ইয়র্ক সিটি জিপিও ভবনের সামনে খোদাই করে লেখা আছে। ওদিকে আশিয়ান সভ্যতায় ডাক চলাচলের নতুন ধারণা পাওয়া যায়। এ সভ্যতার শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন বাদশাহ সোলায়মান। তিনি ডাকবাহক ছাড়াও ডাক চলাচলের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পাখিকে ব্যবহার করতেন। ৯৬০ খ্রিস্টাব্দে তিনি পারস্যের সব রাজ্যের রানীর কাছে পাখির সাহায্যে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। চিঠি পাঠানোর এ নতুনত্বে ‘সাবা’ রাজ্যের রানী এতই বিমোহিত হন যে, বাদশাহ সোলায়মানের সঙ্গে তিনি দেখা করতে আসেন। বাদশাহর রূপে মুগ্ধ হয়ে তার সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। মধ্যযুগে রাজা-বাদশাহদের জন্য বাহক ছিল। রানার ছিল। তারা রাজা, বাদশাহর শাহী ফরমান নিয়ে হাজির হতেন প্রজাদের কাছে। কখনো কখনো রাজ্য প্রধানদের খবর দিতে কিংবা নিতে নিজেরাই একটা সিস্টেম তৈরি করে নেন। মূলত সে সময়ই ডাক ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। নিয়োগ হয় রানার। তৈরি হয় স্টেশন। এক রানার দৌড়ে তার নির্দিষ্ট স্টেশন পর্যন্ত যেতেন। তারপর সেখানে অপেক্ষমাণ আরেক রানারের কাছে ডাক দিয়ে তিনি ফিরে আসতেন। এভাবে একসময় ডাক তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যেতো। এভাবে শুধুমাত্র রাজা, বাদশাহর ডাকই যেতো। এ ব্যবস্থার সুযোগ নেয়া শুরু করেন আমীর-উমরাহ, উজির, নাজিররা। তারা দূর-দূরান্তে থাকা তাদের স্বজনদের কাছে রাজার ডাকের সঙ্গে নিজেদের চিঠিও দিয়ে দিতেন। এভাবে চলে বেশ কিছুদিন।