প্রথম পাতা
সুদানে ফৌজি শাসন
মানবজমিন ডেস্ক
২৬ অক্টোবর ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:৩০ অপরাহ্ন
সুদানে অন্তর্বর্তী সরকার বিলুপ্ত করে জরুরি অবস্থা জারি করেছে সেনাবাহিনী। এর আগে সোমবার খুব ভোরে তারা প্রধানমন্ত্রী আব্দেল হামদুক ও তার কয়েকজন মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেছে। তাদেরকে কোথায় রাখা হয়েছে বা কি ঘটেছে তাদের ভাগ্যে, তা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি। এর মধ্য দিয়ে দৃশ্যত পরিস্থিতি বলছে, সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে গেছে। আবারো ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে সামরিক উর্দি পরা ব্যক্তিরা। দৃশ্যত, এর নেতৃত্ব দিয়েছেন জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল বুরহান। সামরিক অভ্যুত্থানে সমর্থন না দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে। দেশটিকে শাসন করে সোভারিন কাউন্সিল বা সার্বভৌম পরিষদ নামে একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন। এর চেয়ারম্যান জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল বুরহান অন্তর্বর্তী সরকার সোভারিন পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেন। এর ফলশ্রুতিতে সেখানে কারফিউ দেয়ার কথা। জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল বুরহান টেলিভিশনে দেয়া বক্তব্যে বলেছেন, রাজনীতিকদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব, উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং সহিংসতায় উস্কানি দেয়ার কারণে জনগণের স্বার্থ নিরাপদ রাখতে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক চুক্তি মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সুদান। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে নির্বাচন দেয়ার পরিকল্পনা আছে। এরপরই বেসামরিক শাসকদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করার পর ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে প্রায় দু’বছর ধরে সেখানে সামরিক ও বেসামরিক নেতাদের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমেই তিক্ত হয়ে ওঠে। সোমবার খুব ভোরে দেশে যখন এ ঘটনা ঘটে, তখন সাধারণ মানুষকে ঘর থেকে বেরিয়ে অভ্যুত্থান ঠেকানোর আহ্বান জানানো হয়। এতে রাস্তায় নেমে পড়েন তরুণ, যুবা ও প্রবীণরা। রাজধানী খার্তুম থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক মোহাম্মদ ভ্যাল বলছেন, সামনে আরও বড় সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, রাস্তায় নেমে আসা এসব মানুষ সহজে ঘরে ফিরবে বলে মনে হয় না। সেনাদের রক্তচক্ষুকে তারা ভয় পাচ্ছে না। এতে বন্দুকের গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে সাধারণ মানুষ। জবাবে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা।
এখন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় ফিরতে দীর্ঘ সময় লাগবে। তা শুরু হওয়ার আগে জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
সুদানের এই পরিস্থিতিকে অগ্রহণযোগ্য বলে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিশ্বনেতারা। তারা এবং মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো এর নিন্দা জানিয়েছেন। সুদান সরকারের উচ্চ পদস্থ কিছু কর্মকর্তাকে আটক করাকে দৃশ্যত সামরিক অভ্যুত্থান বলে আখ্যায়িত করে এই নিন্দা জানান তারা। কারণ, সেনাবাহিনীর একজন সিনিয়র কর্মকর্তা সরকারকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে। তিনি হলেন ক্ষমতা ভাগাভাগি করা সোভারিন কাউন্সিলের সামরিক কর্মকর্তা আব্দেল ফাত্তাল আল বুরহান। তবে এই কাউন্সিলের বেসামরিক সদস্য মোহাম্মদ হাসান এলতাইশি তার ফেসবুক পেইজে বলেছেন, দৃশ্যত এই সামরিক অভ্যুত্থান এক বোকা রাজনীতি। গায়ের শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত তিনি এর বিরোধিতা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সুদান ও দক্ষিণ সুদান বিষয়ক বৃটিশ বিশেষ দূত রবার্ট ফেয়ারওয়েদার টুইটে অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছেন। টুইটে তিনি বলেছেন, বিপ্লব, অন্তর্বর্তী সরকার এবং সুদানের জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে বেসামরিক নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে সামরিক বাহিনী। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং আরব লীগসহ অনেক দেশ ও সংগঠন।
বার্তা সংস্থা এএফপি’কে হিতাম মোহাম্মদ নামে একজন বিক্ষোভকারী বলেছেন, সুদানে ক্ষমতার গণতান্ত্রিক পালাবদলের জন্য আমাদের জীবন দিতেও প্রস্তুত। জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ বেসামরিক নির্বাচিত শাসকদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিলেও রাজধানী খার্তুমে অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে হাজার হাজার মানুষ অবস্থান নিয়েছে রাস্তায়। কেউ কেউ স্লোগান দিচ্ছেন, আর কোনো সামরিক শাসন চাই না। বিক্ষোভকারী শ্বসান বশির বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেছেন, বেসামরিক সরকার না আসা পর্যন্ত এবং তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা পর্যন্ত এই বিক্ষোভ ছেড়ে যাবো না আমরা।
প্রধানমন্ত্রীসহ মোট পাঁচজন মন্ত্রী এবং সরকারি কর্মকর্তাকে সেনারা আটক করেছে বলে খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। এতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হামদুকের একজন উপদেষ্টা ও দেশটির সার্বভৌম কাউন্সিলের একজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করার অল্প পরেই প্রধানমন্ত্রী হামদুকের বাড়িতে অভিযান চালায় সেনারা। সুদানের রাজধানী খার্তুম থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক হিবা মর্গান বলছেন, দেশে টেলিযোগাযোগ সীমিত করা হয়েছে। রাজধানীর প্রবেশ পথগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেছেন, আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি যে, শিল্পবিষয়ক মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সামান্য আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়েছেন তিনি। তার বাড়ির চারপাশে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি রয়েছে। অনলাইন বিবিসি বলছে, খুব ভোরে অজ্ঞাত সেনারা বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী আব্দেল হামদুক ও কমপক্ষে চারজন মন্ত্রীকে আটক করেছে। দীর্ঘদিনের শাসক ওমর আল বশিরকে দু’বছর আগে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনারা। প্রতিষ্ঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। তখন থেকেই দেশটির সামরিক ও বেসামরিক নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল।
ফেসবুকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। তাতে বলা হয়েছে, নেতাদের আটক করেছে ‘জয়েন্ট মিলিটারি ফোর্সেস’। গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে রাখা হয়েছে। তবে কোথায় রাখা হয়েছে, তারা তা জানায়নি। রাজধানী খার্তুমে ইন্টারনেট সংযোগ ডাউন করে দেয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব ছবি প্রকাশ পাচ্ছে, তাতে উত্তেজিত জনগণকে রাস্তায় টায়ারে আগুন দিতে দেখা যাচ্ছে। শহরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনী। বেসামরিক জনগণের চলাচলে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে খার্তুম বিমানবন্দর। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো স্থগিত করা হয়েছে। ওদিকে দেশটির প্রধান গণতন্ত্রকামী গ্রুপ বিরোধীদের প্রতি যেকোনো সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে গর্জে উঠার আহ্বান জানিয়েছে।
২০১৯ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট বশিরকে উৎখাতের পর থেকেই সেনাবাহিনী এবং বেসামরিক অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ চলছে। সেনাবাহিনী ও ঢিলেঢালা একটি জোট গ্রুপ-ফোর্সেস ফর ফ্রিডম অ্যান্ড চেঞ্জ গঠন করতে সম্মত হয় তারা। চালু করা হয় সোভারিন কাউন্সিল বা সার্বভৌম পরিষদ। দেশটি আরও এক বছর পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল এই পরিষদের মাধ্যমে। এরপর নির্বাচন দিয়ে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা ছিল।
কিন্তু ক্ষমতা ভাগাভাগির এই চুক্তি সব সময়ই ছিল খিটখিটে ধরনের। এতে উপস্থিত ছিল রাজনৈতিক বিরোধী বিপুল সংখ্যক গ্রুপ। ফলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদেরও বিরোধ ছিল। সেপ্টেম্বরে সাবেক প্রেসিডেন্ট বশিরের অনুসারীরা একটি অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়ে যায়। তখন থেকেই উত্তেজনা আরও বাড়তে থাকে। এ মাসে সুদানের গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের বিরোধীরা রাজধানী খার্তুমের রাস্তায় বিক্ষোভ করে। তারা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দখল করে দেশ পরিচালনার আহ্বান জানায়। গণতন্ত্রপন্থি গ্রুপগুলো বলছে, এটা ছিল সেনাবাহিনীর আবার ক্ষমতা দখলের জন্য একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করে খার্তুমের রাস্তায়।
এ অবস্থায় সেখানে অর্থনৈতিক সংকট গভীর। সংকট সমাধানে তাদের প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সমর্থন। কিন্তু সেনাবাহিনীর এই ক্ষমতা দখলের ফলে দেশটি ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়বে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করার পর ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে প্রায় দু’বছর ধরে সেখানে সামরিক ও বেসামরিক নেতাদের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমেই তিক্ত হয়ে ওঠে। সোমবার খুব ভোরে দেশে যখন এ ঘটনা ঘটে, তখন সাধারণ মানুষকে ঘর থেকে বেরিয়ে অভ্যুত্থান ঠেকানোর আহ্বান জানানো হয়। এতে রাস্তায় নেমে পড়েন তরুণ, যুবা ও প্রবীণরা। রাজধানী খার্তুম থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক মোহাম্মদ ভ্যাল বলছেন, সামনে আরও বড় সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, রাস্তায় নেমে আসা এসব মানুষ সহজে ঘরে ফিরবে বলে মনে হয় না। সেনাদের রক্তচক্ষুকে তারা ভয় পাচ্ছে না। এতে বন্দুকের গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে সাধারণ মানুষ। জবাবে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা।
এখন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় ফিরতে দীর্ঘ সময় লাগবে। তা শুরু হওয়ার আগে জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
সুদানের এই পরিস্থিতিকে অগ্রহণযোগ্য বলে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিশ্বনেতারা। তারা এবং মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো এর নিন্দা জানিয়েছেন। সুদান সরকারের উচ্চ পদস্থ কিছু কর্মকর্তাকে আটক করাকে দৃশ্যত সামরিক অভ্যুত্থান বলে আখ্যায়িত করে এই নিন্দা জানান তারা। কারণ, সেনাবাহিনীর একজন সিনিয়র কর্মকর্তা সরকারকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে। তিনি হলেন ক্ষমতা ভাগাভাগি করা সোভারিন কাউন্সিলের সামরিক কর্মকর্তা আব্দেল ফাত্তাল আল বুরহান। তবে এই কাউন্সিলের বেসামরিক সদস্য মোহাম্মদ হাসান এলতাইশি তার ফেসবুক পেইজে বলেছেন, দৃশ্যত এই সামরিক অভ্যুত্থান এক বোকা রাজনীতি। গায়ের শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত তিনি এর বিরোধিতা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সুদান ও দক্ষিণ সুদান বিষয়ক বৃটিশ বিশেষ দূত রবার্ট ফেয়ারওয়েদার টুইটে অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছেন। টুইটে তিনি বলেছেন, বিপ্লব, অন্তর্বর্তী সরকার এবং সুদানের জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে বেসামরিক নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে সামরিক বাহিনী। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং আরব লীগসহ অনেক দেশ ও সংগঠন।
বার্তা সংস্থা এএফপি’কে হিতাম মোহাম্মদ নামে একজন বিক্ষোভকারী বলেছেন, সুদানে ক্ষমতার গণতান্ত্রিক পালাবদলের জন্য আমাদের জীবন দিতেও প্রস্তুত। জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ বেসামরিক নির্বাচিত শাসকদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিলেও রাজধানী খার্তুমে অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে হাজার হাজার মানুষ অবস্থান নিয়েছে রাস্তায়। কেউ কেউ স্লোগান দিচ্ছেন, আর কোনো সামরিক শাসন চাই না। বিক্ষোভকারী শ্বসান বশির বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেছেন, বেসামরিক সরকার না আসা পর্যন্ত এবং তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা পর্যন্ত এই বিক্ষোভ ছেড়ে যাবো না আমরা।
প্রধানমন্ত্রীসহ মোট পাঁচজন মন্ত্রী এবং সরকারি কর্মকর্তাকে সেনারা আটক করেছে বলে খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। এতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হামদুকের একজন উপদেষ্টা ও দেশটির সার্বভৌম কাউন্সিলের একজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করার অল্প পরেই প্রধানমন্ত্রী হামদুকের বাড়িতে অভিযান চালায় সেনারা। সুদানের রাজধানী খার্তুম থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক হিবা মর্গান বলছেন, দেশে টেলিযোগাযোগ সীমিত করা হয়েছে। রাজধানীর প্রবেশ পথগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেছেন, আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি যে, শিল্পবিষয়ক মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সামান্য আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়েছেন তিনি। তার বাড়ির চারপাশে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি রয়েছে। অনলাইন বিবিসি বলছে, খুব ভোরে অজ্ঞাত সেনারা বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী আব্দেল হামদুক ও কমপক্ষে চারজন মন্ত্রীকে আটক করেছে। দীর্ঘদিনের শাসক ওমর আল বশিরকে দু’বছর আগে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনারা। প্রতিষ্ঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। তখন থেকেই দেশটির সামরিক ও বেসামরিক নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল।
ফেসবুকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। তাতে বলা হয়েছে, নেতাদের আটক করেছে ‘জয়েন্ট মিলিটারি ফোর্সেস’। গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে রাখা হয়েছে। তবে কোথায় রাখা হয়েছে, তারা তা জানায়নি। রাজধানী খার্তুমে ইন্টারনেট সংযোগ ডাউন করে দেয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব ছবি প্রকাশ পাচ্ছে, তাতে উত্তেজিত জনগণকে রাস্তায় টায়ারে আগুন দিতে দেখা যাচ্ছে। শহরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনী। বেসামরিক জনগণের চলাচলে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে খার্তুম বিমানবন্দর। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো স্থগিত করা হয়েছে। ওদিকে দেশটির প্রধান গণতন্ত্রকামী গ্রুপ বিরোধীদের প্রতি যেকোনো সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে গর্জে উঠার আহ্বান জানিয়েছে।
২০১৯ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট বশিরকে উৎখাতের পর থেকেই সেনাবাহিনী এবং বেসামরিক অন্তর্বর্তী কর্তৃপক্ষের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ চলছে। সেনাবাহিনী ও ঢিলেঢালা একটি জোট গ্রুপ-ফোর্সেস ফর ফ্রিডম অ্যান্ড চেঞ্জ গঠন করতে সম্মত হয় তারা। চালু করা হয় সোভারিন কাউন্সিল বা সার্বভৌম পরিষদ। দেশটি আরও এক বছর পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল এই পরিষদের মাধ্যমে। এরপর নির্বাচন দিয়ে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা ছিল।
কিন্তু ক্ষমতা ভাগাভাগির এই চুক্তি সব সময়ই ছিল খিটখিটে ধরনের। এতে উপস্থিত ছিল রাজনৈতিক বিরোধী বিপুল সংখ্যক গ্রুপ। ফলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদেরও বিরোধ ছিল। সেপ্টেম্বরে সাবেক প্রেসিডেন্ট বশিরের অনুসারীরা একটি অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়ে যায়। তখন থেকেই উত্তেজনা আরও বাড়তে থাকে। এ মাসে সুদানের গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের বিরোধীরা রাজধানী খার্তুমের রাস্তায় বিক্ষোভ করে। তারা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দখল করে দেশ পরিচালনার আহ্বান জানায়। গণতন্ত্রপন্থি গ্রুপগুলো বলছে, এটা ছিল সেনাবাহিনীর আবার ক্ষমতা দখলের জন্য একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করে খার্তুমের রাস্তায়।
এ অবস্থায় সেখানে অর্থনৈতিক সংকট গভীর। সংকট সমাধানে তাদের প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সমর্থন। কিন্তু সেনাবাহিনীর এই ক্ষমতা দখলের ফলে দেশটি ভয়াবহ ঝুঁকিতে পড়বে।