শেষের পাতা

জাফলংয়ে পাথরখেকো ফয়জুলকে খুঁজছে পুলিশ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২৬ অক্টোবর ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:২৪ অপরাহ্ন

পর্যটনস্পট জাফলংয়ের পাথরখেকো ফয়জুলকে খুঁজছে পুলিশ। মামলা দায়েরের পর থেকে সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশ বলছে; তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু স্থানীয়রা জানিয়েছেন- বহিরাগত ফয়জুলের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা জাফলংয়ে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। জাফলং বাজার ও মামার দোকান এলাকায় এই মহড়া দেয়া হচ্ছে। জাফলংয়ের নয়াবস্তি গ্রামের আলীম উদ্দিনের মুক্তির দাবিতে ১৭ই অক্টোবর বাজারে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছিল। এ সময় ফয়জুল ও তার সহযোগীরা অস্ত্রসহ আয়োজকদের ওপর হামলা চালিয়েছিল। এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে গোয়াইনঘাট থানায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে হামলার পর বাড়ি ভাঙচুর ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় নয়াবস্তি গ্রামের সাহেনা বেগম আলোচিত পাথরখেকো ফয়জুল সহ ২৪ জনকে আসামি করে প্রথমে আদালতে ও পরে থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে ফয়জুলের পক্ষে স্থানীয় ইউসূফ আলী মামুন ও সিলেট শহরতলীর দাশপাড়া ফরহাদ হোসেন বাদী হয়ে নয়াবস্তি গ্রামের মতলিব আলী সহ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলা দায়েরের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও পুলিশ গতকাল পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। মামলা দায়েরের পরও জাফলং বাজার এলাকায় মহড়া দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন- মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে জাফলং বাজারে অস্ত্রসহ মহড়া দিচ্ছে। শনিবারও ফয়জুল অংশের লোকজনের পুলিশের উপস্থিতিতে মহড়া দিয়েছে। তারা জাফলং নিয়ন্ত্রণ নিতে এ মহড়া চালায়। এতে করে বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিলে তারা দোকানপাট বন্ধ করে দেন। জাফলং বাজারের পার্শ্ববর্তী নয়াবস্তি গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন- যে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে সবক’টিরই তদন্ত কর্মকর্তা হচ্ছে  গোয়াইনঘাট থানার এসআই লিটন। কিন্তু লিটনের বেপরোয়া বাণিজ্যের কারণেই জাফলংয়ে অশান্তি বিরাজ করছে। সে পাথরখেকোদের সঙ্গে সমঝোতা করে পুলিশ সুপারের নির্দেশ অমান্য করে রাতের আঁধারে মামলার আসামিদের দিয়ে বালু ও পাথর লুটপাট চালাচ্ছে। এতে করে জাফলংয়ে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। তারা জানিয়েছেন- আসামিরা প্রকাশ্য মহড়া দেওয়ার কারণে এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ বিরাজ করছে। জাফলং হচ্ছে পুলিশের ‘বাণিজ্যের’ অন্যতম স্পট। অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন থেকে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লাখ টাকা পেতো বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এ কারণে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বার বার পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা বা ইসিএ জোনে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না। এখন পাথর ও বালুখেকোদের নামে থানায় মামলা রেকর্ড করা হলেও তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন নয়াবস্তি ও কান্দুবস্তি গ্রামের লোকজন। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন- এক সময় জাফলং ছিল শান্ত এলাকা। কিন্তু এখন অবাধে বালু লুটপাট ও মামলার কারণে এলাকায় ভয় নেমে এসেছে। জাফলংয়ে এক সময় পাথর লুটপাটে নেতৃত্ব দিতো ছাতকের আলাউদ্দিন। এলাকার মানুষের প্রতিরোধের মুখে সে জাফলং ছেড়ে গেলেও তার অন্যতম সহযোগী ‘বিশ্বনাথী’ ফয়জুল ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে। তার বাড়ি বিশ্বনাথের ডাকাতিরগাঁওয়ে হলেও সে ১০ বছর ধরে নিয়ন্ত্রণ করছে জাফলং। এখন তার নেতৃত্বে বহিরাগতরা এলাকার মানুষকে জিম্মি করে পাথর লুটপাট চালাচ্ছে। সম্প্রতি ফয়জুলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন এলাকার মানুষ। আর এতে এলাকার পক্ষে নেতৃত্বে ছিলেন আলীম উদ্দিন। সম্প্রতি একটি মামলায় কারাগারে ছিলেন আলীম উদ্দিন। আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তিনি কারান্তরীণ হন। আর তার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করলে ফয়জুলের নেতৃত্বে হামলা ও বাড়িঘরে লুটপাট চালানো হয়। সিলেট শহর থেকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে এ হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। এরপর নয়াবস্তি গ্রামের সাহেনা বেগম মামলা দায়ের করলে ফয়জুল সহ ২৭ জনকে আসামি করা হয়। এই মামলার পরও প্রকাশ্যেই রয়েছে ফয়জুল। প্রতিদিন মহড়া দিচ্ছে। এখন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। কিন্তু ফয়জুলকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। গোয়াইনঘাট পুলিশের বিট কর্মকর্তা ও সাব-ইন্সপেক্টর এসআই লিটন ও এএসআই মারুফের বিরুদ্ধে এখন অভিযোগের তীর স্থানীয়দের। তারা জানিয়েছেন- ফয়জুলের নেতৃত্বে রাতের বেলা বোমা মেশিন দিয়ে ইসিএ জোন থেকে প্রতিদিন ১০-১২ লাখ টাকার পাথর লুটপাট করা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ জানালে তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আব্দুল মতলিব জানিয়েছেন- প্রকাশ্য আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আসামিরা মহড়া দিচ্ছে। তারা জাফলংয়ের মানুষকে জিম্মি করে পাথর লুটপাট চালাচ্ছে। এ নিয়ে এলাকার মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। তবে- গোয়াইনঘাট থানার ওসি পাথর লুটপাটের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান- ইউএনও’র নির্দেশে অভিযান চলছে। জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। পলাতক থাকা আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ফয়জুল সহ সব আসামিকে গ্রেপ্তারে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status