দেশ বিদেশ

‘অতিমারি-উত্তর শিশুদের স্কুলে ফেরা’- শীর্ষক সংলাপে বক্তারা

বাল্যবিয়ের শিকার ছাত্রীদের বৃত্তির ব্যবস্থা করা দরকার

স্টাফ রিপোর্টার

২৬ অক্টোবর ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:১১ অপরাহ্ন

করোনাভাইরাসে সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলায় দেড় বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এই সময়ে অল্প বয়সী ছাত্রীরা বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। অপরদিকে শিশুশ্রমও বেড়েছে। অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবে সংসারের প্রয়োজনে অনেক শিক্ষার্থী শিশুশ্রমের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এমনকি শিক্ষার্থীরা তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহারে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িয়েছে। এ অবস্থা নিরসনে শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরিয়ে আনতে হবে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরিয়ে আনাটা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এর জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ইউনিফরম ও বেতন ফ্রির ব্যবস্থা করলে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরার মনোভাব তৈরি হবে। এ অবস্থা নিরসনে বিবাহিত শিক্ষার্থীদের বৃত্তি নিশ্চিতকরণের দাবিও জানিয়েছেন বক্তারা। গতকাল এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের অয়োজনে ‘অতিমারি-উত্তর শিশুদের স্কুলে ফেরা’- শীর্ষক এ ভার্চ্যুয়াল সংলাপে এসব পরামর্শ দেয়া হয়। বেসরকাররি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, মহামারিতে শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ বেড়েছে। অর্থ সংকটে থাকা দরিদ্র পরিবারগুলো চায় মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিতে। এবং অল্প বয়সী ছেলেদের অর্থ আয়ের জন্য বিভিন্ন কাজে মনোনিবেশ করান। আমরা দেখি এই সমাজে শিশু এবং কিশোররা বিশেষ যত্নের দাবিদার। কিন্তু সেই পরিস্থিতি জটিল হয়েছে অতিমারির কারণে। আমরা বিভিন্ন গবেষণা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেখেছি, শিশুরা এটাতে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবং ক্ষতিটি আমাদের ভবিষ্যতে অনেক দীর্ঘ মেয়াদি হবে। এই শিশুদের মধ্যে যারা আছে তারা অতিদরিদ্র পরিবারের।
তিনি আরও বলেন, কন্যা শিশুদের ঝরে পড়ার হার অনেক বেশি। ন্যূনতম দশ থেকে বারো শতাংশ কন্যাশিশু বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। বিশেষ করে যাদের এবার এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল তাদের অনেকেই সেই অর্থে ফরম পূরণ করেনি। এটা শুধু কোনো আর্থিক কারণে নয়। এরচেয়ে অনেক বেশি সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ের ভিতর দিয়ে আসছে। প্রথমত হলো- এই ঝরে পড়ার হারকে রহিত করার ব্যাপার আছে। যে শিক্ষার্থীরা এই মুহূর্তে বিয়ের কারণে স্কুল ছেড়ে গেছে তাদের আবার স্কুলে ফিরিয়ে আনা। দ্বিতীয় বিষয় হলো- পড়াশোনার যে ঘাটতি হয়েছে তা পূরণ করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আছে। তিনি বলেন, এই করোনাকালে শিশুদের অনেক ব্যয় সংকোচ হয়েছে। প্রায় ১৫ শতাংশ পরিবারের ব্যয় সংকোচনের ভিতর দিয়ে যেতে হয়েছে। এতে শিশুরা পুষ্টিহীনতায় রয়েছে। আগামী দিনে এদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এছাড়াও বাল্যবিয়ে রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও বিশেষ সুনজর রাখা উচিত ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, বাল্যবিবাহ রোধে স্কুল কারিকুলামে কিছু বিষয় তুলে ধরতে হবে। গতানুগতিক প্রচারণা বাদ দিয়ে বাল্যবিবাহ না দিলে সুফলটা কি হবে তা বাচ্চাদের বোঝাতে হবে। স্থানীয় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে। অর্থ সংকটে শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। বিবাহিত মেয়েদের বৃত্তির ব্যবস্থা চালু করতে হবে। তবেই অল্পবয়সে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পুনরায় কিছুটা হলেও স্কুলে ফেরানো সম্ভব হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status