খেলা

সমালোচনা সইতে পারছেন না টাইগাররা

ইশতিয়াক পারভেজ, আরব আমিরাত থেকে

২৬ অক্টোবর ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:০০ অপরাহ্ন

বাছাই পর্বে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর থেকেই শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি দারুণ ক্ষিপ্ত ক্রিকেটারদের ওপর। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহও তার বক্তব্যে ভীষণ চটেছেন। এক কথায় বোর্ড কর্তা ও টাইগার অধিনায়ক এখন মুখোমুখি অবস্থানে। কোন রকমে বাছাই পর্বের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশ দল এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি-টোয়ন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে মিশন শুরু করেছে। বিশ্বকাপের সেমিতে জায়গা করে নেয়ার প্রথম লড়াই ছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। কিন্তু নিজেদের ভুলেই প্রথম ম্যাচে আবারো হার। লঙ্কাকে ১৭২ রানের লক্ষ্য দিয়ে জয় ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে রিয়াদরা। মুশফিকুর রহীম ও নাঈম শেখের ফিফটি বিফলে গেছে। এই হারের জন্য লিটন দাসের দুটি ক্যাচ ছাড়া ও অধিনায়ক মাহমদুল্লাহ রিয়াদের দুর্বল নেতৃত্বকে দায়ী করছেন বিসিবি পরিচালক থেকে শুরু করে ক্রিকেটভক্তরা। অন্যদিকে ফিফটি হাঁকিয়েই মুখ খুলেছেন মুশফিক।

সমালোকদের দিয়েছেন কড়া জবাব। তিনি বলেন, ‘যারাই এমন কথা বলেন, তাদের নিজেদের মুখটা একটু আয়নায় দেখা উচিত। কারণ, তারা বাংলাদেশের হয়ে খেলেন না, আমরাই খেলি। শুধু আমি না, ১৬ বছর ধরে যারা খেলছেন কিংবা তারও আগে থেকে, যারা টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার আগেও খেলেছেন, সবাই কিছু করার চেষ্টা করেছেন। কোনো দিন হয়, কোনো দিন হয় না। তবে দিনের শেষে আমরা দেশের প্রতিনিধিত্ব করি, আমাদের কাছে সবচেয়ে গর্বের বিষয় এটিই।’

প্রথমে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ তাদের সমালোচানা নিয়ে মুখ খোলেন। তিনি জানিয়েছেন এমন বাইরে থেকে সমালোচনা-কথা তারা মেনে নিতে পারছেন না। সেটি ক্রিকেট ভক্তই হোক আর বিসিবি কমকর্তা। ধারণা করা হচ্ছে, দলের ভেতরের কোন্দল প্রভাব ফেলছে পারফরম্যান্সে। যদিও মুশফিক মনে করছেন তাদের এমন সব সমালোচনা এখন গায়ে সয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘মাঠের বাইরে কী কথা হচ্ছে? এমন কথা তো হবেই। ভালো করলে তালি দেবে, খারাপ করলে গালি দেবে। আমি ১৬ বছর ধরে খেলছি, আমার জন্য এসব নতুন কিছু না। আমার কাছে এসব স্বাভাবিক মনে হয়।’

অন্যদিকে বাংলাদেশের এই হারের পেছনের কারণ এখনো খুঁজছেন টাইগার ক্রিকেটের অনুরাগীরা।  বিশেষ করে লিটন দাসের ক্যাচ ছাড়া এবং সাকিবকে বল করতে না দেয়ায় চটেছেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ওপর। সঠিক সময়ে সেরা বোলারকে বল করানো গুরুত্বপূর্ণ, এই কথা সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন মুশফিক। কিন্তু ম্যাচে তা করেনি বাংলাদেশ। তারা আসলে সাকিবকে ডেথ ওভারের জন্য রেখেছিলেন। তার মানে যখন লঙ্কানরা চাপে ছিল  সেই সময় সাকিবকে আক্রমণে না এনে শেষ দিকে চেপে ধরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরিকল্পনা বুঝেই আসালঙ্কা ও রাজাপাকশে সাকিব আসার আগেই উড়িয়ে দিয়েছেন চাপ। এসব ভুলের খেসারত শারজাহ স্টেডিয়ামে রোববার সুপার টুয়েলভের ম্যাচে ৫ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। ১৭১ রান শ্রীলঙ্কা পেরিয়ে যায় ৭ বল বাকি রেখে।

প্রথম দুই ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে সাকিবের শিকার ছিল ২ উইকেট। পঞ্চম ওভারে প্রথম বোলিংয়ে আসেন বাঁহাতি এই স্পিনার। আঁটসাঁট বোলিংয়ে দেন কেবল ৫ রান। নবম ওভারে আবার যখন ফেরেন আক্রমণে, তখন চারিথ আসালাঙ্কা ও পাথুম নিসানকার জুটিতে এগিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। দারুণ এক ওভারে স্রেফ ১ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান সাকিবই। পরের ওভারে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন এনে দেন আরেকটি উইকেট। দশম ওভারে ৭৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন পথহারা শ্রীলঙ্কা। লঙ্কানদের আরও চেপে ধরার বদলে তখন মূল বোলারদের সরিয়ে নেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। দুই বাঁহাতি চারিথ আসালাঙ্কা ও ভানুকা রাজাপাকশের জন্য দুই প্রান্ত থেকে আক্রমণে আনা হয় অফ স্পিন। অধিনায়ক নিজে বল তুলে নেন হাতে, সঙ্গে আফিফ হোসেন। অধিনায়ক করেন দুই ওভার, দেন ২১ রান। আফিফ হোসেন এক ওভারে দেন ১৫ রান। আফিফের ওভারে একটা সুযোগ এসেছিল কিন্তু ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি লিটন দাস। সময় মতো সাকিবকে ব্যবহার না করার ব্যাখ্য হয়তো দিতে পারতেন অধিনায়ক নিজেই। কিন্তু তার পরিবর্তে মুশফিক সংবাদ সম্মেলনে যে ব্যাখা দিলেন তা আসলে কারোই মেনে নেয়ার মতো নয়। তিনি বলেন, ‘আজ সাকিবের জায়গায় যে বোলিং করেছে, সে কিন্তু একটা সুযোগ তৈরি করেছে। সেটা কাজে লাগাতে পারলে পরে ডানহাতি ব্যাটসম্যান আসতো। তখন সাকিব আরও বেশি কার্যকর হতে পারতো। আমার মনে হয়, সঠিক সময়ে সেরা বোলাররা বোলিং করছে কী না, এটা গুরুত্বপূর্ণ। আর এক দিকে যেহেতু বাউন্ডারি ছোট ছিল, যেকোনো সময়ে একজন বাঁহাতি স্পিনার আনা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। সাকিব একজন চ্যাম্পিয়ন বোলার, ডেথ ওভারে বোলিং করতে পারে, শেষ ওভারেও বোলিং করতে পারে। যদি এমন হতো যে শেষ ওভারে প্রয়োজন, তখন সে-ই হতো আমাদের বোলার।’  

তবে বিশ্বকাপের সবচেয়ে চিন্তার বিষয় কোনোরকম সমালোচনাই সহ্য করতে পারছেন না বাংলাদেশের ক্রিটেটাররা। যে কারণে দলের মধ্যে কোচের সঙ্গে যেমন দূরত্ব বাড়ছে তেমনি বিসিবি পরিচালক থেকে শুরু করে সভাপতি সবার সঙ্গে বাড়ছে মান-অভিমান। যা ভয়াবহভাবেই প্রভাব ফেলছে ক্রিকেটারদের বিশ্বকাপ পারফরম্যান্সে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status